ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

বাংলা একাডেমি’র নামে ফোন করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক টাকা

রোকন বাপ্পি, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলা একাডেমি’র নামে ফোন করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক টাকা

ছবি সংগৃহীত

বাংলা একাডেমির নামে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা হচ্ছে শতাধিক শিক্ষক শিক্ষিকাসহ শিক্ষার্থীকে। গবেষণা প্রস্তাব নির্বাচিত হওয়ার কথা বলে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ডিটেইলস চেয়ে লুটে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ্যাধিক টাকা। এমনি অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের ভাষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সাহিত্যচর্চা ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু "বাংলা একাডেমি"র বিরুদ্ধে। 

গত বছরে ২০২৪ সালের শেষের দিকে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে দেশব্যাপী গবেষকদের কাছে বাংলা একাডেমি কতৃক গবেষণা বৃত্তি প্রস্তাব ও প্রবন্ধ আহবান করা হয় যার শেষ সময় ছিল একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

বিজ্ঞাপ্তিতে উল্লেখ করা হয় গবেষণা-প্রবন্ধ রচনার জন্য মনোনীত ৫০ জন প্রাবন্ধিকের প্রত্যেককে ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা হারে বৃত্তি প্রদান এবং বিষয়ভিত্তিক গবেষণা সম্পাদনের জন্য মনোনীত ১০ জন গবেষককে প্রতি মাসে ৩০,০০০/-(ত্রিশ হাজার) টাকা হারে প্রত্যেককে সর্বমোট ৩,৬০,০০০/- (তিন লক্ষ যাট হাজার) টাকা বৃত্তি প্রদান করা হবে। এই ঘটনারই সুযোগ নেই একটি প্রতারণা চক্র। 

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী জানান, " আমি বাংলা একাডেমি কতৃক প্রকাশিত গবেষণা প্রস্তাবনা আহবান বিজ্ঞপ্তিতে গবেষণা কার্যে মনোনীত হওয়ার জন্য বাংলা একাডেমিতে গবেষণা প্রস্তাবনা পাঠাই। গত ২৮ জানুয়ারি আমার কাছে একটি ফোন আসে যেখানে আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে আমার প্রস্তাবনাটি গবেষণার জন্য নির্বাচিত হওয়ার কথা বলে এবং আমার থেকে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট ও এ্যাকাউন্টের ডিটেলস চাওয়া হয়।"

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরও জানান, "শুরুতে এ্যাকাউন্টের নাম, জন্ম তারিখ, এক্যাউন্টটি যে ফোন নং দিয়ে নিবন্ধিত এ ধরণের নানাবিধ তথ্য চাওয়ার পরপরই উক্ত ফোন নম্বরে দফায় দফায় কয়েকটি এসএমএস আসে এবং এসএমএস'এ প্রাপ্ত ওটিপিগুলো চাওয়া হয়। এমনকি এসএমএসগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর অফিসিয়াল এসএমএস বক্স থেকেই আসে এবং এসএমএসগুলোতে গবেষণা উপলক্ষ্যে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট অর্থের পরিমাণও উল্লেখ থাকে। ওটিপি গুলো বললেই নাকি একমাত্র উক্ত পরিমাণ অর্থ পাওয়া সম্ভব"

ব্যাস। এভাবেই লোভ দেখিয়েই নানাভাবে ছলনা ও মোহের বশবর্তী করে ব্যাংক একাউন্টের ওটিপিগুলো হাতিয়ে নেয় উক্ত প্রতারণাচক্র এবং পরবর্তীতে এ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। বাংলা একাডেমি অফিসসূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে  একাধিক গবেষকের ব্যাংক একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তাদের একাউন্ট থেকে ৪০ হাজার, ৬০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ্য পর্যন্ত অর্থও সরিয়ে নেওয় হয়েছে।

ওটিপিগুলো প্রদান করার পরপর উক্ত ব্যাংক এ্যাকাউন্টের জন্য প্রদেয় অনলাইন এ্যাপস'টির পাসওয়ার্ড চেঞ্জের একটি এসএমএস'ও পান বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। যে এ্যাপের নিয়ন্ত্রণ থাকলে উক্ত এ্যাকাউন্ট থেকে রিচার্জ, টাকা উত্তোলন, ব্যালেন্স ট্রান্সফারসহ সকল প্রকার লেনদেনই করা সম্ভব হয়।

মূলত বাংলা একাডেমি অফিস কতৃক গবেষণা প্রবন্ধে আবেদনকৃতপ্রার্থীদের নাম ঠিকানাসহ সকল তথ্য একাডেমির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আপলোড দিয়ে রাখার কারণেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে এবং কুচক্রী মহল এ প্রতারণা করার সুযোগ পায়। দেশব্যাপী গবেষকদের সাথে এমন ঘটনা, আর্থিক লোকসান ও হেনস্তার জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি, দায়িত্বে অব্যবস্থাপনা ও সূদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনার অভাবকেই দায়ী মনে করছেন তারা। বাংলা একাডেমির মতো এতো বৃহৎ সরকারি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে এধরণের প্রতারণার বিস্তার উক্ত প্রতিষ্ঠানেরই ভাবমূর্তিকে নষ্ট করে বলে জানান একাধিক গবেষক। অনেকে এমন নেক্কারজনক ঘটনার পেছনে উক্ত অফিসেরই অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে অফিসার পর্যন্ত ব্যক্তিবর্গের জড়িত থাকার ব্যাপারেও সন্দেহ পোষণ করেন।

এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমি'র গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদকে জানানো হলে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি'র নামে এমন প্রতারণার অভিযোগ আমরা একাধিক গবেষকদের কাছ থেকে পেয়েছি। অনেকের তো ব্যাংক একাউন্ট ফাঁকাও হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। গবেষকদের নামগুলো এভাবে প্রকাশ করা উচিত হয়নি। আপনারা নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিন।

বাংলা একাডেমি'র প্রশাসন বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার বলেন, এ ব্যাপারে কোনো কিছু এখনো তাকে জানানো হয়নি বা বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগতও নন। তবে প্রতারণা চক্রের ব্যাপারে প্রশাসনিক বা আইনগত কোনো পদক্ষেপও এখনো বাংলা একাডেমি'র পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

আশিক

আরো পড়ুন  

×