ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ঢাকা — ৫ আসনে বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব: বিভ্রান্তিতে নেতাকর্মীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, ডেমরা, ঢাকা

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২৩ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৮:৪৪, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকা — ৫ আসনে বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব: বিভ্রান্তিতে নেতাকর্মীরা

দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব থামানোর আহ্বান।

গত ৫ আগস্ট স্বৈারাচারি শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ঢাকা—৫ আসন বিএনপির দুই গ্রুপের দন্দ্বে নেতাকর্মীরা চরম বিভ্রান্তিতে রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ঘটনায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির হাইকমান্ড রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। কোনভাবেই ঢাকা— ৫ এ বিএনপির দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব স্থায়ী করা যাবেনা। এ লক্ষ্যে নগর বিএনপি ও কেন্দ্রীয় বিএনপি দ্রুত সমাধান করবে বলে জানিয়েছেন ঊর্ধতন সংশ্লিষ্ট বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

এদিকে পূর্ব পরিকল্পনা ও ঘোষণা অনুযায়ী সংসদীয় ঢাকা— ৫ আসন বিএনপির পক্ষ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিক্ষোভ মিছিল করার কথা ছিল ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপি নেতাকর্মীদের। এক্ষেত্রে ওই দিন পূর্ব প্রস্তুতী নেওয়া বিএনপির দুই গ্রুপের পৃথক এসব কর্মসূচীতে নিশ্চিত সংঘাত হওয়ার আশংকায়  কর্মসুচী স্থগিত ঘোষণা করেছেন দলের মহাসচীবের নির্দেশে বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কার্যনির্বাহী কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর দেড় টার দিকে বিএনপির দুই গ্রুপ ঢাকা— ৫ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নবী উল্লাহ নবী  ও ঢাকা— ৫ আসনের সাবেক এমপি এবং সর্বশেষ ঢাকা— ৪ আসন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সালাহউদ্দিনের সমর্থকরা একই দিনে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ওই দিন (২৫— নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে নিশ্চিত সংঘাতের আশংকায় দলের হাইকমান্ড থেকে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত রাখার জন্য মৌখিক নির্দেশ প্রদান করেন সংস্লিষ্টদের।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে শান্তিপ্রিয় বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন, সংসদীয় ঢাকা — ৫ আসনভুক্ত ডেমরা — যাত্রাবাড়ী থানা বিএনপির নবী উল্লাহ নবী গ্রুপ ও সালাউদ্দিন গ্রুপ উভয়ে নিজেদের আধিপত্য ও এলাকায় শক্ত অবস্থান বুঝানোর একই দিনে ডেমরা এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও কর্মসূচির আহ্বান করেন। উভয় গ্রুপের সাংগঠনিক শক্তি প্রমাণে নেতাকর্মীরাও বেশ জোরালো ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে ওই কর্মসূচিকে ঘিড়ে। আর কয়েকদিন আগে থেকেই কর্মসূচী সফল করতে উভয় গ্রুপের প্রস্তুতি চলছে বেশ জোড়ে শোরেই। উভয় গ্রুপের এ কর্মসূচি নিয়ে উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে। এ বিষয়ে উভয় গ্রুপের এমন কর্মসূচি চলমান থাকলে ঢাকা— ৫ আসন এলাকায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে বলে আশংকা রয়েছে দলীয় হাইকমান্ডদের।  তাই রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় আগামী দিনে দলীয় গ্রুপিং নিরসনের লক্ষ্যে শনিবারের বিক্ষোভ কর্মসূচী আপাতত স্থগিত রাখার জন্য বলা হয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে।

এ বিষয়ে নবী উল্লাহ নবী গ্রুপের ডেমরা থানা বিএনপির প্রস্তাবিত সভাপতি এসএম রেজা ও প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান বলেন, আমরা ৫ আগষ্টের পর থেকেই ধারাবাহিক ভাবে নানা কর্মসূচী চালিয়ে আসছি। আর ধারাবাহিক ওইসব কর্মসূচীর অংশ হিসেবেই আমাদের শনিবারের এ বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা ছিল। এদিকে আমাদের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম ও পূর্বের ডাকা কর্মসূচী বন্ধসহ পন্ড করার জন্যই অপর গ্রুপ একই দিনে একই কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে। তাই রাজনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই কেন্দ্রিয় নির্দেশে আমাদের আজকের বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত  করেছি।

