ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে: জামায়াত আমির

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে: জামায়াত আমির

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘এভাবে অপমানে দায় স্বীকার করে পালিয়ে যাওয়া নিকৃষ্টতম। এদের রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আমরা ধারণা করেছিলাম তারা শপথ নেবেন, আর তারা এই দেশকে জ্বালা- যন্ত্রণা দেবেন না। কিন্তু কয়লা ধুলে ময়লা যায় না।’

১৩ ডিসেম্বর, শুক্রবার সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘মানুষ এখন ঘুমে নয়, সজাগ। আর এই জাতি এখন বিশেষভাবে সজাগ। তারা (আওয়ামী লীগ) এই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে অনেক কাণ্ড করেছে। তারা জুডিশিয়াল ক্যু করতে চেয়েছিল, আল্লাহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন।

জামায়াত ইসলামী এমন একটি দেশ গড়তে চায়, যেখানে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা কোথাও নিরাপত্তার জন্য পাহারা বসাতে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আমির।

তারা আনসার কাণ্ড ঘটিয়ে ক্যু করতে চেয়েছিল, চাকরি আন্দোলন দিয়ে ক্যু করতে চেয়েছিল, আল্লাহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। এরপর তারা ইসকন কাণ্ড নিয়ে নেমেছিল, আল্লাহ সেটাও ব্যর্থ করে দিয়েছেন। শেষমেষ ইসকনের লোকেরা নির্দয়ভাবে একজন আইনজীবীকে খুন করল প্রকাশ্য দিবালোকে ত্রিফলা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে। তার চেহারা এতটাই বিকৃত করে দেওয়া হয়েছিল, তার পরিবারের কাউকে তার ইন্তেকালের পর চেহারা দেখতে দেওয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে মূলত এদেশের দেশপ্রেমী মানুষ বিশেষ করে মুসলমানদের উসকানি দেওয়া হয়েছিল তোমরাও কিছু করো।

আমরা তখন সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলাম- শান্ত থাকুন এবং মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তারা দুটোই করেছেন। ওরা এখন গর্তে ঢুকেছে। কিন্তু তাদের বিদেশ থেকে বাতাস দেওয়া হচ্ছে।’

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এদেশের হিন্দু ভাইদের ধন্যবাদ জানাই। তারা তাদের বিবেকের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করে বলেছেন, আমরা শান্তিতে আছি। তোমরা আমাদের শান্তির ওপর আঘাত দিও না। আমাদের শান্তিতে থাকতে দাও। ভারতকে বলেছেন, আমাদের নিয়ে আর খেলো না। বহু খেলেছ এখন তোমরা শান্ত হও। আমরা এদেশে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ ভালো আছি। ভালো থাকতে চাই।’

ইসকন ইস্যুতে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অতি সম্প্রতি ইসকনের ঘটনা ঘটার পরে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাওয়াত দিয়েছিলেন সব ধরণের সংগঠনকে। ডান, বাম, ইসলামী, মধ্যম সবাইকে। এই বাংলাদেশের একান্ন বছরে প্রথমবারের মতো সকল ঘরনার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে বসে তারা হাত তুলে অঙ্গীকার করেছেন দেশ এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষায়, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌম রক্ষায় আমরা সবাই এক। আমরা কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করব না। আমরা কোনো চোখ রাঙানিকে পরোয়া করি না।’

ধর্মীয় অভিভাবকরা এক হয়েছিলেন জানিয়ে বলেন, ‘তারাও হাতে হাত মিলিয়ে আওয়াজ দিয়েছেন এখানে ধর্ম, বর্ণের কোনো কথা নেই। আমরা সকলে মিলে বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রে আমরা পা দেবো না।’

তিনি বলেন, ‘পুরো জাতিকে আমরা ধারণ করি আমাদের অন্তরে। এখানে ধর্মের ভিত্তিতে জাতিকে আমরা টুকরো টুকরো, ভাগ-বিভাগ করব না। করতে দেবো না। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি চাই। এজন্য দল, ধর্ম নির্বিশেষে সেই শান্তির বাংলাদেশ অগ্রগতি উন্নয়নের বাংলাদেশ, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান আপনাদের মাধ্যমে জনগণকে জানাচ্ছি।’

শাপলা চত্বরে আলেমদের হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি এসময় বলেন, ‘একটা মানুষের মৃত্যুর চেয়ে এভাবে অপমানে দায় স্বীকার করে পালিয়ে যাওয়া নিকৃষ্টতম। এদের (আওয়ামী লীগের) রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আমরা ধারণা করেছিলাম তারা শপথ নেবেন, আর তারা এই দেশকে জ্বালা-যন্ত্রণা দেবেন না। কিন্তু কয়লা ধুলে ময়লা যায় না।

এটা সাবান দিয়ে ধুলে আরো কালো হয়, কুচকুচে কালো। আমরা সমাজ সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুতে চাই। ওরা শুধু কালো করছে। ওরা নিজেরা শান্তিতে নাই, বাংলাদেশকেও শান্তিতে থাকতে দেবে না। এতটুকুতে তাদের শিক্ষা হয়নি, তাদের শিক্ষা কবে হবে আল্লাহ জানেন।’

রিয়াদ

×