বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহের নামে মেধাবী সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয় পরিকল্পিতভাবে। শেখ হাসিনার নিদের্শেই এটি করা হয়। গত ১৫ বছরে যত অন্যায় অত্যাচার জুলুম করা হয়েছে তা ছিল শেখ হাসিনার মদদেই। দলীয় নেতাকর্মীদের আইন হাতে তুলে না নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, বিগত দিনেও জামায়াত কোন অন্যায় করেনি যেমন তেমনি জামায়াত কোনো অন্যায় করবে না, অত্যাচার করবে না। মানুষের ক্ষতি করবে না। যেখানে অন্যায় দেখবেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেবেন।’
আজ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সকালে নীলফামারী জেলা জামায়াত ইসলামী আয়োজিত জেলা শহরের পৌরসভা মাঠে কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে সভায় কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। নীলফামারী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আন্তাজুল ইসলামের পরিচালনায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার বক্তব্য দেন।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন ‘শেখ হাসিনার নামে খুন, গুম ও হত্যা মামলা হয়েছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই। ন্যায্য বিচার চাই। শেখ হাসিনার সময় বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে, অন্যায় করা হয়েছে ফরমায়েশি রায় প্রদান করা হয়েছে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যে সমাজের উন্নয়নে নারীরা অবদান রাখবে। আপনারা মায়ের, বোনের মর্যাদায় রাখবেন। আপনার মেয়েকে মর্যাদায় রাখবেন। তারা যেন ইজ্জত রক্ষার পাশাপাশি নিরাপত্তার সঙ্গে তারা জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারে। তিনি বলেছেন, অনেকে অপপ্রচার করে বেড়ায় যে, এরা (জামায়াতে ইসলাম) ক্ষমতায় গেলে তোমাদের ঘর হতে বের হতে দিবে না। আর জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে কালো বোরকা পরাবে। এমনই মিথ্যাচার করা হয় আমাদের বিরুদ্ধে। আমরা কারও ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার রাখি না।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘দেশের এই উত্তরাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। জামায়াতে ইসলামী মনে করে, এই অঞ্চলের মানুষের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা কোনোদিনও উত্তরবঙ্গের মানুষের উন্নয়নকে উপেক্ষা করবো না, আমরা তাদের পাশে আছি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘গত ১৫ বছর জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর নির্মম অচ্যাচার নির্যাতন করা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়গুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। বাড়িতেও থাকতে পারেনি নেতাকর্মীরা। বাড়িতে বসলেও জঙ্গি হিসেবে আখ্যা দিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে। শুধু জামায়াত নয়, বিরোধী মতের সবার উপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। অন্যায়ের বিচার হতে হবে, না হলে অন্যায়কারীরা উৎসাহ পাবে অপরাধ কমবে না। শেখ হাসিনা যেমন ছিলেন তার উজির নাজিররাও একই রকমের ছিলেন। কে কত মিথ্যা বলতে পারবে সেই প্রতিযোগিতা ছিল গত ১৫বছরে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমির বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আগে রাষ্ট্র সংস্কার জরুরি। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চায় জামায়াতে ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারকে আমরা যৌক্তিক সময় দিতে চাই। এটা বছরের পর বছর যেমন নয়, আবার সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন হলেও তা সুষ্ঠু হবে না। এখন বিএনপি যে তাড়াহুড়ো করছে তা বলবো না, বরং বিএনপি আগের থেকে নির্বাচনের কথা বেশি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।’
শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে খুন, গুম ও হত্যা মামলা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যখনই চাইবে ভারতকে তখনই শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে হবে।’
এদিকে দীর্ঘ ১৪ বছর পর জামায়াতের প্রকাশ্যে কর্মীসভায় ঘিরে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত হয় নীলফামারী শহরে। অনুষ্ঠানস্থল ছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের ছিল উপচে পড়া ভিড়। সকাল ৯ টায় কর্মী সম্মেলন শুরু হলেও সকাল ৭ টার মধ্যে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় ভরে যায়।
নুসরাত