ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

রাজনৈতিক দল গুলোর মুখোমুখি হওয়া যাবে না: ভিপি নুর

স্টাফ রির্পোটার, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

রাজনৈতিক দল গুলোর মুখোমুখি হওয়া যাবে না: ভিপি নুর

ছবি: সংগৃহীত

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক (ভিপি নুর) বলেছেন, শুধু একটি নির্বাচনের জন্য এবং একটি ভোটের জন্য এই গণঅভ্যুত্থান হয়নি। রাষ্ট্র পুনর্গঠন, মেরামত এবং সংস্কারের মাধ্যমে গণ-আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তাই আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কার অনিবার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি বিএনপি বিএনপির লাইনে, জামায়াতে ইসলামি তাদের লাইনে, ইসলামী আন্দোলন ও গণঅধিকার পরিষদ নিজেদের লাইনে চলছে। অনেক জায়গায় মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে। এটা শুভ লক্ষন নয়। অশুভ লক্ষন।

আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা কমিটি আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


ভিপি নুর বলেন রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি হলে অর্ন্তবর্তী সরকার ব্যর্থ হবে। আর পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পুনঃবাসন ঘটবে। যদি কেউ মনে করেন শেক হাসিনা চলে গেছে, আওয়ামী লীগ চুপচাপ আছে তার মানে এটা না আওয়ামী লীগ হাওয়া হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে তাদের তিন কোটি মানুষকে কোটিপতি বানায় দিছে। তারাই আওয়ামী লীগ তারাই সুযোগ পেলে মাঠে নামবে। এটা আমরা চাই না। বর্তমান রাজনৈতিক দল গুলো বিভাজন হলে আওয়ামী লীগ শক্তি পাবে। তাই নুর বলেন, অন্তঃবর্তিকালিন এই সরকারকে কোন ভাবেই ব্যথ হতে দেয়া যাবে না। এ জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে এসে এই সরকারকে সহযোগীতা করার আহবান জানান তিনি।


নুর আরও বলেন প্রশাসনে দলবাজি চলবে না। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা রাজনৈতিক দলের বাহিরে থাকবেন। চিকিৎসকরা মানুষের সেবা করবেন, শিক্ষকরা জ্ঞান দিবেন শিক্ষার্থীদের। কিন্তু আমরা কি দেখতে পাচ্ছি সবাই কোন না কোন রাজনৈতিক দলে নাম লিখেছে। যা চলবেনা। এ জন্য সকল সেক্টরকে ঢেলে সাজাতে হবে। নুর বলেন,যে ফ্যাসিস্ট সরকার গণ-অভ্যুত্থানে এতগুলো মানুষকে হত্যা করে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে, গুলি করেছে এবং বাংলাদেশের মতো স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রকে বিদেশি তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে; সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার নৈতিক ভিত্তি এবং নৈতিক অধিকার নেই। তাদের এই বাংলার মাটিতে ফিরতে দেয়া হবে না।


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আইনি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সকল বৈধতাদানের জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে নুরুল হক নুর বলেন, বিগত দেড় দশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের যে দুঃশাসন সেটা কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে একটি সংকটে ফেলেছিল। যার ফলে এই গণ-অভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। এই গণ-অভ্যুত্থানের আইনি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সকল বৈধতাদানের জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন।তিনি আরও বলেন, একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর সংবিধান পরিবর্তন হয় এবং পূর্বের সংবিধান স্থগিত করা হয়। এই জায়গায় যদি ঘোষণাপত্র দেওয়া হয় তাহলে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা শেষে সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। সেটার অধিকাংশ বাস্তবায়নের পর তারা নির্বাচনের পথে হাঁটবে।নুর আরও বলেন, বর্তমান সরকারকে গতিশীল করার জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার আহ্বান জানাচ্ছি। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে এই নির্বাচন সবচেয়ে মডেল এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।


গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, গণঅধিকার পরিষদ বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী একটি রাজনৈতিক দল। সামরিক বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা সরকারের আনুগত্য কোনো দল নয়। গণঅধিকার পরিষদ আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া একটি দল। বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। তাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।


সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)'র সিনিয়র সহ সভাপতি ফারুক হাসান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন।


গণঅধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় সংসদের সহ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সোহাগ হোসাইনের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের উচ্চতর সদস্য হানিফ খান সজিব, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ মোন্নাফ, বিভাগীয় সমন্নয়ক ও সহ দপ্তর সম্পাদক ইব্রাহীম খোকন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, যুব অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল হক, গণ অধিকার পরিষদ নীলফামারী শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা গনঅধিকার পরিষদের সভাপতি তাইজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন স্বাধীন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসাইন, উপজেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুল আজিজ ও জলঢাকা পৌর ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আশিকুজ্জামান আশিক প্রমুখ। এরআগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে গণঅধিকার পরিষদ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে মিলিত হন।

শিহাব

আরো পড়ুন  

×