ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে হতাশ লেগেছে আমাদের

প্রকাশিত: ০১:৪৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০১:৫৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে হতাশ লেগেছে আমাদের

ছবি : সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি শুনে আমাদের কাছে অত্যন্ত হতাশ লেগেছে বলে মন্তব্য করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য প্রধান উপদেষ্টার সাথে রাজনৈতিক দলের মিটিং শেষে মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, ‘‘প্রধান উপদেষ্টা যখন বলেছেন, আপনারা আমাদের কাছে আসলেই আমরা সাহস পাই। যখন আপনারা থাকেন না, আমরা একাকিত্ববোধ করি। এর পিছনে আসলে কি কারণ রয়েছে? 

তার একটি কারণ আমার কাছে মনে হলো, প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বললেন, ছাত্ররা হঠাৎ করে আমার কাছে একটি দাবি নিয়ে আসলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে, সেখানে আপনাকে থাকতে হবে। আমি তাদেরকে সাথে সাথে বললাম, যে সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং বিপ্লবে যারা অংশ নিয়েছে, সেই শক্তির সাথে আলাপ আলোচনা ছাড়া, আমি এই ধরনের ঘোষণা পাঠ করতে পারবো না। এই কথা শোনার পরে, দলের প্রতিনিধি যারা ছিলেন তারা বক্তব্য রেখেছেন। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা যেটি বলেছি, এই যে গণঅভূত্থান, এই গণঅভূত্থান কিভাবে সংঘটিত হলো? এটা কোন পরিকল্পিত আন্দোলন ছিল না, পরিকল্পিত বিপ্লব ছিল না।

২০১৮ সালের যে ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলন, একটি সফল ছাত্র আন্দোলন পরবর্তীতে শেখ হাসিনার যে প্রতারণা, তিনি প্রতারণা করে ২৪ সালে সেই সফল আন্দোলনকে ব্যর্থ করার একটি নস্যাৎ পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের যে পরিপত্র সেটি বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। একটা পর্যায়ে যখন শেখ হাসিনার সরকার, পুলিশ, পেটোয়া বাহিনী, গুলি করে, নির্মমভাবে শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা করে, তখন এই আন্দোলন একটি রাজনৈতিক, সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।

সুতরাং এই ঘোষণাপত্রে অবশ্যই ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন, এবং ২৪ সালে যে দাবিকে কেন্দ্র করে এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই দাবি অবশ্যই ঘোষণাপত্রে সংযুক্ত করতে হবে, প্রধান উপদেষ্টাকে আমরা এই দাবি গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে জানিয়েছি।

একই সাথে আমরা এটি বলেছি যে, ১৮ সালের যে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, সেই নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা, তারা ২৪ সালের গণঅভূত্থানে ভূমিকা রেখেছে, শহীদ হয়েছে, আহত হয়েছে, সুতরাং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ভূমিকাও এখানে উল্লেখ থাকতে হবে।

আমরা একই সাথে এই প্রস্তাব দিয়েছি, এই যে জুলাই বিপ্লব, এটি একটি ধারাবাহিক আন্দোলনের ফসল। সুতরাং দীর্ঘ ১৫ বছরের লড়াইয়ে যে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা, গুম, খুন, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে, একই সাথে এই ১৫ বছরে যে সকল সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের অবদান স্পষ্টভাবে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “শুধুমাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন হয়নি। এটি একটি ধারাবাহিক সংগ্রাম ছিল এবং একটা পর্যায়ে গিয়ে হাসিনার পতন নিশ্চিত হয়েছে, সেই দাবি আমরা স্পষ্ট করেছি। যে প্রত্যেকটা দল, সংগঠন এবং বিপ্লবে যারা অংশ নিয়েছে, শুধুমাত্র এই দুই মাস বা এক মাস না, ১৫ বছর ধরে যারা সংগ্রাম করেছে, সেই সকল সংগঠন এবং দলের, প্রত্যেকের অবদান স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এইখানে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল প্রায়, এই সরকারের সমালোচনা করেছে, আজকে দুপুর দুইটার সময় ঘোষণাপত্র পাঠানো হয়েছে, প্রায় প্রতিটি দল প্রশ্ন করেছে, এই উদ্যোগ কি আসলে সরকারের পক্ষ থেকে? এই যে ঘোষণাপত্র আপনারা তৈরি করেছেন, এইটা কি সরকার তৈরি করেছে, নাকি ছাত্ররা তৈরি করেছে, নাকি কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দিয়েছে?

সরকার এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট বক্তব্য পেশ করেনি। আমরা সর্বশেষ যেটি বলেছি, সেটি হলো জাতীয় ঐক্য এবং সংহতি ধরে রাখতে হবে। এই যে অভ্যুত্থানে আপনারা দেখেছেন, শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী, যেভাবে ছাত্র জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে, সেই সকল পুলিশের সদস্য, র‍্যাবের সদস্য, বিজিবির সদস্য, যারা ছাত্র জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে, তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং একই সাথে আওয়ামী লীগ যেহেতু গণহত্যা চালিয়েছে, বিচার শেষ হওয়ার আগে, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, সেই বিষয়ে আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি। একই সাথে যেহেতু প্রবাসীরা, আপনারা জানেন যে, প্রবাসীরা যেভাবে আন্দোলন করেছে, তাদের অবদান কিন্তু এইখানে উল্লেখ করা হয়নি, তাদের অবদান স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

আলেম সমাজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে, তাদের বিষয়েও কিন্তু এই ঘোষণাপত্রে যেটি খসড়া তারা গঠন করেছে, সেখানে উল্লেখ করা হয়নি, সেটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল যেটি বলেছে, সেটি হলো যে এটি রেন্ডমলি আসলে হবে না, সরকারের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে হবে।

যেমনিভাবে দশটা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, সুতরাং এই ঘোষণাপত্র তৈরি করার জন্য, আরেকটি জাতীয় কমিটি বা একটি জাতীয় কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশন প্রত্যেকটা স্টেকহোল্ডারের সাথে বসবে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্ত নিবে।

ঘোষণাপত্রের বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদ ইতিবাচক। আমরা চাই, যে আন্দোলন হয়েছে, এই আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস, এই ঘোষণাপত্রে উঠে আসুক। অন্যথায়, একপাক্ষিকভাবে যদি ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়, একপাক্ষিক ইতিহাস লিখিত হয়, তাহলে কিন্তু ওই শেখ মুজিবের ইতিহাস, আওয়ামী লীগের ইতিহাস, যেমনিভাবে জনগণ ছুড়ে ফেলেছে, ঠিক একইভাবে এই ২৪ এর গণঅভূত্থানের একপাক্ষিক ইতিহাস জনগণ ছুড়ে ফেলবে, এই কথাটি প্রধান উপদেষ্টাকে, আমরা সরাসরি জানিয়েছি।” 

মো. মহিউদ্দিন

×