ফজলুর রহমান
আমার নির্দেশনা ছিল স্পষ্ট যদি তুমি সেতুর বুলেট দিয়ে সারংকে মেরে ফেলতে পার, তবে তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করবে। কখনো কখনো মনে হয় যে শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এত দ্রুত আসলে ভালো হতো না। তিনি হয়তো তখন সরকারকে বলতেন: "তোমরা ছয় মাস দেশ পরিচালনা করো, আর আমি যুদ্ধ কেমন চলছে তা দেখব।"
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনা করার আগে, আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমি বহুবার যুদ্ধ সম্পর্কে কথা বলেছি। আমি ১৪ নভেম্বর, ১৯৬৯-এ বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ফ্রন্ট (বিএলএফ)-এ যোগ দেওয়ার মাধ্যমে একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উঠি। সে সময়, বিএলএফ নেতা সৈয়দুল আলম খান আমাদের নেতৃত্ব দেন। আমরা একসাথে শপথ গ্রহণ করি যে, আমরা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য লড়াই করব, যা পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২-৬৪ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আরও দৃঢ় হয়। এই সমস্ত ঘটনাই আমাদের মধ্যে এক বিশ্বাস গড়ে তোলে যে, বাঙালি জাতি কখনো পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাবিদের সঙ্গে একত্রিত থাকতে পারে না।
“বাঙালি জনগণের বিজয়” স্লোগানটি বহু বছর ধরে বিস্তার লাভ করছিল, এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে, বাংলার জনগণ শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগকে overwhelming ভোটে জয়ী করেছিল। কিন্তু বেশিরভাগ আসন লাভের পরও, ইয়াহিয়া খান নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তা মুজিবকে ক্ষমতা না দেয়।
সঙ্কট গভীর হলে, আমরা জানতাম যে সংগ্রাম অনিবার্য। আমি ঢাকা শহরে ছাত্রদের সংগঠিত করার কাজে সক্রিয় ছিলাম। ৭ মার্চ, ১৯৭১-এ আমি শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শুনতে যাই, যেখানে তিনি স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু হওয়ার ঘোষণা দেন। স্বাধীনতার আহ্বান স্পষ্ট ছিল। পরবর্তী দিন ৮ মার্চ, আমি এবং অন্যরা শাহবাগ এলাকায় গিয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে বাঙালি পতাকা উত্তোলন করি।
২৬ মার্চ, ১৯৭১-এ যুদ্ধ শুরু হয়। আমি ঢাকা ছাড়ি, কিশোরগঞ্জে একটি দলের সঙ্গে চলে যাই, এবং পরে বিভিন্ন পথে ভারত চলে যাই। পাকিস্তানি সেনারা নৃশংসতা শুরু করেছিল, কিন্তু আমরা তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের অঞ্চলগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করছিলাম। আমরা স্থানীয় প্রতিরক্ষা দল গঠন করে পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য অভিযান চালিয়েছিলাম, যা শেষ পর্যন্ত বিজয়ের জন্য প্রস্তুতির অংশ হয়ে ওঠে।
আমরা মাসব্যাপী কঠোর প্রশিক্ষণ এবং প্রতিরোধের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের নেতৃত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে পরিস্থিতি অনেকটাই পালটে গিয়েছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান বাহিনী পিছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, কেবল কিশোরগঞ্জ এবং ভৈরাবের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু আমাদের বাহিনী এগিয়ে যাচ্ছিল।
৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ, মাসব্যাপী সংগ্রামের পর, সৈয়দুল আলম খান এবং অন্যান্যরা আমাদের সুনামগঞ্জের মতো জায়গাগুলোতে বিজয়ী করেন। অবশেষে, ১৬ ডিসেম্বর, পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ শুরু করে, যা যুদ্ধের সমাপ্তি এবং একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের সঙ্কেত দেয়।
