বিএনপি নেতা ও চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, নতুন বাংলাদেশের যে অভ্যুদয় হয়েছে এ ক্রেডিট এককভাবে কোনো ছাত্রের নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়। এ ক্রেডিট হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী গণতন্ত্রকামী সমস্ত দলের। এ দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল বিএনপির তারেক রহমান।
সোমবার নগরীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এসময় সভামঞ্চে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নগর বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ডা. শাহাদাত বলেন, গত ১৬ বছর বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের অসংখ্য নেতা গুম হত্যা মামলা হামলার শিকার হয়ে যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল পরবর্তীতে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে। আমরা মনে করি এ ক্রেডিট এককভাবে কোনো ছাত্রের নয়, কোনো গোষ্ঠীর নয়। এ ক্রেডিট হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী গণতন্ত্রকামী সমস্ত দলের। এ দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমান। কাজেই এটা ইতিহাস থেকে কখনো বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি আন্দোলনের প্রথম থেকে শেষদিন পর্যন্ত তারেক রহমানের বক্তব্য। এখানে বিকৃতি করার কিছুই নেই। আমরা বলতে চাই, আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে শোষণ, নির্যাতন, বৈষম্য থাকবে না। যেখানে থাকবে আইনের শাসন, কথা বলার স্বাধীনতা, মানুষের মৌলিক অধিকার, মানুষ যাতে খেতে পারে সেই অধিকার এবং সর্বোপরি ভোটের অধিকার। এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় লক্ষ্যে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব এবং দুর্নীতিমুক্ত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ করব।
শাহাদাত হোসেন বলেন, ৭১ থেকে ৭৫ পরবর্তী ইতিহাস এবং ৭ নভেম্বরের ইতিহাস এখনো জাতির কাছে পরিষ্কার নয়। ৭১ এর সঙ্গে চট্টগ্রাম ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ২৫ মার্চ কালরাতে অপারেশন সার্চলাইটে অর্তকিতভাবে পশ্চিমা হানাদার বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তখন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা মনে করেছিল, শেখ মুজিবুর রহমান কিছু বক্তব্য রাখবে ,মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে; কিন্তু সে রাত্রে উনাকে এবং আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে কোনো জায়গায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। উনি আত্মসমর্পণ করেছে। আর আওয়ামী লীগের নেতারা সব ভারতে পালিয়ে গেছে। যার কারণে তৎকালীন মেজর জিয়া বিপ্লব উদ্যানের পেছনে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রধান কর্ণেলকে হত্যা করে ঘোষণা দিয়েছিল ‘ আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করছি, আমরা বিদ্রোহ ঘোষণা করছি' । মূলত সেই রাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। পরদিন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমান ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার। আর আওয়ামী রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা যে কথা বলেছে সেটা হচ্ছে প্রোপাগাণ্ডা।
তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান চাইলে মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে নেতৃত্ব দেওয়ার পরে বাংলাদেশে প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। উনি উচ্চবিলাসী ছিলেন না বলে সেনাবাহিনীর মানুষ সেনাবাহিনীতে ফিরে গিয়েছিলেন। উনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চাননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে যে হত্যাকা- হয়েছে, আমরা মনে করি এটা অত্যন্ত অমানবিক। এ ধরনের হত্যকা- হওয়া উচিত নয়। কিন্তু সেই ১৫ আগস্টের পর কারা সেদিন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল? এটা জানা উচিত। সেদিন বাকশালের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয় এবং সেদিন শপথবাক্য পাঠ করেছিল এইচ টি ইমাম। ওই সময় সেনাপ্রধান ছিল আওয়ামী লীগের নেতা মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ। কাজেই ইতিহাস বলছে, শেখ মুজিবুর রহমান মারা যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতারা মন্ত্রীসভাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা স্থলাভিষক্ত হয়েছিল। বরং ওই সমগ্র অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমান যাননি। ১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর থেকে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। তখন আওয়ামী লীগ ঘরনার খালেদ মোশাররফ, শাফায়েত জামিল আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান ও আমাদের নেত্রীকে গৃহবন্দি করেছিল। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হল, অথচ আওয়ামী লীগ বলে জিয়াউর রহমান হত্যা করেছে। তাহলে ২ নভেম্বর যদি গৃহবন্দি হয় আমাদের নেতা, ৩ নভেম্বর হত্যা করল কারা চার নেতাকে?
বিএনপি নেতা ও নতুন চসিক মেয়র পেশাজীবীদের এ আলোচনা সভায় আরও বলেন, সত্যিকার এসব ইতিহাস উঠে আসা উচিত। ৭ নভেম্বর যদি জিয়াউর রহমানকে সিপাহী -জনতারা আনতে না পারত বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যখাতে প্রবাহিত হত। ৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার বলতে বিএনপি কখনো ১৫ আগস্টের কথা বলেনি। ৭ নভেম্বরকে উল্লেখ করে সবসময় ৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার বলে বিএনপি।
এমএম