ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নতুন হিন্দু জোটের আত্মপ্রকাশ, কর্মসূচি ঘোষণা

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

নতুন হিন্দু জোটের আত্মপ্রকাশ, কর্মসূচি ঘোষণা

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ দফা আন্দোলনের বড় দুই প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট একীভূত হয়ে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। নতুন জোট আত্মপ্রকাশের পাশাপাশি আগের ৮ দফা এবং হাজারি লেনে সংঘটিত ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, সনাতনীদের ওপর হামলা-নির্যাতনকারী অতি উৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াসহ ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা হিসেবে এখনও অনেক নিরীহ সনাতনীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সাধুসন্তদের নামে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের অপচেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন জোটের নেতারা।
রবিবার বিকালে চট্টগ্রামের প্রবর্তকের ইসকনের শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে  বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট। সেখানে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ও সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিন্ময় কৃষ্ণ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সরলতা ও উদারতাকে পুঁজি করে সরকারের একটি অংশ, প্রশাসনের একটি অংশ সম্মিলিতভাবে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। ৫ আগস্টের পর প্রধান উপদেষ্টাও স্বীকার করেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছে। তা রোধ করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের একটি অংশ ৮ দফা দাবি ঝুলিয়ে রেখে, সরকারকে বিব্রত করছে। সনাতনীদের স্বাভাবিক প্রগতিশীল একটি আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য জঙ্গি থেকে শুরু করে হেন কোনো তকমা নাই যা বলা হয় নাই। একুশে টিভি নিয়মিত আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। সুপার এডিট করে এবং রাজনৈতিক তকমাও দিচ্ছে। আন্দোলনকে বিপথগামী ও বিব্রত করার জন্য প্রক্রিয়াশীল গোষ্ঠী তৎপর।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও সনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম করে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে এ দুটি সংগঠনসনাতনী সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের জন্য একটি প্লাটফর্মে আন্দোলন সংগ্রাম করবে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে ৮ দফার সঙ্গে সম্মতি জানালেও সনাতনীদের সর্ববৃহৎ গণজমায়েতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং বর্হিবিশ্বে সরকারের ভার্বমূতি ক্ষুন্ন করার অশুভ উদ্দেশ্যে জাতীয় পতাকার অবমাননার কথিত অভিযোগে জনৈক ফিরোজ খান নামের একজন থানায় মামলা করেন উল্লেখ করে চিন্ময় কৃষ্ণ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতীত কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা যায় না। বিশেষ মহল সরকারকে বিব্রত করার অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলা করে। সনাতনীদের আন্দোলনকে নসাৎ এবং নেতৃবৃন্দকে হয়রানি করতে মামলা হয়। মামলা প্রত্যাহারের জন্য সারাদেশের পাশাপাশি বিদেশেও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হয়েছে।
চিন্ময় দাশ ব্রহ্মচারী আরও বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দায়ের করা মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বিশ্বাস করি। কিন্তু মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত করতে প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও উসকানিমূলক কর্মকা-ে লিপ্ত রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৫ নভেম্বর হাজারি লেনের ওসমান নামে এক ব্যক্তি ইসকন ও আন্দোলনের মুখপাত্রকে নিয়ে মানহানিকর ও উসকানিমূলক পোস্ট শেয়ার করে। স্থানীয় সনাতনীরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানান। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার অভিযোগে গভীর রাতে হাজারি লেনে চর্তুদিক থেকে অবরুদ্ধ করে, ইন্টারনেট ও বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাংচুর করা হয়। সিসিক্যামেরা ভাংচুর ও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার মানুষের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, যা যেকোনো মানবিক মানুষ বিস্মিয় হবে। দুর্ভাগ্যজনক হল- মানহানিকর ও উসকানিমূলক পোস্টের ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই  মামলা করে। দুরভিসন্ধিমূলকভাবে এ ঘটনার সঙ্গে কোনো সর্ম্পক না থাকার পরও ষড়যন্ত্রমূলক রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলার অভিযুক্তদেরও আসামি করা হয়। সেদিন রাতে সনাতনীদের অমানুষিকভাবে পেটানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে অমানুষিক নির্যাতনের ফলে গুরুতর আহতদের নূন্যতম চিকিৎসাও দেওয়া হয়নি। এসব নিরীহ মানুষকে আইন কানুনের তোয়াক্কা না করে মধ্যরাতে আদালতে হাজির করা হয়। চিকিৎসা সেবা থেকে শুধু বঞ্চিত করা হয়নি, আইনজীবীদেরও সঙ্গেও কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
নিরীহ সনাতনীদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে জানিয়ে চিন্ময় কৃষ্ণ বলেন, উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে এখনও অনেক নিরীহ সনাতনীকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সাধুসন্তদের নামে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমরা কোনো অপরাধীর পক্ষে নই। হাজারি গলিতে সেদিন যদি দুষ্কৃতিকারী হামলা করে থাকে তাহলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাই। গভীর রাতে বিদ্যুত ও ইন্টারনেট বন্ধ করে, সিসি ক্যামেরা ভেঙ্গে ঘুমন্ত সনাতনীদের ওপর হামলায় আমরা উদ্বিগ্ন। শুধুমাত্র ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সনাতনীদের চলমান আন্দোলনকে নসাৎ করতে এ মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে নিরীহ সনাতনীদের হয়রানি করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে ভার্বমূতি ক্ষুন্ন করতে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী অপতৎপরতায় লিপ্ত।
চিন্ময় ব্রহ্মচারী বলেন, আমাদের আন্দোলন সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের চলমান আন্দোলন সনাতনীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বির্নিমানের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে ও দাবি বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২২ নভেম্বর রংপুরের বিভাগীয় সমাবেশ হবে। ১৫ দিনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিলাম, সরকারকে সহযোগিতা করতে। এখনও সহযোগিতা করার মনোভাব পোষন করি।  আগামী ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার দিন, ওই প্রক্রিয়াকে আমরা সমর্থন করি না। ওই দিনের পরিবর্তে ১৩ ডিসেম্বর খুলনার মহাসমাবেশ হবে। ২৯ নভেম্বর বরিশালে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেখানে মাহফিল রয়েছে, আমাদের তাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে সমাবেশ পিছিয়ে ২০ ডিসেম্বর করব।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’ অবিলম্বে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি ৬টি দাবি উত্থাপন করা হয়। হাজারি লেনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর কথিত হামলা ও সনাতনীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত, গ্রেপ্তারদের মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, গভীররাতে নিরীহ সনাতনীদের ওপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিউৎসাহী সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সনাতনী সংগঠকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক রাষ্ট্রদ্রোহীতা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়।
সনাতনীদের অস্তিত্ব রক্ষায় এসব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সনাতনী জাগরণ মঞ্চ রাষ্ট্রের কাছে ৮ দফা যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে। ঘোষিত ৮দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সনাতনী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে সাধুসন্তদের নেতৃত্বে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সারাদেশে সভা-সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছে। ২৫ অক্টোবর লালদীঘিতে সমাবেশ হয় জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানায়, সনাতনী সম্প্রদায়ের যৌক্তিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত সংগঠকদের হয়রানি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য কুচক্রী মহল মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। বাংলাদেশে অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে  ফিরোজ খানকে বহিষ্কার করেছে, এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।

নাহিদা

×