শেখ হাসিনা সবকিছু ধ্বংস করে গেছে, সংস্কারে সময় লাগবে:ড. ইউনূস

ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, মন্তব্য করেছেন যে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছে। এ প্রেক্ষিতে তিনি নির্বাচনের আগে দেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি এও বলেন যে, এই সংস্কার বাস্তবায়ন করতে কিছুটা সময় লাগবে।

নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি ৩০ নভেম্বর নেওয়া হয় এবং সোমবার প্রকাশিত হয়।

ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান এবং বিচারব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একাধিক কমিশন গঠন করেছে। তিনি বলেন, "এই কমিশনগুলোর সুপারিশ জানুয়ারির মধ্যে পাওয়ার পর আমরা পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কার্যক্রম শুরু করব।"

তবে সংস্কার বাস্তবায়নে সময় লাগবে বলে জানান তিনি। "আমরা একদম শূন্য থেকে শুরু করে একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে যাচ্ছি," বলেন ড. ইউনূস।

নির্বাচনের সময় নির্ধারণ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "নির্বাচনের সময় নির্ভর করছে সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর। ফলাফলই সময় নির্ধারণ করবে।"

ড. ইউনূসকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি কি সাধারণ নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, "না, আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি সবসময় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলাম।"

ড. ইউনূস মনে করেন, রাষ্ট্রের যেসব ব্যক্তি নীতি-নৈতিকতা সমুন্নত রাখেন, নিয়ম-কানুন মেনে চলেন এবং দুর্নীতিমুক্ত থাকেন, তাদেরই নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, "হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশের শাসন কাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের এখন গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করে এই কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে।"

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, "হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্রের সকল নীতি-রীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। টানা তিন মেয়াদে ভোটারবিহীন ভুয়া নির্বাচন আয়োজন করে তিনি নিজেকে এবং তার দলকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। তিনি একজন ফ্যাসিস্ট শাসক হিসেবে এসব করেছেন।"

ড. ইউনূস আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিণতি নিয়ে বলেন, "এই আন্দোলনে কয়েক শ' শিক্ষার্থী নিহত হন, আর এরপর এটি হাসিনার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার ১৫ বছরের শাসন শেষ হয়। তিনি হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান।"

অক্টোবর মাসে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা এবং তার বেশ কয়েকজন সহযোগীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ড. ইউনূস জানান, বিচার কার্যক্রম শেষ হলে হাসিনার বিষয়ে চূড়ান্ত রায় আসবে এবং এরপর বাংলাদেশ ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনাকে হস্তান্তরের অনুরোধ করবে। "এ বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে ভারত বাধ্য হবে এ কাজটি করতে," তিনি বলেন।