ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

গ্রন্থ আড্ডায় ফখরুল

যে কোনো নির্বাচিত সরকার অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫২, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

যে কোনো নির্বাচিত সরকার অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

যে কোনো নির্বাচিত সরকার অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত গ্রন্থ আড্ডায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাড়াতাড়ি নির্বাচনটা হলে দেশের সমস্যাগুলো চলে যাবে। পিপলস ম্যান্ডেট নিয়ে এখানে একটা নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসবে। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে তো এখন কনফিডেন্স নেই। জনগণের ভাষাটা তো বুঝতে হবে, সেটা নির্বাচিত সরকার সবচেয়ে ভালো বুঝে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
ফখরুল বলেন, বেশ কয়েকটা সংস্কার কমিশন করা হলেও শিক্ষা নিয়ে কিছু করা হয়নি। সবকিছুর আগে প্রয়োজন ছিল শিক্ষা সংস্কার কমিশনের। শিক্ষা ব্যবস্থাকে সব সমস্যার মূল হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, আমাদের যদি শিক্ষাটাই না থাকে তাহলে আমরা কি দিতে পারব আর কি নিতে পারব? 
ফখরুল বলেন, আমাকে অনেকে ভুল বুঝে বলেন, আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন? বিশেষ করে ছাত্ররা আমাকে বলে কেন নির্বাচনের কথা বলি। এখানে নির্বাচন নিয়ে কথা বলার কারণটা হচ্ছে একটাই, আমরা বিশ্বাস করি এবং আমি জানি যে কোনো নির্বাচিত সরকার কিন্তু অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো। নির্বাচন হলে সব জায়গায় আমি যেতে পারি, কথা বলতে পারি। কিন্তু এখন নির্বাচন না হওয়ায় আমার সেই জায়গাটা নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, এখনই নির্বাচন করে ফেলতে হবে আমরা তা তো বলছি না। ন্যূনতম যে সংস্কারটা সেটা করে নিয়ে নির্বাচনটা করলে সমস্যাগুলো অনেকটা সমাধান হবে। সংস্কারের প্রস্তাব আসতে শুরু করেছে। আমার বিশ্বাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা খুব শীঘ্রই এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের ডাকবেন। এ বিষয়ে একটা সমাধানের দিকে আসবেন, আলোচনা হবে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা একটা জায়গায় পৌঁছব।
ফখরুল বলেন, প্রতিদিন এখন বিভিন্ন দাবি নিয়ে মিছিল বের হচ্ছে। তোমরা এতদিন কোথায় ছিলে বাবা? তখন তো একটা কথা বলার কেউ সাহস সুযোগ পাওনি। আর এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে সবাই নেমে গেছ। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেখানেও আজকে স্ট্রাইক হচ্ছে, রাস্তা-ঘাট বন্ধ, এটাতে লাভটা কার? এটাতে এদেশের এই সমাজের কোনো লাভ হবে না।
ফখরুল বলেন, আমরা সবাই ধৈর্য ধরে সামনের দিকে যাই। অনেক ত্রুটি আছে আমি বিশ্বাস করি, অনেক ত্রুটিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তুলে নিয়ে এসেছে। একটা জঞ্জালের মধ্যে এসেছে। একটা ধ্বংসপ্রাপ্ত জঞ্জাল। আমার ধারণা ছিল না যে, এত খারাপ হয়ে গেছে। এই পরিবর্তনের পর আমরা যখন দুই-একটা জায়গায় খোঁজ-খবর নেই, অফিস-আদালতে খোঁজ-খবর নেই, একটা ভয়াবহ কা- দুর্নীতি-চুরি ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া আর কোনো চিন্তা নেই সরকারি আমলাদের মতো বলতে আমি বাধ্য হলাম দুঃখিত। এই অবস্থার পরিবর্তনটা তো একদিনে হবে না, দ্রুত হবে না। সবাই ধৈর্য ধরেন, গণতান্ত্রিক একটা কাঠামো খাড়া হোক, সেই কাঠামো খাড়া হলে নিশ্চয়ই আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, কখনো  ধৈর্য হারাবেন না, কখনো আশা হারাবেন না। আমরা কেনো জানি না আমাদের প্রত্যাশা অনেক কিন্তু ধৈর্য্য একেবারেই কম। এই তো কয়েক মাস হয়েছে এর মধ্যে সব পাগল হয়ে গেছে। দেখেন আমাদের এই সরকার অনেক ভুল-ত্রুটি করছে, ভুল তো করবেই। কারণ তারা সরকারে ছিল, রাজনীতি করেনি তারা তো রাজনীতি জানে না, বুঝে না তাই না। তাই তাদের তো সেই সময় দিতে হবে।
ফখরুল বলেন,  অতি বিপ্লবী হয়ে সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যাবে না। এই মুহূর্তে সব বদলে দেব বা এটা করে ফেলব তা হয় না। ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হয়। সব সময় একটা কথা মনে রাখতে হবে, হঠকারিতা করা যাবে না। অতি বিপ্লবী কোনো চিন্তা ভাবনা নিয়ে সমাজে আরও অস্থিরতা, চরম একটা অবস্থা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই কাম্য হবে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করাটা ঠিক হবে না।

এই কথাটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। রোমান্টিসিজম মানে শুধু প্রেম নয় বিপ্লবের প্রতি প্রেম। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমি সব পাল্টে দেব, এই মুহূর্তে সব দখল করব, অন্যায় রোধ করব, এটা হয় না। আপনাকে ধাপে ধাপে তা করতে হবে।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, পলিসি গবেষক ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শিক্ষানুরাগী আফরোজা খান রীতা, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, সোশ্যাল এক্টিভিস্ট সাইয়িদ আবদুল্লাহ, জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের  সাধারণ সম্পাদক জহির দিপ্তী, পাঠাগার কমিটির নেতা ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহী, কাজী জহিরুল ইসলাম বুলবুল, হাসান আল আরিফ প্রমুখ।

×