ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ জাতিকে টুকরো টুকরো করে রেখেছিল

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫২, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আওয়ামী লীগ জাতিকে টুকরো টুকরো করে রেখেছিল

ছবি:প্রীতম মাহমুদ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সুকৌশলে ৫৪টি বছর এই জাতিকে বিভিন্নভাবে ‘ভাগ-বিভক্ত-টুকরো টুকরো’ করে রেখেছিল। এ কাজটি সুকৌশলে আওয়ামী লীগ করেছে। তারা প্রথমে পার্বত্য এলাকার লোকদেরকে উস্কে দিল। নেতা বললেন, বাংলাদেশে যারা বসবাস করেন তাদের সকলের একমাত্র পরিচয় তারা বাঙ্গালী। এখানে যারা থাকবেন, তাদেরকে বাঙ্গালী হয়ে থাকতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম তার এ কথায় প্রতিবাদ করল, অস্থির হয়ে উঠল, তারা বলল আমরা বাঙ্গালী নই, আমরা পাহাড়ী। 

তারা একটি বিভক্তি প্রথমেই টেনে দিলেন। সেই যে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অশান্তি হলো আজ পর্যন্ত শান্তি ফিরে আসল না। শান্তিবাহিনী নামে একটি বাহিনী গঠন করল, তাদের হাতে দশ হাজার সামরিক কর্মকর্তা এবং আমাদের সৈনিক নিহত হলো, সাধারণ মানুষ নিহত হলো। শুক্রবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ নগরীর ইসদাইরে ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ও জেলা জামায়াত ইসলামীর আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
 
নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমীর মুহাম্মদ আব্দুল জব্বারের সভাপতিত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা  অঞ্চল দক্ষিণের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।

জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তারপর তারা কি বলছেন, বাংলাদেশ দুইভাবে বিভক্ত। স্বাধীনতার পক্ষে একদল আর স্বাধীনতার বিপক্ষে আরেকটি দল। এখানে জাতিকে আরেকবার ভাগ করা হলো। স্বাধীনতার যুদ্ধে যার যে ভুমিকা ছিল মানুষে তার স্বাক্ষী। কিন্তু দেশটি স্বাধীন হওয়ার পরে কেউ কি জনসভা করে, রাস্তায় নেমে, মিছিল করে, পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে অথবা কোন জায়গা একটি বক্তব্য রেখে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানি না। এমন কোন দলের নাম আপনারা কেউ জানেন। এমন কোন দল নেই। সবাই প্রিয় দেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিয়েছেন। স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছে, স্বানন্দে গ্রহণ করেছে এবং সকলেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার উন্নয়নের গর্বিত অংশীদার হতে চায়। কিন্তু যখন আপনি দুইভাবে ভাগ করে টুকরো টুকরো করে সমাজে হিংসার চাষ করবেন, প্রতিহিংসার সংস্কৃতির যখন আপনি গড়ে তুলবেন তখনতো এ জাতি আর ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। 

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রিয় নারায়ণগঞ্জবাসী যুগ যুগ ধরে আপনারা বড় কষ্টে আছেন। এই নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। আমাদের তৎকালীন জামায়াতের আমীরের বিরুদ্ধে এই শহরের এক গডফাদার নারায়ণগঞ্জের সড়কে ৭২ ফিট লম্বা ব্যনার টানিয়েছিল। তাতে লিখা ছিল, নারায়ণগঞ্জে ওমুকের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ডিসি, এসপির উপস্থিতিতে গডফাদার বলেছিলেন, আমার বিরুদ্ধে খুনের অগ্রীম মামলা করে রাখেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে গোলাম আযম সাহেব মারা যান। গডফাদারের সুযোগ হয় নাই? নারায়ণগঞ্জের গডফাদার-খ্যাত একজন দুর্ধর্ষ লোক জামায়াতের প্রয়াত আমীর গোলাম আযমকে প্রকাশ্যে খুন করতে চেয়েছিলেন। ওই লোক দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অহংকার ভালো জিনিস নয়। দম্ভ, অহংকার, ক্ষমতার জোরে ছড়ি ঘোরানো, মানুষকে খুন, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিতে নাই। এই কাজগুলো যারা করেন তারা দুনিয়াতেই করুণ পরিণতির একটি অংশ ভোগ করেন এবং আখিরাতেও বিচারের দিন তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা শূলে চড়াবেন। সুতরাং দাম্ভিকতা অহংকার পরিহার করুন। তওবা করুন, আগে মানুষ হন, তারপর মুমিন হন।

শফিকুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও পক্ষের শক্তি বলতে আমি বুঝি, স্বাধীন দেশের একজন নাগরিককে সংবিধান যে কয়টি অধিকার দিয়েছে, তার সবকটি এদেশে নিশ্চিত হবে। শাসন-ক্ষমতায় যারা যাবেন তাদের এ অধিকার নিশ্চিত করা দায়িত্ব, কোনো দয়ার দান নয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন পালিয়ে গিয়েও দেশকে অস্থির করতে উস্কানিমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। সে রকম একটি উস্কানি দু-একদিন আগে তারা দিয়েছিলেন। এদেশে হাজার-হাজার মানুষ খুন হলেন, রক্তাক্ত ও পঙ্গু হয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। সেই সময় আপনারা আবার উস্কানি দেন। এইটা বাংলাদেশের মুক্তিপাগল মানুষ সহ্য করবে না। সুতরাং উস্কানির কারণে যত পরিবেশ সৃষ্টি হবে তার সমুদয় দায় উস্কানিদাতাদের নিতে হবে। 
শেখ হাসিনার সরকার সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছেন উল্লেখ করে জামায়াত ইসলামীর আমীর বলেন, তিনটি মৌলিক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পার্লামেন্ট, নির্বাহী ও বিচার ব্যবস্থার সব আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। একজন বিচারক যখন শপথ নেন তখন তিনি বলেন, আমি কারো প্রতি কোনো পক্ষ-বিপক্ষ অবলম্বন করব না, নিরপেক্ষ থাকব। যার যা পাওয়া বিচারে সে তাই পাবে। সে যখন বলে আমি অমুক দলকে অন্তরে ধারণ করি, তার পক্ষে কি ন্যায়বিচার সম্ভব? তাদের কেউ কেউ এদেশের নন্দিত গর্বিত ব্যক্তিদের রায় দেওয়ার পর টক শোতে গিয়ে বলতেন, অমুককে আজ ফাঁসি দিয়ে এসেছি। নাম ধরে ধরে বলতেন। তিনি একজন বিচারপতি তিনি টকশোতে যাবেন কেন? তার তো বিচারাঙ্গনের বাইরে বিচরণের কথা নয়। 

জামায়তের আমীর আরো বলেন, এখানে মহানগরের আমির বলে গেলেন, এখানে কোনো মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাই। কেন? ২৬ লাখ মানুষের এই নগরী, প্রায় ৪০ লাখ মানুষের এই জেলা কেন বঞ্চিত হবে? আমরা দেখেছি কোনো কোনো জেলা মাত্র তিনটা উপজেলার। সেখানে ইউনিভার্সিটি আছে, মেডিকেল কলেজ আছে, উন্নততর স্পেশালাইজড হসপিটাল আছে, কারিগরি প্রতিষ্ঠান আছে, কৃষি ইউনিভার্সিটি আছে। তিন উপজেলার জেলায় যদি এসব থাকতে পারে তাহলে ৪০ লাখ মানুষ কি অপরাধ করেছে যে তাদের এখানে হলো না। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের যেসব গডফাদার জমিদারি নিয়েছিলেন তারা কি করেছেন? তারা তাদের আপার কাছ থেকে এগুলি আদায় করেননি কেন? কারণ, তাদের ধান্ধাবাজি ছিল জমিদারি টিকিয়ে রাখা, মানুষের ওপর সন্ত্রাস করা এবং চাঁদাবাজি, লুণ্ঠন দখলদারি চালিয়ে যাওয়া। জনগণকে নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা ছিল না।

জামাতায়ের আমীর আরো বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে কোথাও চাঁদাবাজি, দখলদারি, অফিস-আদালতে ঘুষ চলে কিনা, প্রশ্ন করলে উত্তরে কর্মীদের পক্ষ থেকে হ্যা আসলে তিনি বলেন, তাহলে কেন আমাদের এতগুলো জীবন ঝরলো, এতগুলো মানুষ কেন পঙ্গু হলো? আমি বিনয়ের সাথে দল-মত-ধর্মের সবাইকে বলবো, এই অপকর্মে যারাই জড়িত আছেন, মেহেরবানি করে এই অপকর্মগুলো ছেড়ে দেন। নাহলে শহীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। ১৮ কোটি মানুষ আপনাদের অভিশাপ দেবে। এই ধান্দাবাজি থেকে সরে না আসলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে যারা লড়াই করে বলেছিল, ‘বুকের ভেতরে তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। এখন তারা স্লোগান দিচ্ছে ‘হে আবু সাঈদ, মুগ্ধ, শেষ হয়নি মোদের যুদ্ধ। যুবসমাজের স্বপ্ন যতদিন বাস্তবায়ন না হবে ততদিন আমাদের লড়াই-সংগ্রাম দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে অব্যাহত থাকবে। আগামীর বাংলাদেশ আমরা লড়াকু বীর সন্তানদের হাতে তুলে দেবো। তোরা দেশ চালাবি, পেছন থেকে আমরা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবো, ভুল করলে শক্ত করে টান দিয়ে ধরবো। ভুল করা যাবে না, অনেক ভুল এই জাতি করেছে, আর তোমাদের করতে দেওয়া হবে না।

শফিকুর রহমান বলেন, ঘরে-বাইরে নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা এবং সকল ধর্মের মানুষদের অবাধে তাদের ধর্মপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর ৫৪ বছর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতা, কোন কর্মী অন্যায়ভাবে কোথাও কারও একটুখানি জমি দখল করেছে, কার ইজ্জত, কার জীবনের উপর হাত দিয়েছে, মেহেরবানি করে আমাদের জানতে দিন। আমরা ইনশাল্লাহ তার সুষ্ঠু প্রতিকার করে ন্যায়বিচার আপনাদের উপহার দেবো। আমরা অন্যায় করলে ন্যায়সঙ্গত সমালোচনা করে অন্যায়কাজের গতি বন্ধ করে দিবেন।

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

×