ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে জিয়ার মাজারে মির্জা ফখরুল

যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন হলে জাতির চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা সম্ভব

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৭ নভেম্বর ২০২৪

যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন হলে জাতির চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা সম্ভব

যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করেছে বিএনপি

যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করেছে বিএনপি। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। পরে সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে জাতির সামনে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার পটভূমি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ (৭ নভেম্বর) ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতা অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই আধিপত্যবাদ ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে এবং যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, তাদের পরাজিত করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে সামনে নিয়ে এসে নতুন এক রাজনীতির সূচনা করে। সেই রাজনীতি ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের রাজনীতি, সেই রাজনীতি ছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার রাজনীতি। সেই রাজনীতি ছিল বাংলাদেশের আধিপত্যবাদ ও গণতন্ত্রের শত্রুদের পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। 
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লবের পর জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পাওয়ার পর দেশের পুরো অবস্থা পরিবর্তন করলেন। তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এলেন, তিনি অর্থনীতিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পরিণত করেন এবং বাংলাদেশে একটা সম্ভাবনাময় অবস্থার সৃষ্টি করেন। জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের যে দর্শন সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘকাল তারা সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দল ক্ষমতায় গেছে তিনবার।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে অবশ্যই তারা অবদান রাখছে।  কারণ, ইতোমধ্যেই অনেকগুলো কাজ তারা  করেছে, আরও কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, তাদের যদি আমরা সবাই সহযোগিতা করি এবং একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তারা নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়, তা হলে এই জাতির সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে  দেশে দ্বিতীয়বারের মতো আধিপত্যবাদকে পরাজিত করা হয়। আজকে আমরা ৭ নভেম্বরের প্রধান নায়ক বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছি, তাঁর  প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আমরা আজকে শপথ নিয়েছি যে, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব সময়ই আধিপত্যবাদকে রুখে দেব, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখব এবং এর জন্য প্রয়োজনে আরও বেশি শক্তিশালী আন্দোলন করব। ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সুসংহত করতে দেশের সকল মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করছি। 
মির্জা ফখরুল বলেন, পতিত আওয়ামী লীগের সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করতে সব সময়ে ষড়যন্ত্র করেছে, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছে। এই আওয়ামী লীগ প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা  মামলা দিয়ে এবং সহাস্রাধিক মানুষকে গুম করে, হাজার হাজার লোককে হত্যা করে নির্যাতন করে তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, দলের কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ। 
দিবসটি পালন উপলক্ষে বুধবার বিকেলে  রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন। এছাড়া মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতারাও বক্তব্য রাখেন। বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতাকর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাতে অংশ নেন।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ভোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের সকল কার্যালযে দলীয় পতাকা উত্তালন করা হয়। প্রকাশ করা হয় জিয়াউর রহমান ছবি সংবলিত পোস্টার। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় ক্রোড়পত্র। বিকেল চারটায় এফডিসির সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাসের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

×