ছবি: প্রতিনিধি
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বন্দি-গৃহবন্দি থেকে দীর্ঘ সাত বছর পর রাজনৈতিক সমাবেশে ফিরছেন। এ নিয়ে দলটির সকল স্তরের নেতাকর্মীরা উচ্ছসিত আনন্দিত। তারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা সরকার রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলো। চুড়ান্ত মাইনাস করে দুনিয়া থেকেও সরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র করেছিলো। কিন্তু তাদের আপসহীন নেত্রী হাসিনা সরকারের কাছে মাথা নত না করে যুগের অগ্রসৈনিক হিসেবে নতুন প্রজন্মের কাছে, নতুন বালাদেশে নবরুপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী ২১ ডিসেম্বর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ সাত বছর পর এই প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি বক্তব্য দেবেন।দলের তরুণ প্রজন্মের কাছে, নতুন বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বার্তা দেবেন। সারাদেশে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লক্ষাধিক নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেবেন।
এ নিয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত দৈনিক জনকন্ঠকে বলেন, ম্যাডাম আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে আসবেন। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ২১ ডিসেম্বর আমরা এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের আয়োজন করেছি। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, গতকাল রাতে (শনিবার) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমাদের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ আমি ম্যাডামের সাথে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রন জানিয়ে এসেছি। তিনি সম্মতি দিয়েছেন…আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং স্বশরীর সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ওই সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দেবেন।২১ ডিসেম্বরের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে সারা দেশ থেকে রনাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের ঢাকায় আনা হচ্ছে জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর এই সমাবেশটি দেশনেত্রীকে সামনে রেখে করার প্রেক্ষাপটে এর আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেলা দুইটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। সারা দেশ থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকায় আসবেন এবং ২১ ডিসেম্বরের সমাবেশে যোগ দেবেন।
খালেদা জিয়া এক যুগ পর গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সাত বছর পর ২১ ডিসেম্বর তিনি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে, অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের মাধ্যমে দীর্ঘ সাত বছর পর খালেদা জিয়া মুক্ত পরিবেশে জনসমক্ষে বা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসছেন।’
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিলো। প্রতিহিংসা থেকে বছরের পর কারাগারে বন্দি রেখেছিল। দেশের গণতন্ত্রকে হাসিনা সরকার রুদ্ধ করে রেখেছিলো। সময়ের কী নির্মম পরিহাস আজ আমাদের নেত্রী মাইনাস থেকে অগ্রসৈনিক। আর হাসিনা এতোটাই নির্লজ্জভাবে পালাতে হয়েছে এদেশের মাটিতেও তার ঠিকানা হয়নি। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া শেখ হাসিনার কাছে আপোষ না করে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আজ লাখো কোটি মানুষের কাছে অনন্য একজন গণতন্ত্রের সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা একজন সেনা প্রধানের স্ত্রী আগামী শনিবার রাজনৈতিক মঞ্চে আসছেন , এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। পুরো দেশবাসি উচ্ছসিত। দেশ জনগণণের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন বার্তা আসবে বলেও যোগ করেন এই নেতা।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল দৈনিক জনকন্ঠকে বলেন, আমরা দীর্ঘ সাত বছর ম্যাডামের নির্দেশনা, বক্তব্য শোনা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। স্বৈরাচার হাসিনা সরকার আমাদের নেত্রি থেকে আমাদের দূরে রেখেছেন। অন্যায়ভাবে বছরের পর বছর বাংলাদেশের গণমানুষের নেত্রীকে বন্দি রেখেছেন। চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। তবুও আমাদের নেত্রী মৃত্যুমুখেও শেখ হাসিনার কাছে নত হননি। দেশের মানুষের কাছে এটি এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে খালেদা জিয়া বন্দি থাকলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বও বন্দি হয়ে পড়ে। খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে গণতন্ত্রও মুক্তি লাভ করে। দীর্ঘ সাত বছর পর বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনতে পারবো এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের। নতুন বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার বার্তার মাধ্যমে তারুন্য সমাজ গণতন্ত্রের নতুন পথ খুঁজে পাবে।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আমান উল্লাহ আমান দৈনিক জনকন্ঠকে বলেন- “এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন উনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিভাবে দেশের স্বার্থে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করা যায় বেগম জিয়ার সংগ্রাম পৃথিবীর ইতিহাসে তার বিরল দৃষ্টান্ত। দীর্ঘ সাত বছর পরে ওনার সশরীরে বক্তব্য প্রদান বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য মাহেন্দ্রক্ষণ ।
দলীয় সূত্রগুলো বলছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের এক সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।
দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। দুই বছরের বেশি সময় তিনি কারাবন্দী ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তাঁর সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়। সেই থেকে ছয় মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার। তবে ওই সময়টা তিনি গ্রহবন্দি ছিলেন বলে দাবী বিএনপির।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে গত ৫ আগস্ট। এর পরদিনই ৬ আগস্ট খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। সেদিন তাঁর মুক্তির ব্যাপারে বঙ্গভবন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের তিন বাহিনীর প্রধানেরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
মেহেদী কাউসার