ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য সহজ নয়: তারেক রহমান 

প্রকাশিত: ২০:২৭, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য সহজ নয়: তারেক রহমান 

ছবি: জনকণ্ঠ

আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য এতো সহজ নয়, জনগন ম্যাটারস’ এই কথা স্মরণে করিয়ে দিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের জনগনের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছে তারেক রহমান।

রোববার বিকালে বিএনপির আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন,  ‘‘ আমি আজকে গত কয়েক মাস ধরে বলছি, সামনের নির্বাচন এতো সহজ নয়… আপনারা যত সহজ ভাবছেন। নিজের মনে যতই বড়াই করুন আরে বিএনপির তো শাখা-প্রশাখা একদম গ্রাম পর্যন্ত আছে… অন্যদের কি আছে? তাই তো বড়াই করছেন…নো। থাকতে পারে আপনার শাখা-প্রশাখা…. আমাদের নেতা-কর্মীরা তৈরি করেছেন সেই শাখা-প্রশাখা… গ্রাম পর্যন্ত দলকে নিয়ে গেছে, ওয়ার্ডে ওয়োর্ডে দলকে নিয়ে গেছে।”

‘‘কিন্তু তারপরেও জনগন ম্যাটারস, জনগন ম্যাটারস। সেই জনগন হচ্ছে আমাদের শক্তি, জনগন হচ্ছে আমাদের সমর্থন, জনগন্‌ হচ্ছে আমাদের শক্তি। জনগন সাথে না থাকলে জনগন ৫ আগস্ট বুঝিয়ে দিয়েছে।কাজেই আমরা যদি ভুল করি জনগন আবার কোনো একটা কিছু বুঝিয়ে দেবে… তখন কিন্তু পস্তাতে হবে, তখন কিন্তু হায় হুতাশ করতে হবে।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান দৃঢ়তার কন্ঠে বলেন, ‘‘ এখনো সময় আছে… আসুন, আসুন, আসুন, আমরা জনগনের পাশে থাকি, জনগনের সাথে থাকি।”

‘‘যারা এমন কিছু করবে যা আপনাকে-আমাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, যা আমার দলকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে, যা আমাদের দল ক্ষতিগ্রস্থ হবে… আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলবো, আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। আজকে শহীদ জিয়ার ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে যদি শহীদ জিয়াকে সত্যিকারভাবে আমাদের স্মরণ করতে হয়, যদি শহীদ জিয়াকে সত্যিকারভাবে সন্মান জানাতে হয়… আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার জন্য দোয়া করছি সুস্থতার জন্য তবে দেশনেত্রী সবচাইতে খুশি হবেন যখন দেখবেন জনগন সমর্থন দিয়েছে বিএনপির প্রতি… বিষয়টি খালেদা জিয়ার সৈনিক হিসেবে আপনাদের উদ্দেশ্যে বলা দরকার….।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা কে ছোট নেতা, কে গ্রামের নেতা, কে ইউনিয়নের নেতা, কে বড় নেতা, কে বিভাগীয় নেতা, কে কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টা এটি নয়। বিষয়টি হচ্ছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে।”

‘‘আমাদেরকে এমনভাবে দাঁড়াতে হবে যাতে জনগন বুঝে যেন আমরা তাদের সাথে আছি, জনগন বুঝে যেন আমরা তাদের পাশে আছি। জনগন বুঝে যে জনগন যেভাবে চায় আমরা সেইভাবেই আছি… জনগনের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা সেইভাবে তাদের পাশে আছি… আজকে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের শপথ, এই হোক আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। সকালে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন।

‘সর্ব পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত চাই’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ রাষ্ট্রের সরকারের প্রতিটি পর্যায়ে যেখানে নির্ধারিত হবে সেখানে… সেটি জাতীয় সংসদ হোক, সেটি পৌর সভা হোক, সেটি ইউনিয়ন পরিষদ হোক যেটিই হোক না কেনো? অর্থা জবাবদিহিতা …ভোটই একমাত্র, ভোটার একমাত্র… জবাবদিহিতা রাষ্ট্রের সমাজের সকল স্তরে যদি আমরা জবাবদিহিতা তৈরি করতে পারি তাহলে ধীরে ধীরে আমরা এগুতে সক্ষম হব।”

‘‘সরকার জনগনের কাছে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য থাকে প্রতিটি কাজের জন্য তাহলেই একমাত্র জনগনের যে ক্ষোভ, দুর্দশা লাঘব করা সম্ভব হবে। জনগনের কথা, জনগনের ইচ্ছা, জনগনের আকাংখা প্রতিফলিত হবে সরকারের কাজের মাধ্যমে।”

‘নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ’

বিএনপির নেতা-কর্মীদের ১৭ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন, মামলা-কারাভোগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘‘ আমরা মোটামুটি একটা গড় হিসেবে জানি, বিএনপির ৬০ লক্ষ নেতা-কর্মীর নামের বিভিন্ন মিথ্যা-গায়েবি মামলা আছে। শুধু মাত্র জুলাই-আগস্ট মাসে যে আন্দোলন জনগনের যে আন্দোলন সেখানে বিএনপিরই প্রায় ৫‘শ মতো নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন, শত হাজারের মতো নেতা-কর্মী বিভিন্নভাবে জখম হয়েছেন। আমরা বিএনপির নেতা-কর্মীরা যারা অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন ওই মোটর সাইকেলের বহরের যারা তারা কি অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে? অবশ্যই নয়।”

