ছবি : সংগৃহীত
খুনি হাসিনার পদত্যাগ চেয়েছিলাম, সেখানে একটা দলই পদত্যাগ করেছে শুধু তাই না, একটা আধিপত্যবাদেরও পতন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মু শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
তিনি বলেন, আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর যখন একটা সুন্দর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান ছিল, সেই সময় খুনি হাসিনা লগি বৈঠার নির্দেশ দিয়ে সাধারণ মানুষদেরকে পিটিয়ে পল্টনসহ সারাদেশে ৩৩ জনকে যে হত্যা করেছে, সেখান থেকে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করার মধ্য দিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যক্রম শুরু করা উচিত। দ্বিতীয় হচ্ছে, ২০১৩ সালের ৫ই মে ইসলাম বিদ্বেষী, আলেম বিদ্বেষী এবং দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌম বিদ্বেষী সেই সরকার, তৎকালীন সময়ে আলেমদের প্রতি তারা যে নেককারজনক হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেছিল সেটার বিচার দিয়ে যদি শুরু করা যায়, তাহলেও একটা সুন্দর বিনির্মাণ করা, বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, সেটিও আমাদের পক্ষে সম্ভব।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৮ সালে মাত্র কিছুদিনের মধ্যে তারা সর্বপ্রথম টার্গেট করেছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে চৌকস বাহিনী হিসেবে খ্যাত আমাদের সেই সময়ের যে বিডিআর বাহিনী ছিল, যে বাহিনী আমাদের প্রত্যেকটা সীমান্ত এলাকা পাহারা দেওয়ার জন্য জীবনবাজি রেখে দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের মানুষকে সামনে রেখে তারা ভূমিকা পালন করতো। সর্বপ্রথম তারা আমাদের সেই চৌকশ এবং অত্যন্ত দেশপ্রেমিক, বুদ্ধিমত্তা এবং তারা দেশ স্বাধীনতার পক্ষের একটা চেতনা যারা লালন করতো, তাদেরকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত সেদিন তারা গ্রহণ করেছে।
সুতরাং সেদিন বিডিআর বিদ্রোহ না মূলত বিডিআর হত্যাকাণ্ড তারা পরিচালনা করেছে এবং আপনাদের মনে থাকার কথা, সেই দিনের ঘটনার প্রেক্ষাপট ধরে যদি আজকে শেখ হাসিনাকে সামনে নিয়ে এসে বিচারে দাঁড় করানো যায় তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে, এই যে প্রতিদিন এখন আমাদের সীমান্তগুলোতে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে এবং অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র অযথাই কিছু কথা আমাদের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের আলু বন্ধ করে দিবে, আমাদেরকে পেঁয়াজ বন্ধ করে দিবে, আমাদেরকে রসুন বন্ধ করে দিবে, আমাদেরকে কাঁচামরিচ বন্ধ করে দিবে, আমাদেরকে ডিম বন্ধ করে দিবে, আমার কাছে খুব হাস্যকর মনে হয়।
তিনি আরো বলেন, যে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টে জীবনবাজি রেখে গুলির মুখে দেশ এবং খুনি হাসিনার পদত্যাগ চেয়েছিলাম, সেখানে একটা দলই পদত্যাগ করেছে শুধু তাই না, একটা আধিপত্যবাদেরও পতন হয়েছে। সেরকম একটা রাষ্ট্রকে এখন চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ আর রসুনের হুমকি দিয়ে আমাদেরকে দমিয়ে রাখাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
১৬ বছরের ঘটনার ইতিহাস কি মাত্র পাঁচ মাসে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা! ১৬ বছরের ঘৃণ্য, নেককারজনক ঘটনা কি পাঁচ মাসে ইতিমধ্যে কবর রচনা হয়ে যাওয়ার কথা! আমাদেরকে ১৬ বছরের ইতিহাস ভুলিয়ে দিয়ে পাঁচ মাসের ইতিহাসে আমাদেরকে ঢুকিয়ে দিতে বাধ্য করছে যারা, তাদের বিরুদ্ধেও লড়াই আমাদের করতে হবে।
আমাকে মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করে, কেউ কেউ বলে ভাই অমুক জায়গায় এটা ঘটেছে, ভাই অমুক জায়গায় এটা ঘটেছে, বহু জায়গায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, যারা ঘটিয়েছে তারা বিগত ১৬-১৭ বছরের সেই দোসরদের মধ্যে থাকা লোকেরা, কেউ কেউ এখন ছদ্দবেশে আমাদের মধ্যে ঢুকে, আমাদের ঐক্য এবং আমাদের ভাবমর্যাদা নষ্ট করার ষড়যন্ত্র তারা করছে।
প্রয়োজনে আবার জীবন দেবে, হ্যাঁ জীবন দিব অর্থনীতির জন্য, হ্যাঁ জীবন দেব সুন্দর সংস্কৃতি বিনির্মাণের জন্য, জীবন দেব সুন্দর পররাষ্ট্র নীতিমালা স্থায়ী করার জন্য, কিন্তু আর নতুন করে স্বৈরাচার দমনের জন্য জীবন দেবো না।
এমন একটা রাষ্ট্র বিনির্মাণ করব যেখানে আর কোন স্বৈরাচারী আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঘোষণা দিতে পারবে না।
মো. মহিউদ্দিন