বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত।
স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে দেশের সব জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, দেশে দীর্ঘদিন স্বৈরাচার হাসিনা সরকার ক্ষমতায় ছিল। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দেশের মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে। দেশের সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গা ফিরিয়ে আনতে আমাদের নেতাকর্মীদের কাজ হবে। স্বৈরাচার পালালেও তার দোসররা রয়ে গেছে, এ জন্য দেশের সকল জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। তারা নানান দাবি-দাওয়ার নামে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের আব্বাস উদ্দিন খান মডেল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আগামী দিনে সংসদ কীভাবে পরিচালিত হবে, সংসদের মেয়াদ কতদিন হবে; একজন মানুষ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন- এমন বিভিন্ন বিষয় আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে সক্ষম। এগুলো নিয়ে আমরা মাত্রাতিরিক্ত আলোচনা করলে রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ব।’
তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারের মূলে থাকা ব্যক্তি পালিয়ে গেলেও কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেছে। তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেয়ার চেষ্টা করছে। নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে আবার দেশকে দখলের চেষ্টা করছেন তারা। তাদেরকে এই লক্ষ্য হাসিল করতে দেয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে মতপার্থ্যক্য থাকতেই পারে। আলোচনা মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান করা হবে। বড় দল হিসেবে বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়িত্ব অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় একমাত্র বিএনপিই মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে গড়তে পারে। জনগণের জন্য বিএনপি কী করবে, ৩১ দফায় তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বেকারত্ব দূরীকরণ, কৃষি ও শিল্পখাতে উন্নয়ন ৩১ দফায় অন্তভূক্ত করা হয়েছে। আমরা কৃষককে ন্যায্যমূল্য দিতে চাই। তবে লাগমহীন দ্রব্যমূল্য যেন জনগনের মধ্য নাভিশ্বাসের কারণ না হয়।
তিনি বলেন, 'আমরা যদি শুধু নিজেদের স্বার্থের জন্য তর্কে লিপ্ত থাকি, তাহলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার। তিনি আরও বলেন, 'বিগত ১৫ বছর জনগণের ভোট দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না। জনগণের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা অস্ত্রের বলে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কখনও আমরা দেখেছি ডামি নির্বাচন, কখনও দেখেছি ভোটারবিহীন নির্বাচন। সেকারণেই আমরা দেখেছি উন্নয়নের নাম করে লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়েছে। কোনোরকম জবাবদিহিতা ছিল না বলেই দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'নির্বাচন অথবা বিচার ব্যবস্থা-প্রত্যেকটি ব্যবস্থাকে আবার পুনর্গঠন করতে হবে। রাষ্ট্রকাঠামোর এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যত দ্রুত শুরু করা যাবে, দেশ তত দ্রুত আমরা উন্নত করতে পারব। বিএনপি একমাত্র দেশকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।'
তিনি আরও বলেন, অচল কল কারখানাগুলোকে সচল করতে হবে । আমাদের অসংখ্য নদ নদী ও খাল ভরাট হয়ে গেছে। এগুলো খনন করতে হবে। আগামী দিনে সংসদের মেয়াদ কত হবে, সংখ্যা কত হবে গণতান্ত্রীক রাষ্ট্রে এই বিতর্ক থাকতেই পারে। দিন শেষে আমরা এগুলো জনগনের উপর ছেড়ে দিব। এই নিয়ে মাত্রতিরিক্ত বিতর্ক সরাষ্ট্র মেরামতের কাজকে বিঘ্নিত হবে। তবে এরে একমাত্র উপায় সহল জাতীয় নির্বাচন। জনগণের ভোটের মাধ্যমে এর ফয়সালা হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপি‘র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো: বরকত উল্লাহ বুলু। উদ্বোধকের বক্তব্যে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কাউকে হত্যা করে এ দেশের ক্ষমতায় আসেননি। সিপাহী জনতার বিপ্লবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের সিপাহী জনতা শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসান। এরপর তিনি এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, আজ দেশের দেড় কোটি মানুষ মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরি করেন। সেই বৈদেশিক শ্রম বাজার জিয়াউর রহমান চালু করেন। ঋণ প্রদানের মাধ্যমে দেশের পোশাক শিল্পও জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছেন। যে পোশাক শিল্প আর বৈদেশিক রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিকে আজ চাঙ্গা করেছে। এসব অবদান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের। সেই ইতিহাস আওয়ামী লীগ বদলে দিতে চায়।
জেলা বিএনপি‘র আহবায়ক এডভোকেট আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তৃতা করেন বিএনপি‘র কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো: সেলিম ভুইয়া, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোস্তাক আহম্মেদ, বিএনপি‘র কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন শ্যামল, বিএনপি‘র কুমিল্লা বিভাগীয় সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো: সায়েদুল হক সাইদ বিএনপি‘র কেন্দ্রীয় নির্বাহি কমিটির সদস্য শেখ মো: শামীম, সালাউদ্দিন শিশির,জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো:জহিরুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো: সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও জেলা বিএনপি নেতা মো: কবির আহম্মেদ প্রমুখ।
এদিকে দীর্ঘ এক যুগ পর জেলা বিএনপির এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলার সর্বত্রই ছিল উৎসবের আমেজ। শনিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন রং-বেরঙের ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে থাকে।দুপুর ১২টার আগেই দলীয় নেতাকর্মিদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, এই সম্মেলন কেন্দ্র করে জেলা বিএনপি‘র দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। গত ২৮ ডিসেম্বর ও ১৮ জানুয়ারী দুদফা তারিখ নির্ধারণ করেও তা সম্ভব হয়নি।
নুসরাত