ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

আলোচনা সভায় মির্জা আব্বাস

যারা ২য় স্বাধীনতার কথা বলছে তারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ৫ নভেম্বর ২০২৪

যারা ২য় স্বাধীনতার কথা বলছে তারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে

মির্জা আব্বাস

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, এখন দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে কী বোঝাতে চান আপনারা? আমার কাছে এর ব্যাখ্যা হচ্ছে- আপনারা কি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করতে চান? মনে রাখতে হবে, বাবার আগে ছেলে হাঁটলে সেই দেশ-জাতি শেষ হয়ে যায়। তিনি বলেন, যারা গণঅভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলছে তারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে। 
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযোদ্ধা মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সাবুর ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম পরিষদ ও প্রজন্ম একাডেমির যৌথ আয়োজনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। 
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, নির্বাচন কবে হবে জাতি জানতে চায়। দেশের পরিস্থিতি একটু ঘোলাটে। আমার ধারণা, এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে যাচ্ছে। তাই কোনো রকম ছলচাতুরি করার প্রয়োজন নাই, সুস্পষ্ট করে জানান নির্বাচন কবে দিতে চান? আমরা বিশ্বাস করতে চাই, এই সরকার জাতিকে আশার আলো দেখাবে। মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকারের সময়ের মতো যেন না হয়। 
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, এমনকিছু করবেন না যাতে আপনার প্রতি জাতি আস্থা ও বিশ্বাস হারায়। তিনি বলেন, সরকার সংস্কারের কথা বললেও এর কোনো লাইন দেখছি না। 
বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে সরকারের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আমরা যদি বলি আপনারা নির্বাচনের কথা না বলে ক্ষমতায় থাকার জন্য পাগল হয়ে গেছেন। জাতিকে একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে দেবেন, আর জাতি বসে বসে তামাশা দেখবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের নেতা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘জাতিকে বিভক্ত রেখে কোনো উন্নয়ন হয় না’। আমরাও বলছি, ‘জাতিকে বিভক্ত করে দেশে উন্নয়ন সম্ভব নয়’। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র কাঠামোর কি কি সংস্কার করতে চায় এবং সেটা করতে কতদিন লাগবে? তা স্পষ্ট করে অবিলম্বে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে বলে আমরা আশা করি। 
মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের বিনা ভোটের সরকারকে মানেনি, এখন অন্তর্বর্তী সরকারকেও দীর্ঘদিন মানবে না। জাতিকে অন্ধকারে রেখে সরকার যা খুশি তাই করবে, দেশের জনগণ সেটা মেনে নিতে পারবে না। 
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, আপনারা নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলছেন না কেন ? আমরা নির্বাচনের কথা বললেই আপনারা বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে পড়েছি। আপনারা জাতিকে ধোঁয়াশায় রাখবেন আর তারা তামাশা দেখবে কিংবা মেনে নেবে এমনটা ভাবার অবকাশ নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, তিন মাস হলো অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার হয়নি। অথচ আপনারা একটা অর্ডিন্যান্স জারি করে ২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যত মামলা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। 
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশে বর্তমানে একটা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকার বেশি সময় থাকবে, না যথাসময়ে দায়িত্ব পালন করে চলে যাবে আমরা তা বুঝতে পারছি না। এই সরকার আমাদের সহযোগিতা চান কিনা, সেটাও বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, এই সরকার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল, তাদের রক্তের ফসল। এই সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা, তারা নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সরকার এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে, ইতিহাসে তারা উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।
মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম কলিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, এনডিপির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, প্রয়াত মেজবাহ উদ্দিন সাবুর সহধর্মিণী হোসনে আরা বেগম রিনা, প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি কালাম ফয়েজি প্রমুখ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীন।
ষড়যন্ত্র করে গণঐক্য নষ্ট করা যাবে না- জাহিদ ॥ ষড়যন্ত্র করে গণঐক্য নষ্ট করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। ৮ নভেম্বর বিএনপির র‌্যালি সফল করতে মঙ্গলবার বিকেলে শৃঙ্খলা উপ-কমিটির সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। 
ডা. জাহিদ বলেন, ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক দিন। দিবসটির এবারের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই ৭ নভেম্বর উপলক্ষে অন্যান্য কর্মসূচির পাশাপাশি বিএনপি এবার ৮ নভেম্বর রাজধানীসহ সারাদেশে র‌্যালি কর্মসূচি পালন করবে। এ কর্মসূচিতে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশের জনগণও অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করছি।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ-সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুক শাফিন, হায়দার আলী লেলিন, একরামুজ্জামান বিপ্লব, আকরামুল হাসান, হাবিবুর রশিদ হাবিব, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, আব্দুল সাত্তার পাটোয়ারী, রাশেদ আহমেদ প্রমুখ।
গণতন্ত্র নস্যাৎ হয় এমন সংস্কার করা যাবে না – ফারুক ॥ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, এমন সংস্কারে হাত দিয়েন না যে সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত ও গণতন্ত্র নস্যাৎ হয়। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম’ আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফারুক বলেন, আমাদের দাবি স্পষ্ট আমরা নির্বাচন চাই। ১৬ বছর আওয়ামী লীগ দেশ শাসন করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, কত মায়ের বুক খালি করেছে, আয়নাঘর তৈরি করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দোসররা মন্ত্রণালয়সহ নানা জায়গায় এখনো কাজ করছে। তাদের কেন পদায়ন করে রাখা হয়েছে ?
ফারুক বলেন, আওয়ামী লীগ অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তাদের এ সুযোগ দেওয়া যাবে না। অবিলম্বে তাদের দোসরদের পদায়ন বাতিল ও অপসারণ করতে হবে। আমরা ১৬ বছর আওয়ামী লীগের অত্যাচার সহ্য করেছি। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। 
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাওলানা নেসারুল হক, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

×