জামায়াত ইসলামের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে মর্মাহত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জামাত ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এদেশে দেশপ্রেমিক হলো শুধুমাত্র সামরিক বাহিনী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা একটি বাহিনী, যা কিনা পিপলস্ বাহিনী।জনগনের বাহিনী হয়ে ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে এবং এই বাহিনী গড়ে তুলেছে মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ই পি আর এর সৈনিক আফিসারেরা । তিনি আরো বলেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে কারোর সার্টিফিকেট দেবার প্রয়োজন নেই, তাদের অতীতে ভূমিকা, ‘৭১ এ ভূমিকা এবং বর্তমানে ভূমিকা- প্রত্যেকটি ভূমিকা সাক্ষ্য দেয় তারা সবসময় জনগনের পাশে ছিলো এবং ভবিষ্যতেও জনগনের পাশে থাকবে।
তবে জামায়াত ইসলামের এই বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য অবাক হয়েছেন। তিনি ভেবেছিলেন এখন একটা সুযোগ এসেছে , এই সুযোগে হয়তো জামায়াত ইসলাম ‘৭১ এ তাদের ভূমিকার জন্য জনগনের কাছে ক্ষমা চাইবে । তা না করে ৭১ এ তাদের ভূমিকা জাস্টিফাই করছে, দেশপ্রেমিক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।মেজর হাফিজ আরো বলেন, বিএনপি এতোদিন জামায়াত ইসলামকে মিত্র হিসেবেই গন্য করেছেন। জামায়াত ইসলামের উপর যখন ফ্যাসিস্ট বাহিনী অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছে তখন জামায়াতকে বিএনপি সহমর্মিতা জানিয়েছে ।
জামায়াত ইসলামকে যখন বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে, বি এন পি তখন “ধানের শীষ” দিয়ে তাদের নির্বাচন করার সুযোগ করে দিয়েছে । বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতকে মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়েছেন । বিএনপির অনেক নেতাকর্মী সেটা পছন্দ না করলেও দলের স্বার্থে তা মেনে নিয়েছেন। তার বিনিময়ে জামাত ইসলাম যখন সেনাবাহীকে একমাত্র দেশপ্রেমিক বলে উক্তি করেছে এতে আহত হয়েছেন মেজর হাফিজ ।
মেজর হাফিজ আরো বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য গড়ে উঠেছে ,জামায়াতের এমন বক্তব্যে সেখানে ফাটল ধরতে পারে । এ বিষয়ে জামায়াত যেনো ভবিষ্যতে আরো যত্নবান হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যমেজর হাফিজ আরো যুক্ত করেন, ১৯৭১ ছিলো সাধারণ মানুষের যুদ্ধ, যার ফলে ভৈাগোলিক পরিবর্তন হয়েছে, দেশের পতাকা বদল হয়েছে । এ মহান অর্জনকে ঢাকবার জন্য হয়তো কারোর ভূমিকা আছে বিশেষ করে ‘৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধীতা করেছিলেন তারা হয়তো নিজেদের কালিমা মুক্ত করার জন্য এই মহান স্বধীনতা যুদ্ধকেই অবমূল্যায়ন করার চেষ্ঠা করতে পারেন , যা অত্যন্ত দুঃখজনক ।
তিনি অবাক হন কারণ একটা সময় ১৯৪৭ এ সারা দেশের মানুষ পাকিস্তান চেয়েছিলো। সে সময়ও এই দল জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তানের বিরোধীতা করেছিলো। এরপর একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতা করেছিলো, বাংলাদেশের জনগনের বিরুদ্ধে তারাই অস্ত্র ধারণ করে যুদ্ধ করেছে, যা সকলেই অবগত। তারপরেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী দুঃসাশাসনের কারণে বিএনপি জামাতকে তাদের জোটে আশ্রয় দিয়েছে ।
বিএনপি চেয়েছিলো জামায়াত একসাথে রাজনীতি করবে এবং তারা অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নতুনভাবে এই স্বাধীন দেশটিকে গড়ে তোলার জন্য আত্ননিয়োগ করবে- এটাই ছিলো প্রতিটি বিএনপি কর্মীর এবং বেগম খালদা জিয়ার একান্ত চাওয়া ।
বিএনপি সব সময়ই জামায়াত ইসলামকে সহমর্মিতা এবং সমর্থন জুগিয়েছে,জোটে স্থান দিয়েছেনন এবং এখন পর্যন্ত বন্ধু বিবেচনা করে ।এতোকিছুর পরও এই মুহুর্তে যখন বিভিন্ন ভাবে বিএনপির প্রতি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, তখন জামায়াতে ইসলাম এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য করেছে যে জামায়াত দেশপ্রেমিক, আর শহীদ জিয়া দেশদ্রোহী ।
এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যকে বিএনপি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে ।
আফরোজা