ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক কর্মসূচি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষিত এই কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও দলীয় আলোচনায় তীব্র সমালোচনার সুর শোনা যাচ্ছে।
গত মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে ঘোষিত কর্মসূচিতে ১ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট ও প্রচারপত্র বিতরণ, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি সর্বাত্মক হরতালের আহ্বান জানানো হয়। এ কর্মসূচির মূল দাবি হলো অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, শেখ হাসিনা ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার এবং কথিত প্রহসনমূলক বিচার বন্ধের দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।
তবে, তৃণমূল নেতাকর্মীরা এই কর্মসূচিকে সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন না। তাদের মতে, গত জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে যে সহিংসতা ও অস্থিরতা দেখা গেছে, তাতে বর্তমান পরিস্থিতিতে মাঠে নামা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্ত তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত নয়।
এক জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "দলে যারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লুটপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, তারা এখন বিদেশে অবস্থান করছেন। অথচ দেশে থাকা সাধারণ কর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে হঠকারী কর্মসূচি ঘোষণা করা হচ্ছে।" তিনি আরও যোগ করেন, "আওয়ামী লীগের এখন উচিত সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো, যাতে দুর্নীতি বা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত নন—এমন নেতারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। ভালো ইমেজের নেতাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত করাই দলের পুনর্জাগরণের উপায়।"
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান দলের প্রবাসী নেতা সজীব ওয়াজেদ জয়। শুরুতে তিনি দায়িত্ব না নেওয়ার কথা বললেও পরে অবস্থান পরিবর্তন করেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় অবস্থান নেন। তবে, তার এই ভূমিকা নিয়েও তৃণমূল পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট। কেউ কেউ আন্দোলনের পক্ষে থাকলেও, অনেকেই মনে করছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাদের মতে, দলীয় নেতৃত্বের উচিত তৃণমূলের চিন্তা-ভাবনা ও নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা।
এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা কী হবে, তা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে চলছে জোরালো আলোচনা ও সমালোচনা।
ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/7K-7cEhX7DA?si=fJFtg0zIaafnfYYt