নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান / ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি যমুনা টিভির এক টকশো আলোচনায় আমাদের সবকিছু পঁচে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান।
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, চীন সফর থেকে ফিরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশীদের চিকিৎসায় নতুন গন্তব্য চীনের কুনমিং হতে পারে, চীনকে ভিসা ফি কমানো এবং প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একই ঘটনা আমরা মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডেও দেখেছি যে এই ধরনের সুবিধা পাওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। আচ্ছা ডাক্তার জনাব জাহেদ উর রহমান, আপনি তো ডাক্তার মানুষ বা পড়েছেন, ডাক্তারিতে মানে সুচিকিৎসা নিতে দেশের বাইরেই যেতে হবে, এই আর্জিটা যত দেখছেন আপনি, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো করার জন্য বা দেশে আরো ভালো হাসপাতাল করার জন্য, সেই রকম প্রচেষ্টা কি আপনার চোখে পড়েছে?
জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, আমি ডাক্তারদেরকে সমর্থন করছি না, কিন্তু একটা কথা একটু বলতেই হয়, সেটা হচ্ছে যদি এটা হতো বাংলাদেশের বিচার মালয়েশিয়াতে গেলে ভালো পাওয়া যাবে, মানুষ বিচারের জন্য মালয়েশিয়ায় যেত, যদি এমন হতো বাংলাদেশের পুলিশিং ইন্ডিয়ায় গেলে ভালো পাওয়া যাবে, ওখানে যেত মানুষ। হোয়াট আই এম ট্রাইং টু সে, একটা দেশের পুরো সিস্টেম যখন ধ্বংস হয়ে যায়, কিছুই আর ঠিক নেই। আমি একটু বলেই ফেলি, আমাদের ধর্মগুরুরা ওয়াজের নামে মাহফিল করে, আপনি কিছু মাহফিল একটু দেখবেন, আমাদের কিছু-কিছু, নট জেনারালাইজিং, সবার কথা বলছি না। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ ওখানে কি করে দেখবেন, যেখানে ধর্মের কথা বলা হচ্ছে বলে বলা হয়। সো একটা সোসাইটির পচন না সবকিছুকে পঁচিয়ে ফেলে। আমাদের ভালো পুলিশ নেই, আমাদের ভালো ডক্টরস নেই, ভালো টিচারস নেই।
আপনি যান ক্লাসে, পড়াচ্ছে না। বাসায় আসো, বাসায় আসলেও যে ভালো পড়ানো হচ্ছে, নট নেসেসারিলি। বাড়িতে গিয়ে আমাদের শেষ পর্যন্ত যে গ্রাজুয়েটস বের হয়, তাদের মান কি আসলে। আমি প্রচুর বিজনেস পিপলকে বলতে শুনেছি, এই যে আমরা প্রায় বলি, ইন্ডিয়া-শ্রীলঙ্কার লোকজন এসে এত টাকা ইনকাম করে নিয়ে চলে যায়, আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসায়ী বলেছেন যে, আমি বসে আছি বাংলাদেশীদেরকে চাকরি দেয়ার জন্য, ওদের অর্ধেক টাকা দিলেও খুশি হয়ে যাবে কিন্তু আমি তো পাই না রিক্রুট করতে। সো আমাদের আসলে ‘সবকিছু পচে গেছে’, এটা হলো প্রাথমিকতা।
সুতরাং বাংলাদেশের মানে চিকিৎসা ব্যবস্থা একটা আইসোলেটেড আইল্যান্ড হয়ে খুব চমৎকারভাবে চলবে এটা হয় না। সুতরাং এই দায় কোনভাবেই আমরা এটাকে দিতে পারি না। কিন্তু সমস্যাটা কি হয় সেটা বলতে পারি, দেখবেন, পুলিশ আর ডাক্তার খুব সমস্যা লাগে আমাদের কাছে। কারণ ওদের কাছে আমরা ব্যক্তিগতভাবে যাই। আপনি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন, পুলিশের কাছে যেতে না হলেও রাস্তায় দেখি, কিন্তু ডাক্তারের কাছে আমাদের যেতেই হয়, সো প্রবলেমটা আমরা দেখি।
