ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১

বাংলাদেশে উড়বে পাকিস্তানি বিমান, ভারত কি নতুন অধ্যায় শুরু করল?

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশে উড়বে পাকিস্তানি বিমান, ভারত কি নতুন অধ্যায় শুরু করল?

ছবি: সংগৃহীত

স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক সংবেদনশীল ছিল। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের সম্পর্ক শীতল থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে উষ্ণতা ফিরে আসছে। বিশেষ করে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় আসার পর সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য ও কূটনৈতিক অগ্রগতির অংশ হিসেবে ঢাকা-করাচি সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ফ্লাই জিন্নাহ পাচ্ছে অনুমতি

পাকিস্তানের বেসরকারি বিমান সংস্থা ফ্লাই জিন্নাহ ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুমোদন পেয়েছে। এক দশকেরও বেশি সময় পর দুই শহরের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে।

ফ্লাই জিন্নাহ পাকিস্তানের লাকসন গ্রুপ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক এয়ার এরাবিয়ার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি লো-কস্ট এয়ারলাইনস। বর্তমানে এটির বহরে ছয়টি বিমান রয়েছে, যা ১১টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

বেবিচকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনুমোদন পাওয়ার পর ফ্লাই জিন্নাহ এখন বাংলাদেশে স্থানীয় প্রতিনিধি নিয়োগের কাজ করছে। এরপর তারা স্লট ও ফ্রিকোয়েন্সির জন্য আবেদন করলে পরবর্তী ধাপে অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে কবে নাগাদ ফ্লাইট চালু হবে, তা নির্ভর করবে এয়ারলাইনসটির প্রস্তুতির ওপর।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনা

ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালুর ফলে শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। ২০২৩ সালে পাকিস্তান বাংলাদেশে প্রায় ৬৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল, যার মধ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল, সুতা, কাপড় ও প্রস্তুত চামড়া ছিল ৭৯ শতাংশ।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ডলারের কিছু বেশি। বাংলাদেশ মূলত কাঁচা পাট, ওষুধ, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, চা ও তৈরি পোশাক রপ্তানি করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে করাচি ও চট্টগ্রাম বন্দরের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে, যা বাণিজ্য আরও সহজ করবে।

এছাড়া, পাকিস্তান বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা ফি বাতিল করেছে এবং ‘অন-অ্যারাইভাল ভিসা’ সুবিধা দিচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশিরা এখন পাকিস্তানে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন।

ফ্লাইটের মাধ্যমে ব্যয় ও সময় সাশ্রয়

ঢাকা থেকে করাচির দূরত্ব প্রায় ২,৩৭০ কিলোমিটার। এতদিন সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় যাত্রীদের মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ট্রানজিট পয়েন্ট হয়ে পাকিস্তানে যেতে হতো। বর্তমানে এয়ার অ্যারাবিয়া, গালফ এয়ার, ফ্লাই দুবাই, এমিরেটস, কাতার এয়ারওয়েজ, থাই এয়ারওয়েজসহ কয়েকটি এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে ট্রানজিট ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

ট্রানজিটের কারণে যাত্রীরা গড়ে ৮-১২ ঘণ্টা ব্যয় করেন, এবং ভাড়া দাঁড়ায় ৫০-৫৫ হাজার টাকার বদলে প্রায় ১ লাখ টাকা। তবে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে ভাড়া কমবে এবং যাত্রার সময়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

ভারতের আকাশপথ ব্যবহারের প্রশ্ন

ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইটের জন্য ভারতের আকাশপথ ব্যবহার করা হতে পারে। প্রস্তাবিত রুট অনুযায়ী, ফ্লাইটটি পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, লখনউ, নয়াদিল্লি ও রাজস্থান হয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করবে। তবে ভারত এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়নি।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

পাকিস্তান জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে কৃষিজাত পণ্য, শিক্ষা, পর্যটন ও সিরামিক খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। এছাড়া, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহজ করতে ভিসা নীতি আরও শিথিল করার তাগিদ দিয়েছে দেশটির ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট শুধু দুই দেশের পর্যটন ও ব্যবসার জন্যই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা— কবে নাগাদ চালু হবে এই নতুন আকাশপথের দ্বার।

আসিফ

আরো পড়ুন  

×