ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১

ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন

বিএনপি মাঠ তৈরির কাজ করছে

প্রকাশিত: ০৫:০০, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০৫:১১, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

বিএনপি মাঠ তৈরির কাজ করছে

ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি যমুনা টিভি আয়োজিত “দাবি-দাওয়ার এই শহরে: সমাধান কোন পথে?” নামে শীর্ষক এক টকশোতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেত্রী ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন। তার কাছ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের সর্ম্পক, আগামীতে বিএনপির সাথে ভারতের কূটনীতি সর্ম্পক নিয়ে জানতে চাওয়া হয়।

প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়, বিএনপির স্পিরিট যেটা এখন, গতকালকে বলা হয়েছে, এ বছরের মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি। আপনারা প্রথমে একটা রূপরেখা চাইলেন, প্রফেসর ইউনুস একটা রূপরেখা দিলেন। প্ল্যান এ- বাই ডিসেম্বর ২০২৫,  প্ল্যান বি হচ্ছে জুন ২০২৬।

আপনারা তারপর থেকে বলছেন, আপনারা এ বছরের ভিতরেই চান, ভারতের সেনাপ্রধানও বলছেন, একটা নির্বাচন বা নির্বাচিত সরকার হলে এইসব টেনশন গুলো কমবে বা সহায়ক হবে। কারণ ভারতীয় সেনাপ্রধান বলছেন যে, আমাদের জেনারেল ওয়াকারের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ আছে এবং দুই দেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক খুবই ভালো। ফলে যে প্রশ্নটি ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম তুললেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে তাহলে ভারতের আপত্তি, নির্বাচনে সমাধান, আপনারাও নির্বাচনের সমাধান দেখেন, কারণ নির্বাচন হলে আসলে আপনারাই ক্ষমতায় যাবেন। ফলে আমাদের দেশে যেহেতু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আমাদের মাথায় খুব কাজ করে, ফলে ভারতের সঙ্গে বিএনপির কোন গোপন আতাত হলো কিনা? ভারতের সেনাপ্রধান পাবলিক প্লেসে সংবাদ সম্মেলন করে বললেন, আপনারাও প্রতিনিয়ত বলছেন, কোন যোগসূত্র আছে?

জবাবে ব্যারিস্টার ফারজানা শারমিন বলেন, এমন না যে ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্য শোনার পরে বিএনপি এটা বলছে। বিএনপি নির্বাচনের কথা শুরু থেকেই বলেছে। যে তিনটা নির্বাচন হয়নি, তখন থেকে বিএনপি বলছে, যে নির্বাচন হতে হবে বাংলাদেশে এবং মাস্ট। এটা সবারই চাওয়া। দ্রুতগতিতে নির্বাচন চাওয়াটা, তার মানে এটা না, যে কালকেই হতে হবে। কালকেই যদি নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনটা কিন্তু ক্রেডিবল, একসেপ্টেবল, বিশ্বের যে মানদণ্ড আছে, সেই মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে বলে আমি নিজেও মনে করি না, এটা কেউই মনে করে না।

কিন্তু নির্বাচন হতে হবে এবং নির্বাচন হওয়ার জন্য যেই পরিমাণ রিফর্মগুলো প্রয়োজন আছে, যেই স্ট্রাকচারাইজেশন এর প্রয়োজন আছে, যে জায়গাগুলো মেরামত করার প্রয়োজন আছে সেটা করতে হবে, তারপর নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি যেটা বলছেন যে বিএনপি আসলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে চায়, রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করার জন্য বিএনপি তার নিজের যে জায়গাটা তৈরি করা, সেটার জন্য তারা প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি, যে আমরা মানুষের কাছে গেলে মানুষজন আমাকে ভোটটা দেয়, সেটার জন্য যা করার, মাঠ তৈরির কাজ আমরা করছি।