ঢাকা— ৫ আসন বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী বলেন, দলীয়ভাবে আমাকে ঢাকা— ৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে আমি বিএনপির অংশগ্রহনে বিগত জাতীয় নির্বাচনও করেছি। দুর্দিনে এ আসনের তৃণমূল বিএনপিকে আমি সুসংগঠিত রাখতে আন্দোলন সংগ্রামসহ সকল কর্মসূচী পালন করেছি। নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে, বাড়ীতে ঘুমাতে পারেনি। তারপরও আমার নেতাকর্মীরা আমাকে নিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার তোপের মুখে সংসদ নির্বাচন করেছে ঢাকা— ৫ আসন থেকে। আর ৫ আগস্টের পর ঢাকা— ৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী সালাহ্উদ্দিন সাহেব নজর দিয়েছেন ঢাকা— ৫ আসনের দিকে। এখানকার সুবিধাবাদী কিছু নেতাকর্মীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে কাউন্টার কর্মসূচী দিতে চেয়েছে যা মূলত সংঘাত করার ইচ্ছা নিয়ে। কিন্তু আমি ও আমার নেতাকর্মীরা শান্তি শৃঙ্খলা বাজায় রেখে রাজনৈতিক সকল কর্মসূচী পালন করছি। এক্ষেত্রে সালাহউদ্দিন সাহেবের ঢাকা— ৫ আসন নিয়ে বিএনপিরি রাজনীতির মানসিকতা মোটেও ঠিক হচ্ছে না কারণ দলীয়ভাবে তাকে ঢাকা— ৪ আসনে মোনোনয়ন দেওয় হয়েছিল। আর তার বাসস্থানও নেই ঢাকা— ৫ এ বা তিনি এখানকার ভোটারও নন।      

এ বিষয়ে সালাহ্উদ্দিন গ্রুপের ডেমরা থানা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো.হানিফ বলেন, অনেক আগে থেকেই আমরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শনিবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছিলাম দলীয় ঊর্ধতনদের নির্দেশ অনুযায়ী। অথচ আমাদের আয়োজিত এ কর্মসূচীকে কাউন্টার হিসেবে বন্ধ করার জন্যই অপর গ্রুপ একই কর্মসূচীর ডাক দেয় হঠাৎ করে। তাই দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনাকে সম্মান দেখিয়ে আমরা আজকের কর্মসূচী স্থগিত করা হলো।

এ বিষয়ে ঢাকা— ৫ আসনের সাবেক এমপি ও ঢাকা— ৪ আসন বিএনপির মনোনীতি প্রার্থী আলহাজ¦ সালাহ্উদ্দিন আহম্মেদ মোবাইল ফোনে বলেন, আমি ঢাকা— ৫ আসনে জনগনের ভোটে ৩ বার নির্বাচিত হয়েছি। তখন থেকেই তৃণমূল বিএনপিকে সুসংগঠিত রেখেছি আসনটিতে। সর্বশেষ নির্বাচনে ঐক্যজোট থেকে আমাকে ঢাকা- ৪ আসনে মনোয়ন দেওয়া হয়েছিল। এক্ষেত্রে বিএনপি থেকে ঢাকা— ৫ আসনে অন্য কাউকে এখনো দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাই পূর্বের ৩ বারের এমপি হিসেবে ঢাকা— ৫ আসন তৃণমূল বিএনপি আমার সঙ্গেই ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।    

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু মোবাইল ফোনে বলেন, ঢাকা— ৫ আসনের ডেমরা — যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের একই কর্মসূচী হচ্ছে এমন খবর পেয়ে সংঘাত এড়াতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পক্ষ থেকে কর্মসূচী বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। একই এলাকায় একই দলের দুই গ্রুপ কেন বিক্ষোভ মিছিল করবে নিয়ম বহির্ভুতভাবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে দুই গ্রুপের এমন কর্মসূচী আর হতে দেওয়া যাবেনা ঢাকা — ৫ আসনে। ভবিষ্যতে আসনটির রাজনৈতিক পরিমন্ডল ও মেরুকরন নিয়ে পর্যবেক্ষন করা হবে।

রিয়াদ

×