১৬ই ডিসেম্বর বিজয় হইলো ২২শে ডিসেম্বর তাজউদ্দিন গভমেন্ট আসলো বাংলাদেশে আইসা তারা একটা মন্ত্রিসভা বানাইলো। নতুন কইরা সেখানে বিশ্বাসঘাতক ভিতরে যারা ছিল মন্ত্রিসভার মুস্তাকস সহ তাদেরকে বাদ দিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ কে বানাইলো । ২২ এর পরে ৩০/৩১এই নয় দিন আর বঙ্গবন্ধু আইলো ১০ই জানুয়ারি । তাজউদ্দিন সরকার বাংলাদেশে আসার ১৯ দিন পরে ঢাকায় আসা ১৯ দিন পরে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় আসলো ১০ই জানুয়ারি। ১০ই জানুয়ারি আইসা উনি ১১ই জানুয়ারি একটা অর্ডিনেন্স কইরা রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পরিবর্তন করিয়া সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রবর্তনের একটা অর্ডিনেন্স করলেন এবং ঠিক তারপরের দিন ১২ই জানুয়ারি উনি নিজে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী হইলেন এবং আবু সাঈদ চৌধুরী সাহেবকে উনি রাষ্ট্রপতি করলেন । তাজউদ্দিন সাহেব অর্থমন্ত্রী হইলো সৈয়দ নজরুল ইসলাম
শিল্পমন্ত্রী হইলেন আব্দুস সামাদ আজাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিকই রয়ে গেলেন ডক্টর কামাল হোসেন আইনমন্ত্রী হইলেন ইত্যাদি তারা মন্ত্রী হলেন আমার কাছে মনে হয়েছে এটা ঠিক হয় নাই কেন ঠিক হয় নাই কারণ আমি সিরাজুল আলম খানের সাথে থাকার কারণে ইকবাল হলে তখনও । আমি ছিলাম মন্ত্রিসভা যেদিন হয় সেদিন আমি ইকবাল হলে ছিলাম না ১০ই জানুয়ারি । আমি ইকবাল হলে ছিলাম ১২ই জানুয়ারি কারণ আমি তখন এলাকাতেই ছিলাম । আমি প্রথম ঢাকায় আসছি ১৭ই মার্চ যেদিন ইন্দিরা গান্ধী আসছেন । যেদিন ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ থেকে চলে যায় সেইদিন আমি হুন্ডা কইরা গফরগাঁও তারপর গফরগাঁও থেকে আমি ট্রেনে আমি ঢাকায় আসছিলাম । আমি কেন কথাটা বলছি আমার কাছে মনে হইছে এত দ্রুত বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী না হইলেই ভালো করতেন । উনি তাজউদ্দিন সৈয়দ নজরুলের গভমেন্টটাকে বলতে পারতেন তোমরা ছয় মাস চালাও আমি বাংলাদেশটা ঘুরে দেখি কি হইছে। আমার বাংলার কোথায় কোন আগুন জ্বলছে কোথায় কোন মায়ের ইজ্জত গেছে কোথায় সন্তান বাপ হারা হইছে কোথায় বাপ সন্তান হারা হইছে কোথায় মা-পুত্র হারা হইছে কি সর্বনাশ বাংলার হয়ে গেছে কতগুলা ব্রিজ ভাঙছে কতগুলা কালভার্ট ভাঙছে কতগুলা মসজিদ মন্দির ভাঙছে আমাকে দেখতে দাও . আমি ঘুরিয়া মানুষের মতামতটা আমি লইয়া দেখি। ছয় মাস বঙ্গবন্ধুর ঘোরা উচিত ছিল এরপরে পরবর্তী সময় আমার শিদুল আলম খান সাহেবের সাথে আমি আসার পরে যে কথাটা হইছে শাহজাহান সিরাজ যে কথাটা তখনও আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগ সব এক আছে জাসদও হয় নাই ছাত্রলীগও ভাগ হয় নাই ১৭ই মার্চ পর্যন্ত তাদের কথা ছিল । আলম বঙ্গবন্ধুকে বলছিল অনুরোধ করছিল মুজিব ভাই যুদ্ধ করছি সবাই মিলে সরকার করি সবাই মিলে একটা জাতীয় সরকার হোক । একটা নির্দিষ্ট কর্মসূচি দিয়া এগুলো অনেক কথা আছে আই মেবি রং আমার কাছে মনে হয়েছে ওইটাই ঠিক ছিল একটা জাতীয় সরকার হইতো সবাই মিলে অন্তত তিন বছর একটা দেশ একটা প্রোগ্রাম ভিত্তিক চলতো বঙ্গবন্ধু মাথার উপরে থাকতো কিন্তু আমার কাছে মনে হইছে ট্রেনটা প্রথম দিনই ভুল লাইনে উঠছে । যে কারণে ইচ্ছা ছিল চিটাগাং যামু কিন্তু যেহেতু ভুল লাইনে ট্রেনটা উঠছে সেটা আর চিটাগাং যাইতে পারে নাই। সেই ট্রেন এবং বঙ্গবন্ধু তিন বছরের মাথায় নিজে মৃত্যুবরণ করলেন । । নিজে নিহত হইলেন তার সমস্ত পরিবার ধ্বংস হইলো আওয়ামী লীগ শেষ হইলো মুক্তিযুদ্ধ উল্টা রথে উঠলো । উনি আসলে কোন আতঙ্কে আবার বাকশাল করা লাগবে তিনি দেশ কেন এই উত্তরটা আমি এখন আর দিব না দিলে পরে অনেক বিভ্রান্তি হবে। বাকশাল যদি করেন উনি ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭৫ সন। ওইদিন আমি আওয়ামী লীগ ছাইড়ে দিছিলাম রাজনীতি ছেড়ে দিছি। আওয়ামী লীগ না রাজনীতি যার জীবনে আল্লাহ তুমি আমায় গেলে মসজিদে ধরে । এগুলো আপনারা শুনছেন অনেক কথা আমি আমি শপথ করে বলছি আমি রাজনীতি করবো না । এইটা ভিন্ন কথা কিন্তু বাকশাল ভালো ছিল কি খারাপ ছিল একদলীয় শাসন কি ছিল না ছিল এগুলো নিয়ে ভবিষ্যৎ ইতিহাস । ভবিষ্যৎ রাজনীতি কথা বলবে আমি এখন বলবো না আমি একদিন বলব কারণ বাকশাল কিন্তু আতুর ঘরে মারা গেছিল । বাকশাল খারাপ কি ভালো এটা কিন্তু তখন পর্যন্ত বিবেচনা করার মত সময় ছিল না । আতুর ঘরেই বাকশাল মারা গেছিল তারপরে আমি বলব বঙ্গবন্ধু একদলীয় শাসন করে কাজটা ভালো করেন নি।
রাজু