ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

চাঁদাবাজি ও কর ফাঁকি মামলায় তারেক রহমানকে অব্যাহতি

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও বড়পুকুরিয়া মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও বড়পুকুরিয়া মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা এবং বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া খালাস পেয়েছেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের দ- থেকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। অপরদিকে, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে খালাস দিয়েছেন আদালত। অপর চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে পৃথক দুটি মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। 
খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় সাত বছরের দ- থেকে খালাস দিয়ে রায় দেন।
আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান। পরে আসিফ হাসান জানান, আদালত বেগম খালেদা জিয়াসহ তিনজনের আপিল মঞ্জুর করেছেন। ফলে তাদের সাজা বাতিল হলো এবং তারা খালাস পেলেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদ- দেন। একইসঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদ- দেওয়া হয়। একই সাজা হয় মামলার অপর তিন আসামিরও।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায়ও খালাস ॥ অপরদিকে, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে খালাস দিয়েছেন আদালত। অপর চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার  ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবু তাহের এ আদেশ দেন।
অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে যাদের বিচার শুরু হয়েছে তারা হলেন- সাবেক জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব নজরুল ইসলাম ও পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মঈনুল আহসান, হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন ও মো. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
এদিন আসামিদের পক্ষে অব্যাহতি চেয়ে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ শুনানি করেন। দুদকের পক্ষে অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম।
অপর ৯ আসামি বিভিন্ন সময় মৃত্যুবরণ করায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, এম কে আনোয়ার, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, এম শামসুল ইসলাম, এস আর ওসমানী, এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মো. আনিসুল হক।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম।
কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে (সিএমসি) বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের কয়লা উত্তোলনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা সিএমসির সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করায় সরকারের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট বেঞ্চ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে এ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়।
পৃথক মামলা থেকে তারেক রহমানকে অব্যাহতি ॥ কোর্ট রিপোর্টার জানান, পৃথক দুই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ১০ এর বিচারক মো. রেজাউল করিম ও অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ পৃথকভাবে অব্যাহতির আদেশ দেন। এর মধ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগে করা মামলায় পুলিশের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে তারেক রহমানসহ আটজনকে অব্যাহতি দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ। এছাড়া অন্য দুর্নীতি মামলায় অব্যাহতি পেয়েছেন জামায়াত নেতা গোলাম পারওয়ার।
অন্য যারা অব্যাহতি পেয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন, তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ওবায়দুল্লা খন্দকার, কামরুজ্জামান, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম শোয়েব বাশুরী ওরফে হাবলু, আজিজুল করিম তারেক ও মনিজুর রহমান ওরফে মানিক। চাঁদাবাজির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোম্পানি আব্দুল মোনেম লিমিটেডের মহা-ব্যবস্থাপক খায়রুল বাশার ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। মামলায় তারেক রহমানসহ আটজনকে আসামি করা হয়।
তদন্ত শেষে ৫ নভেম্বর তারেক রহমানসহ আটজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ঢাকা কোতোয়ালি জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন। মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং এজাহারনামীয় অপরাপর আসামিদের তিনি চিনতেন না। চাঁদাবাজির কোনো ঘটনাও ঘটেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে তারেক রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার উদ্দেশে বাদী খায়রুল বাশারকে চাপ প্রয়োগ করে এ মামলা দায়ের করতে বাধ্য করা হয় বলে তদন্তে জানা যায়।  
অপরদিকে ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে ২৬ লাখ টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে তারেক রহমানের নামে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেই মামলাতেও বুধবার তাকে খালাস দেন বিশেষ জজ আদালত ১০ এর বিচারক মো. রেজাউল করিম।

×