ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী অভিযোগ তুলে বলেছেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ফারজানার ‘মনগড়া’ মৌখিক অভিযোগ ও দলের কিছু নেতার ‘ষড়যন্ত্রে’ ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল তাকে। এ ক্ষেত্রে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি। রব্বানী বর্তমান সরকারের কাছে প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়মুক্তি ও সাবেক উপাচার্য ফারজানাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিচারও চেয়েছেন তিনি।
২৯ নভেম্বর শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক পোস্টে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা নানা ধরনের কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
২০১৮ সালের ১৩ মে এক সম্মেলনের মাধ্যমে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ছাত্রলীগের সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। নানা অনিয়ম, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠায় ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সংগঠনের নেতৃত্ব থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নিজ দলের কাছেও ন্যায়বিচার পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে দলের জন্য, লালিত আদর্শের জন্য জীবন যৌবনের শ্রেষ্ঠ সময়টুকু উজাড় করে দিয়েছি, কত - শত ঝুঁকি নিয়েছি, সেই দলের কাছ থেকে চরম অন্যায় আচরণের শিকার হওয়া, বারংবার আত্মচিৎকার করেও প্রাপ্য ন্যায়বিচার না পাওয়ার হতাশা - কষ্ট যে কতটা তীব্র, তা কেবল অন্যায় ভুক্তভোগীই অনুধাবন করতে পারে!’
জাবির সাবেক ভিসি ফারজানাকে বিষয়ে রাব্বানী লেখেন, ‘নিজের ও পরিবারের দুর্নীতি-অনিয়ম আড়াল করতে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রমাণিত মহাদুর্নীতিবাজ সাবেক ভিসি ফারজানা ম্যাডামের তথ্যপ্রমাণবিহীন, মনগড়া মৌখিক অভিযোগ ও কতিপয় স্বার্থান্ধের ষড়যন্ত্রে পরিকল্পিত মিডিয়া ট্রায়ালে, আনীত অভিযোগের বিপরীতে ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগ’ না পেয়ে, নির্ধারিত সময়ের আগেই দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। যে পদত্যাগপত্রও আপার নাম ব্যবহার করে ছলনার আশ্রয়ে মিথ্যাচার করে নেয়া!’
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি লিখেছেন, ‘এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নাই। তাই প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমাদের দায়মুক্তি ও দুর্নীতিবাজ ফারজানাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে ৬৬ কোটি টাকা অডিট আপত্তি, উন্নয়ন কাজে ২৯ কোটি টাকা কমিশন নেওয়াসহ শতসহস্র অনিয়ম দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ ছাত্র-শিক্ষক সবার কাছেই রয়েছে।’
রাব্বানী লিখেছেন, ‘বর্তমান দায়িত্বশীলদের নিরপেক্ষ যাচাইয়ের পূর্ণ সুযোগ রয়েছে বলেই আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে চ্যালেঞ্জ করে বলছি, দল ক্ষমতায় থাকার সুদীর্ঘ সময়ে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনও মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি কোনও দফতর থেকে এক টাকার কোনও কাজের টেন্ডার বা আর্থিক সুবিধা সংশ্লিষ্ট তদবির করি নাই। সাবেক-বর্তমান কোনও এমপি, মন্ত্রী, আমলা বা অন্য কেউ বলতে পারবে না, গোলাম রাব্বানী তাদের কাছ থেকে কখনও কোনও কাজ বা আর্থিক সুবিধা নিয়েছে! ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকাকালীন কেন্দ্রীয় কমিটি বা কোনও সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটিতে কারও থেকে পদের বিনিময়ে এক কাপ চা-ও খাইনি। বিভিন্ন কমিটি ও পদের ক্ষেত্রে এমপি-মন্ত্রী, নেতা, ব্যবসায়ীদের অনেক লোভনীয় অফার পেয়েও বিনয়ের সঙ্গে তা ফিরিয়ে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার নিজস্ব কোনও সম্পদ, প্লট বা ফ্ল্যাট নাই, সুযোগ থাকার পরও অন্যদের অনুসরণ করে কোনোদিন সরকারি প্লট, ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন পর্যন্ত করি নাই। উপার্জনের বিকল্প মাধ্যম না থাকায়, ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে থেকেও বেসরকারি চাকরি করে (গত জুলাই থেকে বেতন বন্ধ) জীবিকা নির্বাহ এবং নিজের হালাল উপার্জনের অর্থে দলমত নির্বিশেষে অহর্নিশ অসহায় মানুষের জন্য কাজ করা আমাকে নিজ দলের দুর্নীতিবাজদের মিথ্যা ষড়যন্ত্রে দুর্নীতিবাজ তকমা পেতে হয়েছে। সঙ্গত কারণেই ভুক্তভোগী হিসেবে আমি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কলঙ্কিত করে দুর্নীতি ও অনিয়ম করা সবার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষ বিচার এবং আমার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের ন্যায়বিচার চাই।’
রিয়াদ