ফ্যাসিস্টদের মুখোমুখি হতে ভয় পেলে চব্বিশের চেতনায় নতুন বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে আমরা এখনো আগের মতোই ফ্যাসিস্টদের বাধার মুখোমুখি হচ্ছি। অনেক সময় ভয় পেয়ে যাচ্ছি। আবার কোথাও কোতাও বিব্রত হচ্ছি। এমন ভয় পেলে, বিব্রত হলে; যে বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমরা চব্বিশের আন্দোলন করেছি, তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। সেই বাংলাদেশের প্রত্যাশাও আমরা করতে পারি না।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, রাষ্ট্র কাঠামো পরিচালনায় এখনো বিভিন্ন জায়গায় আমরা বিভিন্ন ব্যত্যয় দেখছি। এর কারণ হচ্ছে, যারা বিগত ১৬ বছরে সুবিধাভোগী ছিলেন, তারা এখনো বিভিন্ন চেহারায় হয় ঘাপটি মেরে আছে, না হয় গিরগিটির মতো নিজের রূপ পাল্টিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা যখন রাষ্ট্র কাঠামোতে থাকা যৌক্তিক দাবি নিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে যাই, তখনো তারা তাদের জায়গা থেকে বিভিন্ন ওজর ও অবহেলা দেখান। এ থেকে বেরিয়ে আসতে ফ্যাসিস্টদের সরাতে হবে।
জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে আর্থিক অনুদান দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ২৫টি পরিবারকে আট লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। এরমধ্যে কলেজের পক্ষ থেকে তিন লাখ এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আট লাখ করে টাকা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ)। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ।
শিক্ষাখাতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষাসচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, যে ভুল আমরা ৭১-এ করেছি, সেটা যেন আবারও না করি। গতকালের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সরকার ও আমি মনে করি, এর পেছনে ইন্ধন রয়েছে। এটা একটা বড় পরিকল্পনার অংশ। যে উদ্দেশ্যে আন্দোলন করেছি, সেটা সুফল করতে ক্লাসে ফেরাসহ অন্যান্য কাজে ফিরতে হবে।
শহীদ পরিবারগুলোর কষ্টের বর্ণনা দিয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) বলেন, জুলাইয়ের ৩৬টা দিন কেমন ছিল, শুধু উপস্থিত শহীদ পরিবারই তা জানে। যে মা শিশুকে জন্ম দিয়েছে, বড় করেছে, সেই সন্তানের মরা মুখ দেখার কষ্ট শুধু ওই মা বোঝেন। অন্য সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও শহীদ ও আহত পরিবারগুলো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। তাই রক্তের বিনিময়ে যারা সুন্দর বাংলাদেশ এনে দিয়েছে, নিজেদের জায়গা থেকে সেসব পরিবারের পাশে থাকুন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম আমানুল্লাহ। তিনি বলেন, এ আন্দোলন বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আন্দোলন নিয়ে কাজ করা গবেষকেরাও বিষয়টি অবগত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে বাংলাদেশ ও তার অভ্যুদয়ের ইতিহাসকে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত টানা হয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রত্যেকের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সারজিস আলম।
নুসরাত