রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইসলামিক দল ও সংগঠনগুলো
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ইসলামিক দল ও সংগঠনগুলো। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ইসলামিক দলগুলোর অংশগ্রহণ এবং প্রকাশ্যে আওয়ামী সরকারের বিরোধিতা তাদের গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। শুধু ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন নয় অতীতের ন্যায় নির্বাচন এলেই গুরুত্ব বাড়ে ইসলামিক দলগুলোর।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ হতে পারে বলে রাজনীতিকদেরই অনেকে বলছেন। এখনো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা না হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনমুখী তৎপরতা দৃশ্যমান হচ্ছে।
৫ আগস্টের পর থেকে মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকায় বিএনপির বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত অন্যান্য ইসলামিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ইসলামিক দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে বিএনপি। সম্প্রতি একাধিক ইসলামিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। যেখানে বেশ কয়েকটি বিষয়ে ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে বিএনপির।
সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে ইসলামি আন্দোলনের আমির ও চরমোনাইর পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ সময় আলোচনার পর তারা ১০টি বিষয়ে একমত হওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান।
মির্জা ফখরুল সেখানে জোহরের নামাজ পড়েন এবং চরমোনাইর পীরের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু তার সঙ্গে ছিলেন। বৈঠক শেষ বিএনপি ও ইসলামি আন্দোলনের নেতাদের ঘোষণায় দুই দলের মধ্যে দূরত্ব কমানোর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দশটি বিষয়ে বিএনপি ইসলামি আন্দোলনের সঙ্গে একমত হলেও বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রশ্নে ইসলামি আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি একমত হয়নি। এ ছাড়া নির্বাচনের সময় নিয়েও দল দুটিতে কিছুটা মতপার্থক্য হয়। ইসলামি আন্দোলন আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে। বিএনপির নেতারা এর বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি জুলাই-আগস্টের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চেয়েছে। ইসলামি আন্দোলন প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি খেলাফত মজলিশের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। যেখানে দুই দলই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করাসহ সাতটি বিষয়ে একমত হয়। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং খেলাফত মজলিশের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদের নেতৃত্বে দলের ৯ জন নেতা অংশ নেন।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে জামায়াতের পাল্লা ভারি করার চেষ্টার বিপরীতে বিএনপি এ বৈঠক শুরু করেছে।
বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জনকণ্ঠকে বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এটা নিয়মিত কর্মসূচির অংশ।
এরই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক হবে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে প্রিন্স বলেন, আমরা জামায়াতের সঙ্গে আগেও বৈঠক করেছি। বৈঠক হবে কি হবে না এটা সময় বলে দিবে। প্রয়োজন হলে অবশ্যই জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করবে বিএনপি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুবউল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির বৈঠক এটা রাজনৈতিক বিষয়। সব রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় যেতে চায়। তারা যে কোনো দলের সঙ্গেই জোটবদ্ধ হতে পারে। এক সময় শেখ মুজিবুর রহমানও তার নির্বাচনি ইশতেহারে বলেছিলেন কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না। বিএনপি ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে যে বৈঠক করছে এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য খোঁজা উচিত হবে না। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়।