ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৪ পৌষ ১৪৩১

খেলতে চাওয়া ওবায়দুল কাদের মাঠ ছেড়ে পালালেন কোথায়?

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১০:২০, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

খেলতে চাওয়া ওবায়দুল কাদের মাঠ ছেড়ে পালালেন কোথায়?

ছবি: সংগৃহীত

‘পালাব না। কোথায় পালাব! পালাব না, প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব’—বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে গত বছর ২৯ জানুয়ারি এ কথা বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

কিন্তু গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।  সেই সময় থেকে ওবায়দুল কাদের কোথায়, তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। শারীরিকভাবে আত্মগোপনে। নেই ভার্চ্যুয়াল দুনিয়াতেও। সরকার পতনের আগে যিনি প্রায় প্রতিদিন বক্তব্য-বিবৃতি দিতেন, গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য গত সাড়ে ৪ মাসেও তার কোনো বক্তব্য-বিবৃতি নেই।

ওবায়দুল কাদের ‘খেলা হবে’ কথাটিকে রীতিমত স্লোগানে পরিণত করেন। ‘খেলা হবে’ বলে তিনি নিজেই চলে গেলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগের নানা কথা প্রচলিত আছে। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি ৫ আগস্টই যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে চলে গেছেন। কারও কারও মতে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, তিনি দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে আছেন।

এসব চর্চা আর গুঞ্জনের মধ্যেই দেশের সংবাদমাধ্যম মানবজমিন খবর ছেপেছে, তাদের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী গণঅভ্যুত্থানের পর তিন মাস ৫ দিন ওবায়দুল কাদের দেশেই ছিলেন। এই সময়ে তিনি নিরাপদেই ছিলেন। দলের সভাপতির মতো তিনিও ভারতে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করেছেন এই সময়ে। যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন দলীয় সভাপতির সঙ্গে। সেখান থেকে সাড়া মিলেনি। সূত্রের দাবি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যে যারপরনাই বিরক্ত ছিলেন দলের সভাপতি। ‘ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যেই আন্দোলনে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছিল বলেই দলটির নেতারা মনে করছেন। যে আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনার সরকারকে এক বিধ্বংসী পরিণতি দেখতে হয়েছে।

মানবজমিন জানতে পেরেছে, গত ৮ নভেম্বর ওবায়দুল কাদের শিলং হয়ে ভারতের কলকাতায় পৌঁছান। খবর রয়েছে, তিনি এক বিশেষ স্থানে আয়েসেই দিন কাটাচ্ছিলেন। তবে কীভাবে দেশ ছাড়বেন তার ফন্দি-ফিকির করছিলেন। সবুজ সংকেত আসার পর সড়কপথে তিনি বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলং পৌঁছান। সেখান থেকে যান কলকাতা। দিল্লি নয়, কলকাতাতেই তিনি অবস্থান করবেন এমনটাই জানা গেছে। ভারত সরকারের কাছে তার জন্য কেউ কেউ লবি করছিলেন।

মানবজমিন পত্রিকায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদন তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনালকে বলেন, সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তিন মাস দেশে ছিলেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেনি। কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হলো না, কীভাবে তিনি দেশের বাইরে গেলেন—এসব বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ব্যাখ্যা দেওয়ার আবেদন জানান তিনি।

পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও ওবায়দুল কাদেরের দেশত্যাগ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বা তিনি পরে কীভাবে দেশের সীমান্ত অতিক্রম করলেন, সে বিষয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যাখ্যা দিতে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান আইনজীবী তাজুল ইসলাম।

 

শিহাব

×