ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা: দেশনেত্রীর সুস্থতা ও প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষা

মাহবুব নাহিদ

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ১০ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৪:০৮, ১০ জানুয়ারি ২০২৫

গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা: দেশনেত্রীর সুস্থতা ও প্রত্যাবর্তনের প্রতীক্ষা

ছবি: সংগৃহীত

লৌহ মানবী মার্গারেট থ্যাচার কিংবা মাদার তেরেসা হয়ে মেরি তেরেসার সংগ্রামের গল্প যেমন বিশ্ববাসীর জানা, তেমনি অজানা নয় বেগম খালেদা জিয়ার অবিচল লড়াইয়ের ইতিহাস। গণতন্ত্রের মা খ্যাত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু একটি নাম নন, তিনি একটি অধ্যায়।

অগণিত মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত এই নেত্রীর প্রতিটি পদক্ষেপ যেন এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দেয়। সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে দৃশ্যপটের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা খালেদা জিয়ার সেই মুহূর্তগুলোর কথা কেউই ভোলেনি। বন্দী জীবনের পরও তাঁর মুখে ছিল আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি, যা অনুপ্রাণিত করে কোটি জনতাকে।


ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পড়ে মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাত্রার দিনটি ছিল এক অন্যরকম আবেগের অধ্যায়। কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রা করার সেই দৃশ্য দেখে কোটি জনতা রাস্তায় নেমেছিল। কেউ দেখেছে, কেউ দেখেনি—তবুও সেই গাড়ির এক ঝলক দেখা যেন জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ হয়ে ধরা দিয়েছিল। রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের চোখে-মুখে ছিল কেবল একটাই প্রার্থনা—তাঁর সুস্থতা। দেশনেত্রীকে ঘিরে এ ভালোবাসা, এ আবেগ, এ আকাঙ্ক্ষাই প্রমাণ করে, তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, তিনি এ জাতির হৃদয়।

ওরা ভেবেছিল, মিথ্যা মামলার কারাগার আর নিষ্ঠুর নির্যাতনে নিঃশেষ হবে বেগম খালেদা জিয়া। ভেবেছিল, ক্ষমতার অমানবিক চাপে কালের অতলে হারিয়ে যাবে গণতন্ত্রের এই আপসহীন সৈনিক। কিন্তু ওরা জানত না, খালেদা জিয়া কোনো ব্যক্তি নন, তিনি একটি বিশ্বাসের নাম। মানুষের হৃদয়ের মানচিত্রে তিনি চিরঞ্জীব হয়ে আছেন, যেখানে তাঁর সংগ্রাম আর ত্যাগ গেঁথে আছে মণিমুক্তার মতো। শত বাধা, শত অপমানকে পেছনে ফেলে তিনি প্রমাণ করেছেন, দেশের গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তাঁর অবস্থান চিরকালীন। তাঁর নাম আজ আমাদের বুক পকেটে, মন পকেটে, সর্বত্র অমলিন হয়ে রয়ে গেছে।


লন্ডনের মাটিতে পা রাখার সেই মুহূর্ত যেন সব দুঃখের অবসান ঘটাল। দীর্ঘ সাত বছর পর সন্তানের সঙ্গে মায়ের সেই পুনর্মিলন মুহূর্তটি কেবল একটি দৃশ্য নয়, এটি ছিল নিষ্ঠুর ক্ষমতার বিরুদ্ধে মমতার চিরন্তন জবাব। তারেক রহমানের চোখের নিঃশব্দ কান্নায় যেন ফুটে উঠল এক নীরব প্রতিবাদ। হয়ত মনে মনে তিনি বলছিলেন, “মা, তোমাকে দেখতে না পেয়ে বুক ফেটে কান্না জমেছিল। কিন্তু আজ, এত বছর পর তোমার সান্নিধ্যে ফিরে যেন পৃথিবীর সমস্ত শান্তি ফিরে পেলাম। এই শান্তি তোমার আঁচলের মধ্যেই লুকানো ছিল, যা এতদিনের প্রতীক্ষায় ধরা দিল।”


