রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী ও অস্পষ্ট। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনগণ প্রধান উপদেষ্টার স্পষ্ট বক্তব্য আশা করে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। আমি মনে করি যে, এখন নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে। নির্বাচন পরিচালনা করবার, কনডাক্ট করবার জন্য তার প্রস্তুতি নেবার জন্য সেই ধরনের কোনো সমস্যা নেই। তাই অতি দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যেটা আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে তার রোডম্যাপ দিয়ে দেবেন, সেটা তিনি দেননি। এটা আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে এবং একইসঙ্গে জাতিকেও কিছুটা হতাশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ২৫ সালের শেষের দিকে অথবা ২৬ সালের প্রথমদিকে নির্বাচন হবে। তারপর তার প্রেস সচিব বলেছেন, ২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাই এক্সজেক্টলি আমরা বুঝতে পারছি না যে, কোনটা সঠিক। এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের যে সময়ের কথা বলেছেন তা যৌক্তিক মনে হয়নি।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই, এপ্রিসিয়েট করি। আদালত স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, নির্র্বাচিত পরবর্তী সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম।
ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে জাতীয় ও স্থানীয় সমস্ত নির্বাচনই অবৈধ হয়েছে। সেই কারণে আমরা স্থানীয় সরকারগুলো ভেঙে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে, সবগুলো ভাঙা হয়েছে কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদটা করা হয়নি। আমরা সেটাও দাবি জানিয়েছি অবিলম্বে এটাকে বাতিল করা উচিত। তিনি বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক যিনি সংবিধানকে অবৈধভাবে সংশোধন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তাকে বিচারের আওতায় আনা হবে কি না যখন সময় আসবে তখন অবশ্যই বিবেচনা করা হবে।
এ সময় আদালতের রায় ব্যাখ্যা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার, বিচার বিভাগীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই রায়ে। কিন্তু যে সমস্ত বিষয় আদালত অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছে সেই বিষয়গুলো আসলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বা ব্যাসিক স্ট্রাকচার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং ক্যারেক্টারটা পাল্টিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সেজন্য সুপ্রিম কোর্ট সবসময় সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদানকারী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি আছে, সেই হিসেবে আদালত মনে করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেটা ইনট্রিডিউজ করা সেটা মৌলিক কাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এটাকে (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) পুনর্বহালের কথা বলা হয়েছে এবং যে সমস্ত বিষয়গুলো বাতিল করা প্রয়োজন সেই সমস্ত জিনিসগুলো বাতিল করা হয়েছে। বাকি যেটা সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ বহাল করা হয়েছে, গণভোট পুনর্বহাল, অনুচ্ছেদ ১৮(ক) পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অনুচ্ছেদ ২৩ (ক) উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এসব অনুচ্ছেদ বহাল রাখা হয়েছে।
সংবিধানের এক তৃতীয়াংশ এবং কিছু তফসিল যেগুলো আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে সংযুক্ত করেছে এগুলোকে ঘোষণা দিয়েছিল যে, এসব অপরিবর্তনীয় থাকবে। সংবিধান এমন কোনো দলিল না সেটা পরিবর্তন করা যাবে না, তাই আদালত এসবকে অবৈধ ঘোষণা করে বিলুপ্ত করেছে। যে সমস্ত আইন সংসদে পাস হয় সেটাতে যদি কোনো অসাংবিধানিক বিষয় থাকে সেটা ইন্টারপেট করার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের।
বাকি জিনিসগুলো মাননীয় আদালত সংসদের ওপর এজন্য ছেড়ে দিয়েছেন যে, এখানে কিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আছে বলে হয়ত আদালত মনে করেছেন। সুতরাং রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত পরবর্তী সংসদের কাজ যাবতীয় সংশোধনী বিবেচনা করা।