ছবি: সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। অন্তত ৭২ জন কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও মেয়রের অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
তাদের মধ্যে কয়েকজন গোপনে নির্বাচনী এলাকার কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও বেশিরভাগই জনসমক্ষে অনুপস্থিত। এদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের অপেক্ষায় রয়েছে।
ক্ষমতায় থাকাকালে নিয়মিত গণমাধ্যমে সক্রিয় থাকা সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিনি ভারতে আত্মগোপনে রয়েছেন।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বেলজিয়ামে থাকার গুঞ্জন রয়েছে। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ফেসবুকে সক্রিয় হলেও তার অবস্থান অজানা।
২৪ জন সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরও কোনো খোঁজ নেই। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন, সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান, সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার, সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদ দারা, সে সময়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন নাহার চাঁপা এবং সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান।
কোনো খবর নেই সাবেক রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি এবং অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খানেরও।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী টুসি ও ওয়াসিকা আয়েশা খান কানাডায় অবস্থান করছিলেন, এবং এখনও দেশে ফেরেননি। সাবেক রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম জাপান কিংবা ভারতে রয়েছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
তিনজন সাবেক মন্ত্রীরও কোনো নির্দিষ্ট খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তারা হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম এবং সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এদের মধ্যে দু’জন বয়সজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন এবং স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না।
তবে সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে ৯ জনের অবস্থান নিশ্চিত করা গেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভারত হয়ে অন্য দেশে গেছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক প্রবাসীকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন।
ছয়জন সাবেক মেয়রও আত্মগোপনে রয়েছেন। বরিশালের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর অবস্থান অজানা। ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস লন্ডনে থাকতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নিজের বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ৪১ জন নেতারও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের মধ্যে রয়েছেন পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মির্জা আজম ও মাশরাফি বিন মুর্তজার মত নেতারা।
উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যেও বেশ কয়েকজনের কোনো খোঁজ নেই। সিনিয়র নেতাদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেবুন্নেছা হক, এইচ এন আশিকুর রহমানসহ আরও কয়েকজন বার্ধক্যজনিত কারণে জনসমক্ষে আসছেন না।
সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। নেতাদের অনেকেই জনরোষ এবং গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে দলের ভেতরে অনিশ্চয়তা বাড়ছে এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে জোর আলোচনা চলছে।
এম.কে.