‘‘মানুষ হিসেবে হয়ত আমরা বিভ্রান্ত হতেই পারি কিন্তু যে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে এই মুহুর্তে আজকে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি সহকর্মীবৃন্দ আমি বিনীতভাবে আপনাদের কাছে করজোরে অনুরোধ করবো… এই আলোচনায় শুধু নয়, সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার যত কর্মী-সৈনিক আছেন আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো দয়া করে ওই মোটর সাইকেলওয়ালাদেরকে ভিড় করতে দেবে না…, দয়া করে আপনারা শহীদ জিয়াউর রহমানের জানাজার চিত্রটা মনে করবেন এবং দয়া করে আপনারা বিভ্রান্তিকর কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।”

‘সবাই কি বলে?’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ সবাই বলে যে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, বিভিন্ন আলোচক বৃন্দও বলেন, যারা বিএনপি করেন না… দেশে একটি স্বাভাবিক সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা আছে সরকার গঠনের। আমি আপনাদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই? মোটরসাইকেলওয়ালাদের তাদের নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বা আমাদের কিছু নেতা-কর্মী বিভ্রান্ত হয়ে যদি এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যেখানে অন্য কেউ সরকারন গঠন করলো। তখন কি আপনি মনে করেন আপনি ভালো থাকতে পারবেন? বিএনপির নেতা-কর্মীরা কি ভালো থাকতে পারবে?”

এই সময়ে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিউশন মিলনায়তনে কর্মীরা সমস্বরে বলে ‘না’।

‘‘কারা চলে যাবে কি চলে আসবে আমরা জানি না। তবে তা আমাদের কারো জন্য ভালো হবে না। কোনো কারণে যদি অন্য কেউ সরকার গঠন করে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আপনার এতোটুকু চিন্তা এতোটুকু সেন্স থাকতে হবে অন্য কেউ যদি সরকার গঠন করে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে হোক,আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে হোক সেটি কি দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে?”

নেতা-কর্মীরা আবারো সমন্বরে বলেন, ‘না’।

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই যে, আপনারা দৃঢ়ভাবে না বললেন সেটা বুঝে শুনে বলেছেন। আপনারা যদি বুঝেশুনে না বলে থাকেন তাহলে সঠিকই বলেছেন। তাই যদি ঠিক হয় এখনো আামাদের কাছে সময় আছে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর, এখনো আমাদের কাছে সময় আছে মানুষ যেভাবে চায় সেভাবে চলার জন্য। দিনশেষে কিন্তু রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আপনাকে এই জনগনের কাছে, এই মানুষটার কাছে, এই ভোটারটার কাছে যেতে হবে।”

‘‘দুইদিন আগে আমি একজন ব্যক্তির টকশো দেখছিলাম… সেই আলোচক কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন যে এখনো বুঝে উঠতে পারছি না যে স্বৈরাচার পালিয়ে গিয়েছে তারা আবার মাথাচাড়া দেবার চেষ্টা করছেন। করতেই পারে তারা। কিন্তু তারা যদি ভোটের মাঠে নামেন কি চেহারায় মানুষের সামনে হাজির হবে… এই জুলাই-আগস্ট মাসে ২ হাজার মানুষকে যে হত্যা করেছে, প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষকে জখম করেছে, ইউনিসেফের বক্তব্য অনুযায়ী প্রায় ৬৪জন শিশুকে তারা হত্যা করেছে.. সেই জবাব কিন্তু তাদেরকে মানুষের কাছে দিতেই হবে।”

বিএনপির নেতা-কর্মীদেরও জনগনের কাছে জবাব দিতে হবে উল্লেখ করে তারেক বলেন, ‘‘ আমরা যদি সেইদিন আসা পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো কিছু করে তখন জবাব আপনাকেও দিতে হবে… যখন আপনি ভোটের  ভোটের সময়ে মানুষের কাছে যাবেন তখন জবাব দিতে হবে… তাই না।”

‘‘ওই সময়ে সে যদি বলে ওই মিঞা এই লোক এসে আমার সাথে এই ব্যবহার করেছে বা আমার প্রতি এই অন্যায়-অবিচার করেছে তোমার দলের কর্মী… তখন কি আপনি যদি বলেন, সে আমার কেউ না। তাতে কি ওই লোক মেনে নেবে। মেনে নেবে না। আমাদের সামনে পরিস্কার উদাহরণ আছে জনগন যখন ক্ষিপ্ত হয়, জনগন কিভাবে স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। এখনো এসব এই ধারা জলজল করছে। দিনের শেষে জনগনই সব। আমরা সকলে সেই জনগনের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছি, সমর্থন পেতে হলে ভালোভাবে মানুষ সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, কেনো আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে চোখ বন্ধ করে রাখবেন?”

‘কিছু কিছু রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে’

তারেক রহমান বলেন, ‘‘ নিজেকে যত বড় মনে করি না কেনো, জনগন যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নাম বলব না কিছু কিছু রাজনৈতিক শক্তি যেই হোক না কেনো, ছোট-বড় হোক না কেনো তারা বিভিন্নভাবে আমাদের বিপক্ষে এই মোটরসাইকেলওয়ালাদের কিছু কাজ কর্মের কারণে আমাদের নেতা-কর্মীদের যুক্ত করে কিছু কিছু কথা বলার চেষ্টা করছে। আমাদেরকে এই ব্যাপারে সর্তক ও শক্ত হতে হবে…।”  

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া কবি আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্ অধ্যাপক কামরুল আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য্ অধ্যাপক মামুন আহমেদ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

শিহাব

×