অভ্যুত্থানের পর জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে
২৪-এর অভ্যুত্থানের পর জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি হয়েছে। দলটির প্রভাব বাড়ছে ভূরাজনীতিতে। ৫ আগস্টের পর জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ নতুন করে আলোচনায় এসেছেন আগামীর রাজনীতিতে। শুধু সভা-সমাবেশেই থেমে থাকেনি জামায়াত। একের পর এক রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করেছে।
সর্বশেষ প্রথমবারের মতো বেশ কয়েকটি ইসলামিক দলের সঙ্গে নিয়ে জামায়াতের চলমান চীন সফর পথ দেখাচ্ছে অন্যান্য ইসলামিক দলগুলোকেও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এরপর এই সফরের মাধ্যমে ভূরাজনীতিতে দলটির গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। দেশে নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না আগামী দিনে বাংলাদেশের রাজনীতি কোনো দিকে যাচ্ছে। হাসিনা সরকারের পতনের জামায়াতকে কাছে পেতে বেশ কয়েকবার ভারত থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় জামায়াতের সঙ্গে।
তবে জামায়াতে ইসলামী সে ডাকে সাড়া না দিয়ে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। ভারতের ডাকে সাড়া না দিয়ে জামায়াত যে কৌশল অবলম্বন করেছে তাতে করে তরুণ প্রজন্মের কাছে নিজেদের অবস্থান অনেকটা পরিষ্কার করেছে দলটি। গত ২৮ নভেম্বর চীন সরকারের আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো বেজিং সফরে গেছে কয়েকটি ইসলামিক দল। যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
প্রতিনিধিদলে রয়েছেন, জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ ৯ জন এবং অন্যান্য ইসলামী দলের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার।
আগামীকাল তাদের দেশে ফেরার কথা। ৫ আগস্টের পর শুধু আওয়ামী লীগ নয় আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারত। হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক পরিকল্পনা করে চলছে ভারত। যার কোনোটাই এখন পর্যন্ত সফল হয়নি। সাধারণ মানুষ মনে করে ২৪-এর আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পাশে থেকে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ শিকার করেছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তাই শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের প্রথম টার্গেট হয় জামায়াতে ইসলামী। দলটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একাধিক বার্তা দেয় ভারত।
তবে তাতে সাড়া দেয়নি জামায়াত। বিদেশে জামায়াতের প্রথম রাজনৈতিক সফর শুরু হয় চীনে। যা হতে পারে ভারতের জন্য চূড়ান্ত বার্তা। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে চীন-ভারত ইস্যু যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি করে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশেও এ দুই দেশের গুরুত্ব অনেক। শুধু রাজনীতি নয় ব্যবসায়িক দিক দিয়ে এ দুই দেশের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমবারের মতো ইসলামিক দলগুলোর চীন সফর প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের ভূরাজনীতির গুরুত্ব বেড়েছে। তবে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ জনকণ্ঠকে বলেন, চীনের কাছে বাংলাদেশের রাজনীতির তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় আসল কে গেল তা নিয়ে চীনের কিছু আসে যায় না বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের মতাদর্শ বা রাজনৈতিক অবস্থান দেখা যায় না। চীন মূলত বোঝে তাদের বাণিজ্য। ৫ আগস্টের পর হয়তো চীনের মনে হয়েছে ইসলামিক দলগুলোর ক্ষমতা বেড়েছে। সেই ধারণা থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে চীন।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশে একটি তরল অবস্থা চলছে। বাংলাদেশ ভারত, চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গেও ব্যবসা করেছে। নতুন সরকার গঠন হলে বোঝা যাবে, বাংলাদেশের নীতি কোনদিকে যাবে। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এসব বিষয়গুলো সহজেই ঠিক হবে বলে মনে হয় না।