কিন্তু ভারতের সেনাপ্রধান যে কথাটা বলেছেন, সেটার সাথে বিএনপির কোনো সর্ম্পক নেই। তিনি বলতেই পারেন তার একটা পারস্পেক্টিভ থেকে, তিনি একটা আলোচনার প্রেক্ষিতে কথাটা বলেছেন। তাদের একটা স্টেটমেন্ট হতেই পারে। বিএনপি যেটা ভবিষ্যতে করবে, বৈদেশিক সম্পর্কের জায়গাটাতে, একজন মানুষকে দিয়ে পুরো দেশটাকে কিনে ফেলা গেছে, ইন্ডিয়া যেটা করতে পেরেছে, এই জায়গা থেকে বিএনপি সরে আসার জন্য, যা যা করতে হয় তাই তাই করবে।

বিএনপি বৈদেশিক সম্পর্ক মেইনটেইন করবে, এটা সমানে সমানে। শেখ হাসিনাকে দিয়ে সেটা করানো গেছে যেটা ইন্ডিয়া চেয়েছে, ইন্ডিয়া কিন্তু ডিপ্লোমেসিতে জিতে গেছে। একটা দেশ চাইবে, আমি যতটুকু বেনিফিটেড হতে পারি। শেখ হাসিনা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য সেটা করে নাই, সে দিয়ে গেছে। সো এখানে ইন্ডিয়াকে তো আমি ছোট করে দেখতে পারবো না, কারণ সে তার দেশের বেনিফিটের জন্য যা করার সে সেটা করেছে।

কিন্তু বিএনপির স্ট্রাটেজিটা দ্যাট উইল বি টোটালি ডিফারেন্ট, আগেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবেই। যে আমার তোমার সাথে সম্পর্ক হবে, গিভ এন্ড টেকের। তুমি যেটা দেবে, আমার কাছ থেকে তুমি যদি কিঞ্চিৎ নিতে চাইলে, তোমাকে দিতে হবে।

বেগম জিয়ার বিএনপি অন্তত ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬, ২০০১ থেকে ২০০৬ দু’দফা ক্ষমতায় ছিল। এই দুই দফা ক্ষমতার সময় ভারত আমাদের প্রতিবেশী ছিল, ফলে ভারত জানে যে আসলে বিএনপির কূটনীতি, তার রাষ্ট্র পরিচালনা কি হবে, আপনারা এখন যেটা বলছেন, সেটাও বলছে। তারপরেও, ভারত যখন নির্বাচিত সরকারের কথাই বলে, তখন আসলে মনে হয়, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা প্রফেসর ইউনুসের সরকার অথবা ফারদিনদের আন্দোলন, সেটা নিয়ে তাদের এক ধরনের এলার্জি আছে, সেটা খুব স্পষ্ট। তার বিপরীতে তারা আপনাদেরকে নিয়ে যখন খানিকটা কমফাের্ট জোন প্রকাশ করে, সেইটা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় কিনা?

জবাবে তিনি বলেন, এই প্রশ্ন আপনি করতেই পারেন কিন্তু সেনাপ্রধানের একটা বক্তব্যেতে ভারত বিএনপিকে নিয়ে একটা কমফোর্ট জোনে চলে গেছে, সেভাবে আমি আসলে মনে করি না। বাট আমরা চাই, প্রত্যেকটা প্রতিবেশী রাষ্ট্র যারা আছে, তারা একটা কমফোর্ট জোনে থাকুক। তাহলে একটা দেশের জন্য কিন্তু উপকার হবে। কারণ আজকে ভারত বাংলাদেশের সাথে যে কাজগুলো করে যাচ্ছে, এই কাজগুলোকে দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে এলাও করেছি। এই জায়গাতে আমাকে চেক ইন ব্যালেন্স আনতে হবে।

কিন্তু তার মানে এইটা না, আমি ভারতকে এমন কিছু দিয়ে দেব, যার কারণে আবার, যা ঘটেছে ৫ তারিখের আগ থেকে আবার সেটা ঘটা শুরু করবে। কমফোর্ট জোন দেয়াটা হচ্ছে, কোন জায়গাটাতে তোমার সাথে আমার বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকবে, তোমার সাথে আমার রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকবে, তোমার সাথে আমার কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকবে, তোমার সাথে আমার নিরাপত্তার সম্পর্ক থাকবে। বাট আমি বাংলাদেশে আরেকটা শেখ হাসিনা তৈরি করতে দেবো না যে, তোমাকে বাংলাদেশ বিক্রি করে, তোমার কাছে দিয়ে দেবে।   

মো. মহিউদ্দিন

×