ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

শহীদ জিয়াকে নিয়ে আবেগঘন কবিতা পড়লেন ডা. জুবাইদা রহমান

মাহবুব নাহিদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক 

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

শহীদ জিয়াকে নিয়ে আবেগঘন কবিতা পড়লেন ডা. জুবাইদা রহমান

ছবি: সংগৃহীত

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ডা. জুবাইদা রহমানের আবেগ যেন এক নিঃশব্দ ভালোবাসার স্পর্শ। তাঁর আদর্শ, ত্যাগ আর দেশপ্রেমের গল্পে বড় হয়েছেন, তাঁকে হৃদয়ে লালন করেছেন। শৈশবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সান্নিধ্য পাওয়ার সেই দিনগুলো ডা. জুবাইদা রহমানের স্মৃতির মনিকোঠায় চির অম্লান।

জাতীয় শিশু সংগঠনের সদস্য হিসেবে তাঁর স্নেহ ছায়ায় বেড়ে ওঠা এবং ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা বিকাশে শহীদ জিয়ার প্রবর্তিত এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে জোবাইদা কেবল নিজের প্রতিভা বিকাশ করেননি, বরং একজন আদর্শ মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষাও পেয়েছিলেন। শহীদ জিয়ার শুদ্ধ চিন্তা, আদর্শ এবং মানবিক স্নেহবোধ তাঁকে আজীবনের জন্য প্রভাবিত করেছে, যা আজও তাঁর জীবনের পথে আলোর মশাল হয়ে রয়েছে।


গতকাল জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জুবাইদা রহমান যেন পুরো জাতির মনের কথা বললেন। বাবার প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে কবিতার প্রতিটি শব্দে ফুটে উঠল তাঁর অন্তরের গভীর ভালোবাসা, তাঁর দৃষ্টিতে জ্বলজ্বল করল এক নীরব প্রতিজ্ঞা—এই মহান নেতার আদর্শ ধারণ করেই এগিয়ে যাবেন তিনি।  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন-জেড আর এফের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা: জুবাইদা রহমান শহীদ জিয়ার ৮৯ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন-জেড আর এফের আলোচনা সভায় নিম্নোক্ত কবিতাটি পাঠ করেন-

তুমি গণতন্ত্রের প্রতীক
জনতার অধিকারের অতন্দ্র প্রহরী তুমি
অসাধারণ সাহসী মূর্তি
তুমি নেতা, তুমি কঠোর পরিশ্রমী
দিন কেটেছে তোমার সবার চিন্তায় বিরামহীন
তুমি সূর্যরশ্মি, চাঁদের আলোর মতো;

তাই আজ বহুদূরে থেকেও আমরা তোমার আলোয় আলোকিত 
তুমি বিদ্রোহী, তুমি আশার আলোয় আরোহী
তুমি বিজয়ী, তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী
তুমিই স্বাধীনতা।


"তুমি গণতন্ত্রের প্রতীক" দিয়ে শুরু হওয়া কবিতাটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবনের গভীর তাৎপর্যকে ধারণ করে। গণতন্ত্র রক্ষায় তাঁর অটুট প্রতিজ্ঞা, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই, এবং জাতির প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা—সবকিছুই প্রতিটি লাইনে স্পষ্ট। তাঁর কঠোর পরিশ্রম এবং ত্যাগ যেন তাঁকে জনতার হৃদয়ে এক অমর প্রতীকে পরিণত করেছে। "তুমি সূর্যরশ্মি, চাঁদের আলোর মতো" লাইনটি শহীদ জিয়াকে এমন এক আলোকিত নেতার প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করে, যিনি মৃত্যুর পরেও তাঁর কর্মের আলো দিয়ে একটি জাতিকে পথ দেখাচ্ছেন। বিদ্রোহী স্বভাবের নেতা হয়েও তিনি ছিলেন আশার বাতিঘর, যাঁর দৃঢ়তা একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছে। 

"তুমি বিজয়ী, তুমি মৃত্যুঞ্জয়ী" লাইনগুলো তাঁর আত্মত্যাগের মহিমাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। স্বাধীনতা এবং স্বপ্নকে ধারণ করে, তিনি একটি দেশের জন্য যা কিছু করেছেন, তার মাধ্যমে তিনি মৃত্যুকে অতিক্রম করেছেন। এই কবিতার প্রতিটি শব্দ যেন ডা. জুবাইদা রহমানের হৃদয়ের গভীর আবেগ ও শ্রদ্ধার প্রকাশ। শহীদ জিয়ার আদর্শ এবং তাঁর প্রতি জাতির ভালোবাসা এভাবে ফুটে ওঠে—তিনি কেবল একজন মানুষ নন, তিনি একটি প্রেরণা, একটি আলেখ্য উপাখ্যান, একটি স্বপ্নের বাতিঘর। কবিতার প্রতিটি স্তবক তাই এক অশ্রুভেজা স্মৃতিচারণা, যা তাঁর কর্ম ও ত্যাগের মহত্ত্বে আমাদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে। 


ডা. জুবাইদা রহমান একজন প্রতিভাবান চিকিৎসক, মানবতাবাদী এবং প্রখর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী, যাঁর জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর পিতা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ছিলেন দেশের নৌবাহিনীর প্রধান, আর এই পরিবারিক ঐতিহ্য তাঁকে দায়িত্বশীল ও নিবেদিতপ্রাণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে তাঁর এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন, বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকার এবং লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে স্বর্ণপদকসহ এমএসসি অর্জন—সবই তাঁর মেধা ও পরিশ্রমের প্রতীক।অন্যায়ভাবে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়, দেওয়া হয় মিথ্যা মামলা।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে তাঁকে তাঁর দেশের মাটি থেকে দূরে রাখা হলেও, তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য দূর থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বমহামারিতে তাঁর কার্যক্রম, বন্যা বা দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি তাঁর উদ্যোগ, এবং চিকিৎসা সহায়তার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে মানবতার সেবা কোনো সীমানায় আবদ্ধ নয়। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন-জেড আর এফ এবং সুরভী নামক একটি সংগঠনের মাধ্যমে ডা: জুবাইদা রহমান বাংলাদেশের মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন। করোনাকালীন সময়ে দেশের মানুষের প্রতি তারেক রহমান ও জুবাইদার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অতি তৎপরভাবে। জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান ও সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর নির্দেশনায় আয়োজিত হয় ভার্চুয়াল বিজ্ঞান মেলাসহ নানা ধরনের উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড। 

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের শক্তিশালী একজন ধারক হিসেবে তাঁর নেতৃত্ব, মানবিক গুণাবলি, এবং সাহসিকতা আজকের বাংলাদেশে আরও বেশি প্রয়োজন। ডা. জুবাইদা রহমান শুধু একজন চিকিৎসক নন; তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, যাঁর হৃদয়জুড়ে দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। শহীদ জিয়াকে নিয়ে তাঁর আবেগময় উচ্চারণ—"তুমিই স্বাধীনতা"—এই কথাগুলোই তাঁর বিশ্বাস ও লক্ষ্যকে স্পষ্ট করে। পরিবর্তিত বাংলাদেশে পরিবর্তনের লড়াইয়ে, একটি সুন্দর বাংলাদেশের নির্মাণে ডা. জুবাইদা রহমানের মতো প্রজ্ঞাবান জ্ঞানী মানুষদের আমাদের বড্ড প্রয়োজন।

শিহাব

×