রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে শনিবার শিক্ষক-কর্মচারী সমাবেশে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান
জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনার মধ্যে এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি জানিয়েছেন, দেশে কোনো নতুন রাজনৈতিক দল হলে বিএনপি তাকে স্বাগত জানাবে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা প্রশাসনের সহযোগিতায় কোনো রাজনৈতিক দল গঠিত হলে জনগণ তাতে হতাশ হবে বলে মনে করেন তিনি।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে শিক্ষক কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আয়োজিত শিক্ষক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি দেওয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় কেউ যদি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় অবশ্যই বিএনপি তাকে স্বাগত জানায়। তবে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেয় তা হবে হতাশাজনক। অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ ঝগড়াসুলভ বা প্রতিহিংসামূলক হলে সেটিও জনগণের কাছে অনাকাক্সিক্ষত হবে। তরুণরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তারাই সামনে নেতৃত্ব দেবে। তবে তা যেন কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে না হয়।
বিএনপি সংস্কারের পক্ষে জানিয়ে তিনি বলেন, পলাতক স্বৈরাচার মুক্তিযুদ্ধসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। নির্বাচন কমিশন এবং দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানকেও অকার্যকর করে দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানসহ বেশ কয়েকটি সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে। এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের সঙ্গে দুই একটি প্রক্রিয়াগত বিষয় ছাড়া বিএনপির কোনো ভিন্নমত নেই। সংস্কার ও নির্বাচন দুটোর পক্ষেই বিএনপি।
দেশে একটি পরিশুদ্ধ রাজনীতি দরকার জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই সব কিছু পালিত হয়। সুতরাং কোনো কিছুকে শুদ্ধ রাখার জন্য রাজনীতির বাইরে রাখা বা ঊর্ধ্বে রাখা এটি না করে বরং রাজনীতিটাই আমাদের শুদ্ধ করা প্রয়োজন। রাজনীতিটা শুদ্ধ এবং স্বচ্ছ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, প্রচলিত রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন যদি করতে না পারি তাহলে এখানে যত আকাক্সক্ষার কথা বলা হয়েছে, বিভিন্ন আলোচনায়, বিভিন্ন সুশীল ব্যক্তিরা যে আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের কথা বলছেন, রাজনীতির গুণগত যে পরিবর্তন, রাজনীতির ভেতরের যে পরিবর্তন সেটা যদি করতে না পারি তাহলে হয়তো কোনো কিছুই করা সম্ভব না।
তারেক রহমান বলেন, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিএনপি রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দল সংস্কারের উদ্দেশে বাংলাদেশের পক্ষের সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে, তাদের সঙ্গে নিয়ে জনগণের সামনে ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি উপস্থাপন করেছে। জনগণের রায় পেয়ে বিএনপি সরকার গঠনে সক্ষম হলে বিএনপি পর্যায়ক্রমভাবে প্রতিটি সংস্কার কর্মসূচি ইনশাআল্লাহ বাস্তবায়ন করবে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে তারেক রহমান বলেন, বাজারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকারের মতো সরকারের পক্ষে সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি দেওয়া সহজ। জনগণের ওপর ভ্যাটের বোঝা কেন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই সরকার এখনো কেন বাজার সিন্ডিকেট নষ্ট করতে পারেনি। তবে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না বলে জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, কিন্তু তুমি-আমি একই রয়ে গেছি। এখনো কোর্টে যাই, হাজিরা দিতে হয়। এর থেকে পরিত্রাণ পাইনি। তাই আন্দোলন করে আমাদের নির্বাচন আদায় করতে হলে দুঃখ পাব না।
শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আব্দুল মঈন খান, সেলিমা রহমান প্রমুখ।