ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্যাম্পাসেই হাবিপ্রবি ছাত্রদলের কর্মী সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিনিধি, হাবিপ্রবি

প্রকাশিত: ১৮:০৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৮:০৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্যাম্পাসেই হাবিপ্রবি ছাত্রদলের কর্মী সম্মেলন

ছবিঃ সংগৃহীত

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও অনুমতি ছাড়াই প্রকাশ্যে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদলের ফরম বিতরণ ও কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এই কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জকির উদ্দিন আবির। প্রধান বক্তা হিসেবে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাব্বি হাসান বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে ফরম বিতরণ বক্তৃতা প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ।

কর্মী সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব, ছাত্রদলের ত্যাগের ইতিহাস এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন কার্যক্রমসহ সার্বিক দিকনির্দেশনা দেন। ত্যাগী, সাহসী এবং ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে যারা, তাদেরকে বেছে নেয়া হবে বলে জানান কেন্দ্রীয় নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও প্রকাশ্যে এই কর্মসূচি আয়োজন করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মামুন মিয়া বলেন, 'যখন আপনি একজন ছাত্র এবং পাশাপাশি আপনি একটি রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতিনিধি তখন সমাজ আপনার কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করে। আপনি অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীর চেয়ে আরো বেশি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আরো বেশি  শ্রদ্ধাশীল  থাকবেন এটাই কাম্য। কিন্তু যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষেধাজ্ঞা তখন তা মান্য না করে কর্মীসভা করা, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোর সমান এবং নিজেদের পেশীশক্তি প্রদর্শন বলে আমি মনে করছি। যা অতীতের নিষিদ্ধ আওয়ামী সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে মিলে যায়। তাই সকল প্রকার রাজনৈতিক মতাদর্শের শিক্ষার্থীদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, নিজেদের পেশীশক্তি প্রদর্শন না করে, ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চর্চা না করা।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের আরেক শিক্ষার্থী কাউসার আহমেদ বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাগুলোর অন্যতম একটি আকাঙ্ক্ষা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে লেজুর বৃত্তিক  ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী হাবিপ্রবিতে শিক্ষার্থীদের দাবির ভিত্তিতে অফিস আদেশ জারি করা হয় ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের। ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী লেজুরবৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি চায় না। শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া, চাওয়া পাওয়া উপেক্ষা করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো সত্যিই দুঃখজনক ও লজ্জাজনকও বটে।'

তবে ছাত্রদলের আহ্বায়ক বার্নার্ড পলাশ বলেন, 'আওয়ামী স্যারের স্বাক্ষরিত ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ অফিস আদেশ আমরা মানি না। গুনগত রাজনীতি পরিবর্তনের জন্য ক্যাম্পাসে অবশ্যই ছাত্ররাজনীতি প্রয়োজন আছে।'

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শামসুজ্জোহা বলেন, 'আজকের এই প্রোগামের বিষয়ে আমি এবং ছাত্র পরামর্শক কোনভাবেই অবগত ছিলাম না। যখন খবর পাই আমরা তাৎক্ষণিক প্রোগ্রাম স্থলে যায় তারপর ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের সাথে বসেছি এবং তাদের নিষেধ করেছি। তবুও তারা আয়োজন করেছে ।বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভঙ্গ করেছে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, 'এ বিষয়ে প্রক্টর এবং অ্যাডভাইজরের একটা রিপোর্ট দেওয়ার কথা। তারা আমাকে রিপোর্ট করলে তারপর আমি এ বিষয়ে বলতে পারবো।'

প্রসঙ্গত, গত ১১ আগস্ট শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে হাবিপ্রবি থেকে সব ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়।

আসিফ

×