![সবার দৃষ্টি এখন ছাত্রদের নতুন দলের প্রতি, আগামী ভোটে হবে ফ্যাক্টর সবার দৃষ্টি এখন ছাত্রদের নতুন দলের প্রতি, আগামী ভোটে হবে ফ্যাক্টর](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/b222-2502051951.jpg)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ
সবার দৃষ্টি এখন ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের দিকে। কারা হচ্ছেন নতুন দলের নেতা, কবে দল গঠন হচ্ছে। আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নতুন দলের প্রভাব কেমন থাকবে। মিডিয়াপাড়া থেকে চায়ের দোকান, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক অঙ্গনেও চলছে আলোচনা। গুঞ্জন কৌতূহল সর্বদিকে।
দেশের প্রভাবশালী দলগুলো এবং ছাত্রদের অংশ থেকে নতুন দল নিয়ে প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বার্তা। পক্ষে বিপক্ষে চলছে তর্ক বিতর্ক। ভোটের মাঠে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগই যুগ যুগ ধরে প্রভাব বিস্তার করছে। এর বাইরে অন্য দলগুলো ভোটে দুটো দলের প্রতীকের সহযোগী হয় মাত্র। কিন্তু এবার ছাত্রদলের নয়া দল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রায় ১৭ বছর আন্দোলন করেও বিএনপি স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে পারেনি, আবার জামায়াতে ইসলামীও আন্দোলন করে তাদের নেতাদের ফাঁসি ঠেকাতে পারেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সকল শ্রেণির মানুষ এক হয়েছে, রাস্তায় নেমেছে। ছাত্ররাও অতীতের সকল দল গঠনের ফর্মেটের বাইরে গিয়ে দল গঠন করছেন।
যেখানে অনেকগুলো লেয়ার কাজ করছে। রয়েছে বিদেশী প্রেসক্রিপশন, রাজনৈতিক দলগুলোর পর্দার আড়ালে বিশেষ বার্তা। জনগণের মতামত অগ্রাধিকার ও স্বাধীনভাবে চলার অধিকার প্রতিষ্ঠায় নয়া চ্যালেঞ্জ।
রাজনীতিতে চোখ রাখা বিশেজ্ঞরা বলছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন দল আগামী ভোটে বিশাল ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। একটা সরকার পতনের ঐক্য থেকে নতুন দল গঠন হচ্ছে। যেখানে প্রায় দুই হাজার শহীদ পরিবার নতুন দলের সঙ্গে থাকার বার্তা রয়েছে। চব্বিশের আন্দোলনে গুলিতে আহত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই দলের সঙ্গে থাকার ইঙ্গিত রয়েছে। এ ছাড়া বিগত ১৭ বছরে হাসিনা যুগে যারা গুম খুনের শিকার হয়েছে তাদেরও বড় অংশের সমর্থন থাকবে।
আওয়ামী সরকার শুধু একচেটিয়া ভারতকে দিয়ে গেছে। এখনো কিছু দল ভারতের সঙ্গে পর্দার আড়ালে গভীর সম্পর্ক রাখছেন। এমন খবরের হাওয়া থেকে নতুন দলের প্রতি শক্তিশালী বিদেশী শক্তি গুলোর সমর্থন থাকছে। সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর একটি অংশও ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলে জোটে যুক্ত হওয়ার গুঞ্জন রয়েছে।
নতুন রাজনৈতিক দলগঠনে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসিনা পতনের আন্দোলন যে ফর্মেটে হয়েছে দল গঠনও একই ফর্মেটে। শুধু দু-একজনের ওপর ভিত্তি করেই দল আসবে না। ব্যাক্তির সঙ্গে দলের মৌলিক কোনো শক্তি থাকবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নীতি নির্ধারক বলেন, ৩৬ জুলাই আমাদের শীর্ষ নেতাদের আটক করার পরও যেভাবে আন্দোলন হয়েছে থেমে থাকেনি ঠিক সেভাবেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুখের ওপর নির্ভর করেই দল গঠন হচ্ছে না।
আমাদের টার্গেট যেমন ছিল হাসিনার পতন ঠিক একইভাবে আমাদের আগামীর টার্গেট নতুন রাজনৈতিক বন্দবস্ত। উন্নত দেশে যেমন রাজনীতির আড়ালে দখলদারিত্ব, টে-ারবাণিজ্য চলে না আগামীর রাজনীতিতে এসব চলবে না। দেশ চলবে যোগ্যদের যোগ্যতার নেতৃত্বে। যে যেটা পাওয়ার যোগ্য, সেটা যেন বুঝে পায়, আমরা সেই টার্গেটে এগোচ্ছি।
সর্বশেষ দলগঠনের প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন দল গঠনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদিও আলোচনা চলছে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তবে বিশ্বস্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন দল ঘোষণা করতে আরও সময় লাগবে।
