মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। মঙ্গলবার দিনভর দলের সিনিয়র নেতারা বিবৃতি, সংবাদ সম্মেলন এবং সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানান।
মঙ্গলবার দুপুরে লন্ডন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি’ নামে সংগঠনের সদস্যরা আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যে আক্রমণ করেছে, তা পূর্বপরিকল্পিত বলে ধারণা হয়। সহকারী হাইকমিশনের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের পতাকা নামিয়ে তাতে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর করা জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বরখেলাপ।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, আপনাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কৌশল হিসেবে বাংলাদেশে ঘৃণার ব্যবহার উভয় দেশের সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী টানাপোড়েন সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করব, অপপ্রচার বন্ধে জাতীয় ঐক্যটা খুব জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, অপতথ্য ছড়ানোর সঙ্গে দেশের ইমেজের প্রশ্ন জড়িত। তাই আমাদের পত্রিকাগুলোকে বলব আপনারা এই ভয়াবহ তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরুন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে অপতথ্য বন্ধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সে দেশের সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, আগস্টের শেষের দিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়, সেখানে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করুন, তারা বাংলাদেশে এসে দেখুক প্রকৃত ঘটনা কী বা সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে কি না বা আদৌ এমন ঘটনা ঘটছে কি না। তিনি বলেন, ভারতীয় সাংবাদিকরা নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে তথ্য নিচ্ছে, সেখান থেকে তারা ভুল তথ্য পাচ্ছে।
শফিকুল আলম বলেন, তারা তথ্য পাচ্ছে তাদের লাইকিংয়ে (পছন্দে) যারা পড়ছেন, সেটা হতে তথ্য নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নাম ছাড়া তথ্য নিচ্ছেন। আবার তারা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকেও তথ্য নিচ্ছেন। নেত্র নিউজ দেখিয়েছে তাদের তথ্যে বড় রকমের গলদ আছে। ৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার কোনোটি সাম্প্রদায়িক কারণে হয়নি। মৃত্যুগুলোর পেছনে ছিল রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কারণ। সংগঠনটি নেত্র নিউজের প্রতিবেদন নিয়ে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। তারা এটাও বলেনি আমরা ঘটনাগুলো পুনরায় দেখি।
প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সকল গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনারা আসুন দেখে যান বাংলাদেশে কী ঘটছে।’
বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য চালানোর ফলাফল হলো আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এটার জন্য দায় চাপাব ভারতীয় গণমাধ্যমকে। এ গণমাধ্যম কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া ছাড়া মিথ্যা অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তারা আগেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশে কী হচ্ছে। অবস্থান পূর্বনির্ধারিত থাকলে বেশি এগোনো যায় না। ফলে ভারতীয় জনগণ সহিংসতা করছে।
শফিকুল আলম বলেন, অপতথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল, প্রবাসী সবাই মিলে সোচ্চার হওয়া উচিত। অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে আমাদের পুরো জাতিকে একটা কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তারা আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। আমরা মনে করি এ সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।
শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশ শেভরনের কূপ থেকে আসে। তারা আবার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা করেছেন। তারা ১০ ও ১১ ব্লকে কূপ খননের প্রস্তাব দেবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। গ্যাসের নতুন চাহিদা হচ্ছে। তারা জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গেও বসবেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।