ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

কারো সম্পদের দিকে চোখ তুলেও তাকানো যাবেনা: জামায়াত আমির

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কারো সম্পদের দিকে চোখ তুলেও তাকানো যাবেনা: জামায়াত আমির

ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশে স্বাধীনতার আগে কী হয়েছে, তা আমি খুব ভালো করে বলতে পারব না। কারণ, তখন আমার বয়স ১২ বছরের একটু বেশি ছিল। আমি একদম শিশু। সমাজকে স্টাডি করার সেই বয়স তখন আমার ছিল না। কিন্তু দেশের স্বাধীনতার পরে যেটুকু দেখেছি, কোনও সরকারের আমলেই বাড়াবাড়ি কোথাও থামেনি। সেই বাড়াবাড়িতে সুনির্দিষ্ট কোনো ধর্মের মানুষেরা নয়, সকল ধর্মের মানুষেরাই বাড়াবাড়ির শিকারে পরিণত হয়েছে।

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, ‘এক সময় বাংলাদেশের যে পরিমাণ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ইসলাম ধর্ম ছাড়া ছিলেন। সেই পার্সেন্টেজটা এখন নেই। ২০১৪ সালে যখন আমাদেরকে অনেকগুলো বিষয় টার্গেট করে সরকারপক্ষ বক্তব্য দিয়েই যাচ্ছিল। তখন আমি জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনকে চিঠি দিয়েঠিলাম। যে এ বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা চাই জাতিসংঘের আন্ডারে একটা নিউটাউন এই কমিটি হোক। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলা ভায়োলেন্স হয়েছে, সেখানে যদি আমাদের কোনও নেতাকর্মী সম্পৃক্ত থাকে তাহলে আইনের হাতে আমরা তুলে দেব। আমি দুই মাস অপেক্ষা করার পরে যখন তার রেসপন্স পেলাম না, আমি আবার রিমাইন্ডার দিলাম। তারপরে তারা আমাকে রিপ্লাই করে, যে কোনও দেশ যদি সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদেরকে এই ধরনের কোনও রিকুয়েস্ট করে তখন আমার বিষয়টা বিবেচনায় নিই। এর বাইরে আমাদের কনভেনশনের কারণেই আমরা তার রিপ্লেস নিতে পারি না। তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ, ওই সরকারের উপরে আমার বিশ্বাস নেই। রাষ্ট্রসংঘের যারা অভিভাবক আমি তাদেরকে বলেছিলাম। এরপরে সরকারকে আমরা গিয়ে বললাম, আমরা চাই জাতিসংঘের অধিনে সরকারের আহ্বানে সেটাই হোক। কিন্তু সরকার আমাদের আহ্বানে সারা দেয়নি। আমরা দাবি করছি না যে আমরা ভুলের উর্ধ্বে।  

তিনি বলেন, ‘এটা আমি দাবি করছি না যে আমরা কোনও অন্যায় করিনি। কিন্তু এটা আমি দাবি করতে পারি যে আমরা কোনও ভুল করে থাকলে কেউ আমাদেরকে ধরে দিলে আমরা সংশোধন করে নেই এবং যিনি ধরিয়ে দিয়েছেন তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর কোনও অপরাধ যদি করে থাকি তাহলে আমি নিজিই দাবি করব যে আমার বিচার হোক। কারণ, অপরাধের বিচার সরি বলে হয় না।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ দেওয়া এক বুদ্ধিজীবী বলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের দখলে মাইনরিটি সম্প্রদায়ের ৩০ হাজার একর জমি। সেদিনকার সরকার সারা দেশে সব জায়গায় সার্কুলার পাঠিয়ে বলে দিলেন তন্ন তন্ন করে খুঁজে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে। সব জায়গা থেকে রিপোর্ট দিয়েছে কিন্তু তারা এরকম কিছু খুঁজে পায়নি। এ রকম আমাদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই অভিযোগ বোমা নিক্ষেপ করে ফাটানো হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মধ্যে এখন দেখতে চাই যে একজন নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগে তার যে সম্পদ ছিল নির্বাচিত হওয়ার পরে তার সম্পদ কমবে, বাড়বে না। কারণ, তিনি জনসভা করতে গিয়ে শুধু সরকারি টাকায় পারবেন না, তার নিজের টাকাও তাকে খরচ করতে হবে। সরকারের দায়িত্বে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি আর নিজের দিকে খেয়াল রাখতে পারবেন না, তখন তাকে জনগণের বোঝা বহন করতে হবে। এখন আমরা কী দেখি? এখন আমরা দেখি যে প্রথমবার এমপি হওয়ার আগে তার সম্পদ এক কোটি ছিল। পাঁচ বছর পর দ্বিতীয়বার তিনি স্টেটমেন্ট জমা দিচ্ছেন সম্পদের। সেখানে তিনি বলেছেন, এখন তিনি ২৬ কোটি টাকার মালিক। তৃতীয়বার যখন তিনি হচ্ছেন তখন তিনি আড়াইশ কোটি টাকার মালিক। নির্বাচিত হলেই ব্যবসায় লাভ করা যায়। আর বাকি মানুষের কোন লাভ হয়। মারাত্মক লাভজনক ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে। সর্বকালীন সমাজে কিছু আগাছা পরগাছা থাকে, এখনও আছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অগাস্টের ৫ তারিখের আগে দেশের চাঁদাবাজি হয়েছে, দখলদারি হয়েছে মানুষের উপর জুলুম হয়েছে, মামলা হয়েছে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বাণিজ্য করা হয়েছে, এখনও সেটা হচ্ছে। শুধু হাত বদল হয়েছে। আপনারা আমাদের সাথে একমত হবেন যে গত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি অন্যায় হয়েছে। আমাদেরও তো হাত আছে, ৫ অগাস্টের পর আমরা কি পারতাম না চাঁদাবাজি করতে? দখলদারি হয়েছে, আমরা চাইলেই দখলদারি করতে পারতাম। কিন্তু আমারা আমাদের নেতাকর্মীদের বলে দিয়েছি, এটা সম্পূর্ণরুপে হারাম। কারো সম্পদের দিকে অন্যায়ভাবে চোখ তুলে তাকানো যাবেনা, হাত বাড়ানো তো দূরের কথা।’

এম হাসান

×