ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

কুমিল্লার জনসভায় মির্জা ফখরুল

দয়া করে দেশ অস্থিতিশীল করবেন না, অবিলম্বে নির্বাচন দিন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুমিল্লা

প্রকাশিত: ২৩:৫২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দয়া করে দেশ অস্থিতিশীল করবেন না, অবিলম্বে নির্বাচন দিন

কুমিল্লার লাকসামে বৃহস্পতিবার বিএনপির জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দয়া করে দেশকে অস্থিতিশীল করবেন না, নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবেন না। সংস্কার সংস্কার করবেন না। সত্যিকার অর্থে সাধারণ মানুষ সংস্কার বলতে কতটা বোঝে। জাতিকে আর অনিশ্চিয়তার মধ্যে না রেখে দয়া করে দ্রুত নির্বাচন দিন। দেশটাকে অস্থিতিশীল করবেন না, নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেবেন না।

আমি অনুরোধ করব, জাতিকে অস্থির অবস্থায় না রেখে দ্রুত নির্বাচনটা দিন, ভোটটা দিন। যে সরকার গঠিত হবে তার পেছনে জনগণ থাকবে। জনগণ না থাকলে সে সরকার কাজ করতে পারবে না। তাই জনগণের নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিন। বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লার লাকসাম স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ একটা ক্রান্তিকাল পার করছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে বলব-আপনারা এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে জাতির ঐক্য নষ্ট হয়। এই মুহূর্তে দেশে ঐক্যের বড় প্রয়োজন। এই ক্রান্তিকালে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে দিল্লিতে বসেও ষড়যন্ত্র করছে।

ভারত আমাদের বৃহত্তর প্রতিবেশী। কিন্তু ভারত যদি মনে করে শুধু আওয়ামী লীগই তাদের বন্ধু, এটা ভুল। একটা ফ্যাসিবাদ গোটা বাংলাদেশকে শেষ করে দিয়েছে। ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এখন আমাদের দরকার এই সরকারকে সমর্থন করা। লাকসামের মনোহরগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিবাদের সময় সবচেয়ে বেশি অত্যাচারের শিকার হয়েছে লাকসাম-মনোহরগঞ্জের মানুষ।

রীতিমতো ভয়াবহ ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল এখানকার সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সে এখন কোথায় পালিয়েছে কেউ জানে না। যারা অত্যাচার নিপীড়ন করে তাদের হাসিনা ও তাজুল ইসলামের মতো পালিয়ে যেতে হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ স্বাধীন করেছিলাম গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। শেখ মুজিব গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। শেখ হাসিনা তার শাসনামলে সব শেষ করে দিয়েছে। কেউ ভোট দিতে পারেনি।

ভোটের আগের রাতে সিল মেরে আওয়ামী লীগের সবাইকে নির্বাচিত করেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনটা ছিল ডামি নির্বাচন। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে শেখ হাসিনা। এই সময় তারেক রহমান একটা স্লোগান দিয়েছিল টেক ব্যাক। আরেকটা স্লোগান দিয়েছিল ফয়সালা হবে রাজপথে। ঠিকই রাজপথে ফয়সালা হয়েছে।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া লাকসামের  বিএনপি নেতা হিরু-হুমায়ূনের সন্তানদের কথা স্মরণ করিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এমন ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছিল। তার মধ্যে সিলেটের নেতা ইলিয়াসকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়েছে শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ২ হাজার মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেত্রী  খালেদা জিয়া কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তাই তাকে জেল খাটতে হয়েছে। সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা সংস্কার-সংস্কারের কথা বলছেন, সত্যিকার অর্থে আপনারা বলেন তো মানুষ সংস্কার বলতে কতটুকু  বোঝে। মানুষ  বোঝে, দুবেলা দুমুঠো ভাত, মোটা কাপড়, মাথার ওপরে ছাদ, অসুস্থ হলে চিকিৎসা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া- এগুলোই হলো সংস্কার। এখন যে ব্যবস্থা চলছে তাতে শান্তি আসবে না।

রাষ্ট্র সংস্কারে বিএনপি যে ৩১ দফা দিয়েছে তাতেই সমাধান আছে। দয়া করে দেশকে আর নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যাবেন না। সেনাবাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে যখন আন্দোলন চলে তখন জনতার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সেনাবাহিনী। যতটুকু সংস্কার দরকার, ততটুকু সংস্কার করেন। কাল বিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচন দেন, ভোটের একটা রোডম্যাপ জনগণকে জানিয়ে দেন।
জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু। দলটির কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. আবুল কালামের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমন, সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিম, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. আক্তারুজ্জামান সরকার, সদস্য সচিব এ এফ এম তারেক মুন্সি, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপুসহ কুমিল্লা দক্ষিণ ও উত্তর জেলা-উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এ ছাড়া জনসভায় গুম হওয়া লাকসামের বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হিরুর ছেলে রাফসান, হুমায়ুন পারভেজের ছেলে শাহরিয়ারও উপস্থিত ছিলেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর বৃহস্পতিবার কুমিল্লার লাকসামে জনসভায় হাজারো নেতাকর্মীর ঢল নামে।

×