ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৫ পৌষ ১৪৩১

সালমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু

ওবায়দুল কাদেরের দুর্নীতির খোঁজে দুদক

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

ওবায়দুল কাদেরের দুর্নীতির খোঁজে দুদক

ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু তাই নয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের ১৯০৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন মজুমদারের বিরুদ্ধেও।
বৃহস্পতিবার দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। এ  সময় তিনি জানান, গত ২৯ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীর বিরুদ্ধে প্রকাশিত অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়টি মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) বরাবর পাঠাতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
সংবাদ সম্মেলনে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিষয়ে আক্তার হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আইএফআইসি ব্যাংকের ১৯০৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ও সাবেক এমডি শাহ আলম সারোয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ যথাযথ ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া ও ঋণ নিয়মাচার না মেনেই জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওই ব্যাংকের গুলশান শাখার গ্রাহক (ক) ব্লমুন ট্রেডিং লি: (খ) এক্সিস বিজনেজ লি: এবং প্রিন্সিপাল শাখার গ্রাহক (গ) এভারেস্ট এন্টারপ্রাইজ (ঘ) গ্লোয়িং কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি. (ঙ) ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল লি. (চ) স্কাইমার্ক ইন্টারন্যাশনাল লি. এর অনুকূলে ১৯০৭ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দেখিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
তিনি আরও জানান, সালমান এফ রহমান ও শাহ আলম সারোয়ারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন বিভাগের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বর্ণিত অভিযোগগুলো কমিশনের ব্যাংক শাখা থেকে অনুসন্ধান করার নিমিত্তে মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) বরাবর প্রেরণের জন্য কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া ২৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও ব্যাংক হিসাবে ৪৩ কোটি টাকা অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে জানিয়ে আক্তার হোসেন বলেন, দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

তিনি জানান, ২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৮ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মালিকানা অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখে অপরাধমূলক অসদাচরণ এবং ৬৫টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনকভাবে ৪৩ কোটি ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৭৫ টাকা লেনদেন করে মানিলন্ডারিংয়ে সম্পৃক্ত অপরাধ ‘ঘুষ ও দুর্নীতি’ সংঘটনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে রূপান্তর বা স্থানান্তর বা হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা; মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীত প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় সাধন চন্দ্র মজুমদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যানুসারে, ১/১১ এর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে ২০০৮ সালে পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাধন চন্দ্র মজুমদার। কিন্তু এর আগে এই আসন থেকে আরও দুইবার নির্বাচন করলেও বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি। মূলত ১/১১ এর পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনই তার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে আসে। নওগাঁ-১ আসন থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পর পর তিনবার সংসদ সদস্য হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন সাধন চন্দ্র মজুমদার।

২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার নির্বাচনী এলাকায় মানুষের মুখে মুখে অঢেল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আসতে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি নিয়োগ বাণিজ্য, স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি, খাসজমি দখল, খাসপুকুর দখল. নিয়োগ বাণিজ্য, জায়গাজমির কেনাবেচা, সরকারি কাজের ঠিকাদারি কমিশন বাণিজ্য তাকে এমন সম্পদ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। নামে-বেনামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদও গড়েছেন।

সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুরের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু ॥ ঘুষ, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করে আক্তার হোসেন বলেন, গত ৮ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে ঘুষ, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রকাশিত অভিযোগটি আমলে নিয়ে দুদক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইলিয়াস মোল্লার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু ॥ এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লার ৭০০ একর খাস জমি দখলসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

×