বরিশালের নথুল্লাবাদে সোমবার জামায়াতে ইসলামীর সভায় বক্তব্য রাখেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ন্যায়বিচার ঘরে আসবে না, লড়াই করে আনতে হবে। অধিকারের দরজা খুলেছে, বাকিটা লড়াই করে আনব। কোনো দুর্নীতিবাজদের দিয়ে দেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। আস্থা বিশ্বাস ও ভালোবাসার দায়িত্ব যদি পাই আমরা মালিক নয় সেবক হয়ে থাকব। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
সত্যের পক্ষে থাকার জন্য অসংখ্য মানুষকে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। প্রবীণ ও আলেমদেরও তারা জেলে দিতে দ্বিধাবোধ করেনি। রবিবার আমিরের বরিশাল সফর উপলক্ষে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে মহানগর জামায়াতের আয়োজনে অনুষ্ঠিত পথসভায় তিনি আরও বলেন, ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে সব শহীদ পরিবারের কাছে আমরা ঋণী। জামায়াতে ইসলামী এসব পরিবারের পাশে রয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই যেখানে কোনো গুম, খুন, ছিনতাই হবে না। সবাই সম্মানের সঙ্গে নিজ মর্যাদা নিয়ে চলবে। আমরা এমন যুব সমাজ চাই, যেখানে মাদকের ছোঁয়া থাকবে না। পথসভায় মহানগর আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা মতিউর রহমানের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারক হোসাইনসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার নেতারা।
এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের আকাশে কালো সূর্য এবং কালো মেঘ ঘোরাফেরা করছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। দেশের জন্য জীবন দেব তবুও দেশের একমুঠো মাটি কাউকে দেব না।
গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মো. আল-আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পথসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারি গৌরনদী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. মোসলেম উদ্দিন শিকদার, বরিশাল জেলা জামায়াতের ওলামা বিভাগের সভাপতি হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম খান। এ সময় আগৈলঝাড়ার উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো. আলাউদ্দিন মিয়া, গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা জাকির হোসেন, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বায়েজিদ হোসেন শরীফ, পৌর জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা মো. হাফিজুর রহমান, সেক্রেটারী অধ্যাপক আজিজুর রহমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, নিজস্ব সংবাদদাতা ঝালকাঠি থেকে জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ঝালকাঠির এক সমাবেশে বলেছেন, একটি উগ্রগোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চট্টগ্রাম আদালতের এক আইনজীবীকে হত্যা করেছে। তারা চেয়েছিল বাংলাদেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিবর্তন করতে। কিন্তু এদেশের দায়িত্বশীল মুসলমানরা তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেয়নি। সোমবার সকালে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে জেলা কমিটি আয়োজিত ইউনিয়ন দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমরা ধৈর্য ধরে দেশের মানুষকে শান্ত করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিতে বসবাস করবে। কোনো ধর্মীয় উপাসনালয় কাউকে পাহারা দিতে হবে না। জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে দেশের কোর্ট-কাছারি অফিস-আদালত কোথাও গিয়ে কাউকে লাঞ্ছিত হতে হবে না। কৃষক তার ফসলের নায্য দাম পাবেন। শ্রমিক পাবেন তার ঘামের ন্যায্য মজুরি। অধিকার ভিক্ষা করতে হবে না কাউকে। সম্মানের সঙ্গে সবাইকে তার অধিকার দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় স্বাধীনতা প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, আবু সাঈদ এই স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান আইকন ও সেনাপতি। তিনি অধিকার চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে পরপর তিনটি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা তাকে স্যালুট জানাই। তিনি আরও বলেন, লেখাপড়া করে এদেশের যুবকরা বেকারত্বের অভিশাপে আত্মহত্যা করবে না। যেখানে শিক্ষা অর্জন করে সঙ্গে সঙ্গে কাজ পাবেন।
জেলা জামায়াত আমির ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন, জামায়াত নেতা মাসুদ সাঈদী। পরে তিনি ঝালকাঠির নেছারাবাদ এনএস কামিল মাদ্রাসা মাঠে সুধি সমাবেশে যোগ দেন।
মাদারীপুর ॥ গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল। মানুষ খুন হয়েছে, গুম হয়েছে, মানুষের ইজ্জত নষ্ট হয়েছে, সম্পদ লুণ্ঠন হয়েছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। কারা করেছে? আমার দেশের কৃষক শ্রমিক তারা করেছে? করেছেন যারা উঁচু তলায় থাকেন তারা। যারা করেছেন তাদের মানুষ শাসক বানায়নি তারা নিজে নিজেই শাসক হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ডে এক পথসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে যদি দেশ গড়তে পারি তাহলে আর এদেশে কেউ ঘুষ খেতে সাহস করবে না, দুর্নীতি করবে না, মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করবে না এবং মানুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না, বিচারকের আসনে বসে কেউ ঘুষ খাবে না, মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, যদি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে সেই সমাজে আল্লাহর রহমত বর্ষণ হয়। আর যেই সমাজের মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত থাকে অথবা মানুষ অন্যায়কে নীরবে হজম করে সেই সমাজ থেকে আল্লাহতায়ালা তাঁর রহমত উঠিয়ে নেয়।
তিনি আরও বলেন, আমি আর ডামি মিলে যে সংসদ হয়েছিল ইলেকশনের সময় যারা ক্যান্ডিডেট হয় তাদের সম্পদের বিবরণ দিতে হয়, ১৪ সালে যে সম্পদ ছিল ২০১৮ সালে দেখা গেল সেই সম্পদের ২০ গুণ বেড়ে গেছে আয়ের উৎস হিসেবে দেখানো হলো মাছের চাষ। খোঁজ নিয়ে দেখা গেল কোথাও একটি পুকুরও নেই তার মাছের।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মাদারীপুর জেলা শাখার আমির মাওলানা মোখলেসুর রহমান, সাবেক জেলা আমির আবদুস সোবাহান, সেক্রেটারি হাফেজ এনায়েত হোসেন, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা আমির মাওলানা হুমায়ুন কবির, সেক্রেটারি মাওলানা মনিরুজ্জামান, পৌর আমির মাওলানা আলমগীর হোসেন, পৌর নায়েবে আমির আ. রহিম মোল্লা, সেক্রেটারি মাওলানা নজরুল ইসলাম, জেলা ছাত্র শিবির সভাপতি সাইফ হাসানসহ অনেকেই।