প্রতিবারের মতোই বিমানবন্দর থেকে নিজের হাতে গাড়ি চালিয়ে তারেক রহমান যখন মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন, তখন সেই দৃশ্য সবার চোখে জল এনেছিল, সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। লন্ডনের ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর লন্ডনের আকাশেও সেদিন যেন এই অদম্য নেত্রীর জন্য শ্রদ্ধার অশ্রু ঝরলো।


মানুষের মনে আজ মিশ্র অনুভূতির ঢেউ। একদিকে গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাত্রা আমাদের সকলের মনে প্রশান্তি এনে দিয়েছে। অন্যদিকে মনে গভীর এক শূন্যতার অনুভূতি, এক অজানা আশঙ্কা। যিনি দেশে থাকলে ছায়া হয়ে মাথার উপর থাকেন, তাঁর অনুপস্থিতি যেন এক অসীম শূন্যতার জন্ম দিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধারে লড়াই করা এই সাহসী নেত্রী কখনো রাজপথ ছেড়ে যাননি। আপস তাঁর অভিধানে নেই। বারবার প্রতিকূলতার মুখে থেকেও তিনি দেশের মানুষের প্রতি তাঁর অঙ্গীকার অটুট রেখেছেন।


দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, তিনি একটি আদর্শ, একটি আবেগের নাম, তিনি বাংলাদেশের গণমানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর, মেহনতি মানুষের আশ্রয়স্থল, তিনি মজলুমের শক্তি, তিনি লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা, তিনি মুক্তির সংগ্রামের অকুতোভয় যোদ্ধা। ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে আমরা দেখেছি তাঁর লৌহ কঠিন অবস্থান, ১/১১-এর চক্রান্তের মুখেও দেখেছি তাঁর আপসহীন দৃঢ়তা। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের পরও তিনি দেশকে ছেড়ে যাননি। স্বামীকে হারিয়েছেন, ছোট সন্তানকে চিরদিনের জন্য বিদায় দিয়েছেন, আর বড় সন্তান মিথ্যা মামলার দায়ে প্রবাসে নির্বাসিত—তবুও দেশের মানুষের ভালোবাসাকেই তিনি বেছে নিয়েছেন। এই মহান নেত্রীর হাত থেকে দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র এসেছে। দেশে নারী শিক্ষার বিকাশ যাত্রা করেছে তাঁর হাত ধরে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দর্শন তথা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে সমুন্নত রাখার জন্য সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তিনিই সেই নেত্রী যিনি মনে করতেন যে দেশের অনেক বন্ধু আছে, প্রভু কেউ নয়, দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এক চুলও সরে দাঁড়াননি। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার রাজনীতি কখন তাঁকে ছুঁতে পারেনি, তিনি সবসময় রাষ্ট্রের দায়িত্বে আসতে চেয়েছেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে।
তাঁর এই অনুপস্থিতি যেন পুরো দেশকে শূন্য করে দিয়েছে। কোথাও যেন এক অজানা শঙ্কা, এক চাপা অস্থিরতা। মানুষ মনে মনে প্রার্থনা করছে, তিনি সুস্থ হয়ে দ্রুত দেশে ফিরে আসবেন। এই দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে তিনি আবারও নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা, এই বিশ্বাসই প্রমাণ করে, তিনি শুধুই একজন নেত্রী নন, তিনি জাতির মনের গভীরে স্থান করে নেওয়া এক প্রেরণা।


তবে এবারের প্রত্যাশা ভিন্ন। মানুষ চায়, দেশনেত্রী এবার আর একা ফিরবেন না। তাঁর সঙ্গে ফিরে আসবেন দেশের গণমানুষের আরেক নেতা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মায়ের সঙ্গে ছেলের এই প্রত্যাবর্তন হবে শুধু একটি ব্যক্তিগত পুনর্মিলন নয়, এটি হবে দেশের গণতন্ত্রের নতুন সূর্যোদয়ের বার্তা। দেশবাসী অপেক্ষায়, সেই মাহেন্দ্রক্ষণের, যখন মা ও ছেলে একসঙ্গে আবার দেশের মাটিতে পা রাখবেন এবং বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন এক আলোকিত ভোরের পথে।

জাফরান

×