সেই কারণেই আসলে এটা এক্সপোজ হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সামষ্টিকভাবে একটা দেশে যদি সুশাসন তৈরি না হয়, কোন কিছু আসলে কাজ করবে না। যদিও আমাদের অত্যন্ত ভালো মানের ট্রেইনড ডক্টরস আছে, আমাদের ম্যানেজমেন্টের মেজর প্রবলেম আছে, সেটা ঠিক হলে, সেটা বাংলাদেশেই আমাদের এই রোগীদের চিকিৎসা করা সম্ভব।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল, প্রধান নির্বাচন কমিশনের এ এম এম নাসিরউদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশে অনেকগুলো সুপারিশ আছে, যেগুলো বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা খর্ব হবে। ২৮ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারও বলেছেন, মাইকেল মিলারকেও তিনি বলেছেন যে, ইসির স্বাধীনতা খর্ব হোক এটা আমরা চাই না। আপনি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য, ইসিকে পরাধীন কেন করতে চাচ্ছেন আপনারা?
জবাবে তিনি বলেন, স্বাধীন বলতে উনি যা বুঝিয়েছেন, এরকম স্বাধীনতা আসলে ইসি না একটা বাংলাদেশের মত একটা দেশে, এই যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, আমাকে একজন সিভিল সোসাইটির মানুষ হিসেবে ডেকেছিলেন, সেখানে আমরা আসলে মূল আলাপটা কি করি? বা আমি একটু পেছনে যাই, মানে ম্যাগনা কার্টা হয়েছিল, কেন এই রাজা তোমার হাতে সব ক্ষমতা থাকা যাবে না? তুমি আইন বানাবা, তুমি বিচার করবা, তুমি শাস্তি দিবা, তুমি ধরে আনবা, আইন প্রয়োগ করবা, সব হতে পারে না। রাজারও হাত বাঁধতে হবে। সো আমরা প্রধানমন্ত্রীকেই স্বাধীন রাখতে চাই না, তাই না। তো সেখানে আমরা ইসি পুরো স্বাধীন হবেন, এটা কেন মনে করছেন?
আমরা আসলে একটা ওভারসাইড কমিটির কথা বলেছি, যেটা পার্লামেন্ট। আমাদের তো হাসিনার পার্লামেন্ট দেখছি না, আমরা ভবিষ্যতে একটা ডেমোক্রেটিক পার্লামেন্ট দেখব। যেখানে সব দলের সদস্য মিলে একটা কমিটি হবে। সেই কমিটিটা, ইসি সারাক্ষণ নাক গোলাবেন, ইসি নিজের মত কাজ করবে, কিন্তু ইসি তার দায়িত্ব পালনে কোথাও কোথাও কি কি করেছে, না করেছে, ভুল করছে কিনা, তার দায়িত্বে সমস্যা হচ্ছে কিনা, এগুলো সব মুহূর্তে না, এগুলো কোন একটা নির্বাচনের পর, এই ব্যাপারগুলো তো কাউকে একটু দেখার চেষ্টা করতে হবে। এখন যেটা আছে নির্বাচন কমিশন, এগুলো ধরুন, আইন মন্ত্রণালয় এর এদিকে থাকবে, তো যদি সেটা হয়ে থাকে, ওভারসি করার জন্য বলছি, এগুলোর সমস্যা হবে।
সো আমরা এরকম একটা কমিশনের কথা বলছি এবং একটা ডেমোক্রেটিক রাষ্ট্রের বেসিক কথা হচ্ছে, চেক এন্ড ব্যালেন্স, একটা উইং একটা উইংকে, একটা ইনস্টিটিউট আরেকটাকে, একটা কমিশন আরেকটাকে, চেক এন্ড ব্যালেন্সের মধ্যে রাখবে। সেটা তো থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
মো. মহিউদ্দিন