ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

নাহিদ বিস্ফোরণে রাজনীতিতে গরম হাওয়া

আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০১:০৮, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

নাহিদ বিস্ফোরণে রাজনীতিতে গরম হাওয়া

নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে দেশজুড়ে উত্তেজনা

নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকার চায় বিএনপি। হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজি হয়নি। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের আইজির নিয়োগ হয়েছিল বিএনপির লোক দিয়ে। এই সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছে। রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা—সব ইস্যুতেই বিএনপি বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ দেশের বড় বড় লোকেরা অল্পমূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।

স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের এক দফার ঘোষক ও ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্যে রাজনীতিতে গরম হাওয়া শুরু হয়েছে। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পর্দার আড়ালের খবর প্রকাশ পাওয়ায় দেশে এখন নানা সমীকরণ তৈরি হবে। এর ফলাফল কী হতে পারে, তা বোঝার চেষ্টা করছেন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদরা। ছাত্রদের বড় অংশ থেকেও ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে—এতদিন সরকারের থাকা ছাত্র প্রতিনিধিরা কী করেছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নাহিদ ইসলাম রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ। এজন্য তিনি বিএনপির মতো রাষ্ট্রনেতৃত্বদানকারী দলকে নিয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন। দলটি অভিযোগ করেছে, রাজনীতিতে দেশে একটি ঐক্যের হাওয়া শুরু হয়েছে। ছাত্রদের অংশ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেই ঐক্য নষ্ট করা হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামী বলছে, বিএনপি ও ছাত্রদের অংশ থেকে পাল্টাপাল্টি এমন বক্তব্যের রহস্য তারা এখনো বুঝতে পারেনি। নাগরিক ঐক্য বলছে, বাচ্চা ছেলের বক্তব্যে উত্তর দেওয়াও নিষ্প্রয়োজন।

এদিকে এলডিপি বলছে, হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলো সেনাসদর ও রাষ্ট্রপতির দরবারে গিয়ে ভুল করেছে। তাদের দাবি, “৪০ বছর আগের জনগণ আর বর্তমান জনগণ এক নয়।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন সম্ভব নয়।” তার এই বক্তব্যের পরই তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গতকাল একটি প্রতিক্রিয়ামূলক বক্তব্য দেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, “নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটি ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত।”

এরপর সন্ধ্যার দিকে তার এই লেখাটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, “বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটি ১/১১ সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। ১/১১-এর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটি ১/১১ সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।”

“ছাত্র এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছে, তখন আমাদের আপোষকামী অনেক জাতীয় নেতৃবৃন্দ ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন।”

তিনি বলেন, “আমরা ৩ আগস্ট থেকে বলে আসছি, কোনো প্রকারের সেনা শাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নেব না। আমাদেরকে বারবার ক্যান্টনমেন্টে যেতে বলা হলেও আমরা যেতে অস্বীকার করি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে আলোচনা ও বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।”

বিএনপির দেশপ্রেমিক নেতৃত্বকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলুন।”

এদিকে নাহিদ ইসলামের পোস্ট নিয়ে ছাত্র আন্দোলনের অনেক নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনার ফারজানা খাতুন দোলা বলেন, “নাহিদ ভাই, এত কিছু জানি না। শুধু একটাই প্রশ্ন, গত ৬ মাস কী ঘুমের ওষুধ খেয়ে অচেতন ছিলেন? এখন তরী ডোবার সময় কেন সাফাই গাইছেন?”

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “নাহিদ ইসলাম ভাই, আপনার পোস্ট দিনে ৩ বার করে আগামী ৭ দিন পড়বেন। অবশ্যই পড়বেন।”

অন্য সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেছেন, “নাহিদ ইসলাম ভাই, বিএনপির গণঅভ্যুত্থানের ফসল নস্যাৎ করার ঐতিহাসিক দায় নিয়ে বলবেন, বলবেন করে বলেই ফেললেন।”

এই বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “বাচ্চা বাচ্চা ছেলেরা কেন এমন কথা বলছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটাই দেখার বিষয়।”

এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, “মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে ছাত্রদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া কেন, তা বোঝা কঠিন। তবে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। জনগণের কথা চিন্তা করতে হবে।”

এদিকে, নাহিদ ইসলামের পোস্ট নিয়ে তার সমর্থকদের মধ্যেও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এই পোস্ট নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

সায়মা ইসলাম

×