ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

বিএনপি-খেলাফত মজলিশ বৈঠক

চলতি বছরে নির্বাচনসহ ৭ বিষয়ে মতৈক্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

চলতি বছরে নির্বাচনসহ ৭ বিষয়ে মতৈক্য

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে মতবিনিময় করেন খেলাফত মজলিশের নেতারা

বিএনপি ও খেলাফত মজলিশ দুই দলই দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মধ্যেও ঐক্য গঠনে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে বিএনপি।

বুধবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্য গড়তে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেন খেলাফত মজলিশের নেতারা। সেখানে জাতীয় ঐক্য গঠন, চলতি বছরে নির্বাচনসহ সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে এ দল দুটো। 
বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদ্য নজরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে খেলাফত মজলিশের ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ এবং মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, আবদুল্লাহ ফরিদ, যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, এবিএম সিরাজুল মামুন, মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সাল এবং আব্দুল জলিল।
এদিকে গত মঙ্গলবার বরিশালের চরমোনাইতে যান জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার আগে সেখানে তাঁরা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। দল দুটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আদর্শিক কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে। এর মধ্যেই জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা প্রথমবারের মতো চরমোনাই পীরের বাড়িতে আতিথেয়তা নিলেন। এটিকে দল দুটির আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
বৈঠকের পর জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মধ্যে ঐক্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।’ এই দুই দলের ঐক্যে বিএনপি চিন্তিত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে কনসার্নের কিছু নাই।

বাংলাদেশে যারাই রাজনীতি করেন, তারাই রাজনীতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যার সঙ্গে যার মতের মিল হবে তারা একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে চিন্তা করতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা নিয়ে কারও কোনো দুশ্চিন্তা থাকার তো কোনো কারণ নাই।’
নজরুল বলেন, ‘আমরা তো ঐক্যবদ্ধ আছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব অলরেডি ঘোষণা করেছেন, যারাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত আছি, আগামী দিনে আল্লাহর মেহেরবানীতে যদি জনগণের সেবা করার সুযোগ আল্লাহ আমাদেরকে দেয়, তাহলে যারাই আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত ছিল তাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একযোগে ঐক্যবদ্ধভাবে এদেশের জনগণের কল্যাণ করার চেষ্টা করব।
“কাজেই একধরনের জোট তো হয়েই আছে আমাদের মধ্যে। যারাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, যারাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, তারা সবাই আমাদের আন্দোলনের আমাদের সাথী ছিলেন। আগামী দিনগুলোতেও আমাদের সঙ্গে থাকবেন।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা করেছেন। দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণের লক্ষ্যে কী করণীয়, এ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে একমত হয়েই আন্দোলন করেছি বহু বছর ধরে। এ আলোচনায় আমাদের মধ্যে তেমন কোনো দ্বিমত নেই, আমরা একমতই হয়েছি।’
বিএনপি খেলাফত, ঐকমত্য যেসব বিষয়ে ॥ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, জাতির স্বার্থে ফ্যসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য হওয়ার জরুরি। এ ব্যাপারে তাঁরা একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সাতটি বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, তা হলো জাতীয় ঐক্য সুসংহত করার জন্য আন্তদলীয় সংলাপ অব্যাহত রাখা, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা; দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে হবে; ইসলামি মূল্যবোধ সমুন্নত ও ধর্মীয় সম্প্রীতির রক্ষার জন্য সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে; পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে; খুন, গুম, হত্যা, নির্যাতনে জড়িতদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা; আওয়ামী সরকারের সময় আলেম-ওলামা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।’

×