চলতি মাসে দল ঘোষণা অনেকটাই অনিশ্চিত। এখনি দল ঘোষণা করতে পক্ষে বিপক্ষে নানা মত এসেছে। তারা আরও কিছু সময় রাজনৈতিক দলগুলোর গতিবিধি নজর রাখবেন। তবে দলের পরিধি দুইভাবে সামনে আসবে- শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।
চমক থাকবে ভোটের মাঠে নামার আগ পর্যন্ত রাখবেন তারা। দলের নাম কী হবে, প্রতীক কী হবে, সেটি নিয়েও এখনো আলোচনা চলছে। যারা চব্বিশের আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেছেন, যারা নতুন দলে আগ্রহ এমন সব মানুষকেই নামের বিষয়ে প্রস্তাব দিতে আহ্বান করা হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মলনে জানানো হয়, সারাদেশে জনমত জরিপ পরিচালনা করবেন তারা। নতুন দলের কাছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশ্যা কী এবং নতুন বাংলাদেশ কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে তাঁরা এই জরিপ চালাবেন। একই সঙ্গে দলের নাম কী হতে পারে সে বিষয়েও মতামত চাওয়া হয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের নাম বিভিন্ন মাধ্যমে আসছে। যদিও তিনি এ বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। সরকার থেকে পদত্যাগ করে তিনি নির্বাচন করবেন নতুন দলে আসবেন এখনো বিষয়টি নিশ্চিতও নয়। এ ছাড়া নতুন দলের সদস্য সচিব কে হবেন এটি নিয়ে আলোচনা চলছে।
সদস্য সচিব হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ।
তবে এখন পর্যন্ত শক্তিশালী দল গঠনে সবাই মনোযোগী। সরকারে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠন সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল ও মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি ছাত্রদের দল গঠনের বিষয়টি আরও বেশি আলোচনায় এসেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। তিনি বলেছেন, ছাত্ররা দল গঠন করতে যাচ্ছে এবং এটা দরকার। কারণ ছাত্ররা জীবন দিয়ে যে অর্জন করেছে তা রক্ষা করতে হবে। হ্যাঁ, এটা সত্য যে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর মানুষের মাঝে নানা ক্ষেত্রে আশা জেগেছে।
প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে পরিবর্তনের। রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে। অর্থনীতি সাবলীল হবে। সমাজ জীবন পরিবর্তন হবে। রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সেবা ব্যবস্থা গণমুখী হবে। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের পর এ বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গণে ভিন্নমাত্রা লাভ করে।
তবে প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম অলমগীর বলেছেন, সরকারে থেকে ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে তা মেনে নেবে না। এক্ষেত্রে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবং একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন পড়বে।
মহাসচিবের এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে থাকা তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, বিএনপি মহাসচিবের এ বক্তব্যে ১/১১ আসার সুর রয়েছে। এর পর থেকে এ বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং শোস্যাল মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
সবশেষ দল গঠনের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেন থেকে রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। নাসিরউদ্দিন বলেন, জনগণের মতামত গ্রহণ করতে প্রতিটি জেলায় এক হাজার করে ফর্ম দেয়া হবে। অনলাইন ও অফলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মতামত জানানোর সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও বুথ থাকবে।
একই অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘পূর্ববর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর মতো কোনো আদর্শ চাপিয়ে দিতে চাই না। আমরা জনগণের মতামত নিয়ে নিজেদের আদর্শ গড়তে চাই। সারা দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত এক লাখ মানুষের মতামত নিয়ে নতুন এই রাজনৈতিক দলের আদর্শ গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, ২৪ এরপর মানুষের মনে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেটিকে ধারণ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন হবে।