ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

সেই অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যেই তো রয়ে গেলাম! -- গোলাম সারোয়ার মিলন

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৫৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সেই অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যেই তো রয়ে গেলাম! -- গোলাম সারোয়ার মিলন

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার যে প্রয়োজন, তা দিন দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গোলাম সারোয়ার মিলনের সাম্প্রতিক বক্তব্যে এই বিষয়ের উপর গভীর আলো ফেলা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, "নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের চিন্তা-চেতনায় এবং কর্মসূচি প্রণয়নে মানসিক পরিবর্তন জরুরি।"

পুরানো ফ্যাসিবাদী চিন্তা ও আচরণ
মিলনের মতে, পুরানো ফ্যাসিবাদী চিন্তা ও আচরণ নিয়ে রাজনীতি করলে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয়। তিনি উল্লেখ করেন, "যদি আমরা সেই পুরানো ফ্যাসিবাদের মতো কথা বলি, তবে এদেশে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।" তাঁর মতে, রাজনৈতিক দলগুলোকে ভুল স্বীকার করে, ক্ষমা চেয়ে এবং সংশোধিত মনোভাব নিয়ে সামনে এগোতে হবে।

জাতীয় পার্টির ভূমিকা ও দায়িত্ব
জাতীয় পার্টির প্রসঙ্গে মিলন স্পষ্টভাবে বলেন, "তাদের নিজেদের ভুলের দায়ভার নিজেদেরই নিতে হবে।" তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে তাদের কিছু কার্যকলাপ জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, যা শুধরানো প্রয়োজন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি
মিলন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তুলে ধরে বলেন, "আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়ার কোনো উদাহরণ নেই," যা রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত করছে। অন্যদিকে, বিএনপি কিছু ক্ষেত্রে পরিপক্ক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করলেও তাদেরও আরও সহনশীল হতে হবে।

গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক সহনশীলতা
মিলনের মতে, "আমরা একমত যে, আমরা ভিন্নমত পোষণ করতে পারি," যা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মূল ভিত্তি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল হতে হবে এবং বহুত্ববাদকে স্বীকৃতি দিতে হবে।

ভবিষ্যতের পথনির্দেশ ও সংস্কার প্রয়োজন
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "১০ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব, তবে তার আগে ন্যূনতম সংস্কার দরকার।" ভোটার রেজিস্ট্রেশন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশ করার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।

২৪ এর আকাঙ্ক্ষা ও ৭১ এর চেতনা
মিলনের মতে, "৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ২৪ এর আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের সমন্বয় আগামী দিনের বাংলাদেশ গঠনের মূল চাবিকাঠি।" তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি আহ্বান জানান, ৭১ এর চেতনাকে ধারণ করে ২৪ এর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের শপথ নিতে।

ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকাতে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন
মিলন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, "যদি শব্দচয়ন, আচরণ বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজে পুরনো ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি দেখি, তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।" জনগণ আর সেই পুরনো ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান দেখতে চায় না।

গোলাম সারোয়ার মিলনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ফ্যাসিবাদী চিন্তা-ভাবনা ও আচরণ পরিহার করা জরুরি। ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা, ভুল স্বীকারের মানসিকতা এবং বহুত্ববাদকে স্বীকৃতি দেয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথ সুগম করা সম্ভব। নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বে এনে, ৭১ এর চেতনাকে ধারণ করে এবং ২৪ এর আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব।

রাজু

×