রাজধানীতে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে প্রতিবন্ধী রিকশাচালক মামুনকে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রত্যাশিত দেশ গঠনে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যেককে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি লক্ষ্য পূরণের পথে যদি কোনো শক্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায় সেখানে দলীয় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মাগুরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, আমরা একটি নির্বাচন প্রত্যাশা করছি; যেখানে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কে জনগণের দেখভাল করবে। বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও মনে করে দেশের এবং জনগণের মৌলিক সমস্যা সেটি সমাধানে এবং দেশ মেরামতের জন্যে বড় দল হিসেবে বিএনপিকেই দায়িত্ব নিতে হবে। মেরামতের কারিগর বিএনপিকে হতে হবে।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে বিএনপির বহু নেতাকর্মী গুম, খুন, গায়েবি মামলার শিকার হয়েছে। বিগত স্বৈরাচার আপনার ব্যবসা-বাণিজ্য তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করে দিয়েছে; কিন্তু আমরা মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। যদি মানুষের বাক-স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারি, রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারি- তাহলে জনগণের কথা বলা যাবে, জনগণের সমস্যা সমাধান করা যাবে। দেশের সমস্যাও সমাধান করতে পারব।
দলের প্রত্যেককে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রতিজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, যে দায়িত্ব আমরা নিয়েছি, জনগণ আমাদের দিয়েছে বা দিতে যাচ্ছে, যে প্রতিশ্রুতি আমরা জনগণকে দিয়েছি সেটির নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যতা যেন অর্জন করতে পারি- সেই তৌফিক যেন আল্লাহ আমাদের দেন। এজন্য নিজেদের যেন প্রস্তুত করতে পারি সেই শপথ গ্রহণ করি।
পাশাপাশি প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য পূরণের পথে বাধাগুলো মোকাবিলার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফার মাধ্যমে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আমাদের যে শপথ সেটিকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করার জন্য যদি কেউ কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। তাহলে ২০ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
তারেক রহমান বলেন, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভারতীয় শিল্পীদের এনে দেশী শিল্পীদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। এখন দেখছি পাকিস্তান ইসলামাবাদ থেকে শিল্পী আনা হচ্ছে। এ কারণে গত ১৬ ডিসেম্বর আমাদের পক্ষ থেকে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ এই শিরোনামে দেশী শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। এটি অব্যাহত রেখে আমাদের সংস্কৃতিতে বিদেশী আগ্রাসন প্রতিহত করতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘ভারত বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণের ফলে আমাদের প্রধান নদীগুলো শুকিয়ে গেছে। ফলে চাষাবাদে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভারত যে বাঁধ দিচ্ছে সেটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি উপস্থাপন করতে হবে। বিগত সময়ে আমাদের সরকারের আমলে বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপিত হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ জিয়ার সরকারের আমলে খাল কাটা কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছিল। যা এখন ভরাট হয়ে গেছে। একইসঙ্গে দেশের ছোট নদীগুলো ভরা হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় নদী-খাল খনন কেমন হয়েছিল আপনারা জানেন। আমাদের এই অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আবার খাল কেটে বাড়তি পানির ব্যবস্থা করতে হবে। যা শুকনো মৌসুমে কাজে লাগবে।
তারেক রহমান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৭ সাল থেকে দেশ সংস্কারের কথা বলেছেন। তাই বিএনপিও গত দুই বছর আগে ৩১ দফা পেশ করে। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। আমরা জানতাম এ সরকারের পতন হবেই। তাই আগে থেকে আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দেই।
তিনি বলেন, আমরা একত্রে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে প্রস্তুত। আমাদের চিন্তা সবসময় দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি। দেশের মানুষ বিশ্বাস করে দেশের যে কোনো ভালো বিএনপি করে এবং বিএনপি করবে। তিনি আরও বলেন, ১৫ বছরে দেশে দ্বি-রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নারী-পুরুষ সবাই ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারের শিকার হয়েছে। বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনুসরণ করে জনমানুষের জন্য রাজনীতি করেছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, যারা যারা বর্তমানে সংস্কারের কথা বলেছেন তাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। বিএনপির বাইরে যারা সংস্কারের কথা বলেছেন তাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। এই সংস্কারের কথা আমরা দুই বছর আগে বলেছি। তারও আগে ২০১৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০-এ বলেছেন। অর্থাৎ বিএনপি যে প্রকৃতভাবে দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবে, প্রতিবার বিএনপি সেটা প্রমাণ করেছে।