
যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী
স্থানীয় নয় জাতীয় নির্বাচন আগে হতে হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার সকালে আগারগাঁওয়ে নিজস্ব কার্যালয়ে স্থপতি ইনস্টিটিউট আয়োজিত রোড টু ইলেকশন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গণতান্ত্রিক জাগ্রত বাংলাদেশ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ছাত্রদের কাঁধে পা উঠিয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন। তবে রাজনীতিকে ছোট করবেন না। রাজনীতিবিদদের ছোট করবেন না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রলম্বিত করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কারণ, ১৭ বছর দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচন হয়নি। সে সময় নির্বাচনের যে ভয়ংকর পরিণতি আমরা দেখতে পেয়েছি সেটা তো হওয়ার কথা ছিল না। ৯০’র আন্দোলনের যে স্পিড ছিল, সেই স্পিড থেকে আবারও হোঁচট খেয়ে ব্র্যাক টেকিং’ হবে সেটা তো কেউ প্রত্যাশা করেনি।
রিজভী বলেন, রাজনৈতিক বিজ্ঞানে নতুন অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে যে, একতরফা এক ব্যক্তির নির্বাচনের জন্য কিভাবে রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে দিনের ভোট রাতে হয়েছে, ভোটারদের মাইকিং করে ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে, ভোটকেন্দ্রগুলোর সামনে চতুষ্পদ জন্তুর পদচারণা আমরা লক্ষ্য করেছি। এ ধরনের নির্বাচন আমরা দেখেছি গত ১৭ বছরে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে যারা বিরোধী দলের মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ও বাধা দেওয়া হয়েছে। এটি করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তাই কেউ কেউ মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি। এসব ঘটনা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময়ও হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ও হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে সংবিধান প্রদত্ত আইন কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে।
রিজভী বলেন, একতরফা নির্বাচন করার জন্য রাষ্ট্রশক্তি যাদের হাতে থাকে, তারা কী ভয়াবহ অত্যাচারের খড়গ এবং বাধার নজির সৃষ্টি করত প্রতিপক্ষের ওপরে, সেটি বলে শেষ করা যাবে না। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর মিথ্যা অভিযোগে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হতো, হামলা করা হতো। গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হক হুদা, জাসাস নেতা ইথুন বাবু, আহসান উদ্দিন খান শিপন প্রমুখ।
রাজনীতিকে ছোট করবেন না- দুদু : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ছাত্রদের কাঁধে পা উঠিয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন। তবে রাজনীতিকে ছোট করবেন না। রাজনীতিবিদদের ছোট করবেন না। আন্দোলনকারীদের ছোট করবেন না। তাহলে দেশ থাকবে না। তিনি বলেন, জনগণকে সংগঠিত করতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক হতে হবে। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘গণতান্ত্রিক জাগ্রত বাংলাদেশ’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুদু বলেন, ক্ষমতার চেয়ারে যারা বসে, তারা সহজে এটা ছাড়তে চায় না। যারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যৎ খারাপ। খারাপ বলার কারণ হলো, ক্ষমতার চেয়ারে যারা বসে, তারা বুঝতেও চায় না যে এটা তাদের কাজ না।
দুদু বলেন, একটা গোষ্ঠী আছে যারা অতীত এমনকি ভবিষ্যতও তারা দেখতে পায়। তারা মনে করে এক মাসের মধ্যে সরকার পরিবর্তন, হাসিনার বিদায় এবং বিপ্লব গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। কিন্তু অতীতে কি ছিল এটা তারা অ্যাকসেপ্ট করতে চায় না। এমনকি সরকারের প্রধান যে ব্যক্তি আছেন, তিনিও অতীতটা দেখতে পারেন না। অতীতে আর যান না। এক মাসের মধ্যে আটকে গেছেন।
দুদু বলেন, কোনো রাজনীতিবিদ এনজিও করতে যায় না। তারা সাধারণ মানুষের কাছে যায়। এজিওর যে অত্যাচার সেটা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদদের কাছে আসে। কেউ কেউ গলায়ও দড়ি দেয়। তারা এত হতাশ হয়ে যায়। কিন্তু, রাজনীতিবিদরা স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। তারা কখনো জনগণকে সাফল্য দিতে পারে আবার কখনো পারে না। কিন্তু শেষ বিচারে রাজনীতিবিদরাই দেশ পরিচালনা করে। সেই রাজনীতিবিদরা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন দেশের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়।
দুদু বলেন, এক শ্রেণির খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। তারা বলছে, জাতীয় ইলেকশনের আগে স্থানীয় ইলেকশন করতে হবে। খুঁজে দেখেন, এই কথাগুলো যেখান থেকে বেরিয়ে আসছে তারা ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। ২-৩ পারসেন্টের বেশি ভোট তাদের নাই।
এদের চেহারা চালচলন সব সময় একটা গোষ্ঠীর মধ্যে আটকে থাকে। আগে এরা ইসলামী বিপ্লবের কথা বলত। এখন তারা সেগুলো বাদ দিয়ে ভোটের রাজনীতিতে আসতে চায়। ভোটও যাতে সুষ্ঠুভাবে না হয়, সে অবস্থার মধ্যে তারা দেশকে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম কলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মো. রহমতুল্লাহ প্রমুখ।