বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি ৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ঘোষণা এবং ওই দিন সরকারি ছুটি পুনর্বহালের দাবি জানান।
ফখরুল বলেন, দেশের মানুষের জন্য ৭ নভেম্বর গুরুত্বপূর্ণ দিন। বর্তমান প্রজন্মকে এ দিনের ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই ব্যাপকভাবে এই দিনের ইতিহাস ও গুরুত্ব ছড়িয়ে দিতে বিএনপি ১০ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
ফখরুল বলেন, পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বরের গুরুত্বকে তুলে নিয়ে আসার জন্য আমরা এবার এ দিবসটি ব্যাপকভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১০ দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ৭ তারিখ আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করব। ৮ অক্টোবর বিকেল ৩টায় রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালি করব। ৭ তারিখ বৃহস্পতিবার রাস্তাঘাটে যানজট যাতে না হয় সেজন্য সেদিন র্যালি না করে ৮ তারিখ করব। এ ছাড়া সকল বিভাগীয় শহরগুলোতে র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি মহাসচিব জানান, ১০ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৬ নভেম্বর ঢাকায় বুদ্ধিজীবীদের সমন্বয়ে আলোচনা সভা, ৭ নভেম্বর সকাল ৬টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সোরাদশের সব জেলা কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, বেলা ১১টায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে পুস্পমাল্য অর্পণ এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
এ ছাড়া বিএনপির সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন দিন আলাদাভাবে আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া ৭ নভেম্বর উপলক্ষে ডকুমেন্টারি (ভিডিও, স্থিরচিত্র) ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং ফেসবুক, ইউটিউব ও অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। পোস্টার এবং ক্রোড়পত্রও প্রকাশ করা হবে।
ফখরুল বলেন, একটি সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন হয়, মুক্ত অর্থনীতি ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৭ নভেম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনে বাংলাদেশ আধিপত্যবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছিল। তাই এই দিনটিকে নতুন প্রজন্মের সামনে নিয়ে আসতে হবে। এ
সময় বিএনপি মহাসচিব অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ঘোষণার দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিএনপির যৌথ সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যৌথ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রীতা, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, দলের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মীর সরাফত আলী সপু, এম এ মালেক, আমিনুল হক, মাহবুবুল হক নান্নু, সেলিমুজ্জামান সেলিম, জয়ন্ত কুমার কুন্ড, হারুনুর রশীদ, হুমায়ুন কবির খান, মোস্তাক মিয়া,ওয়ারেস আলী মামুন, ওবায়দুর রহমান চন্দন, নজরুল ইসলাম আজাদ, বেনজীর আহমেদ টিটো, এস এম জাহাঙ্গীর, খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী, মুনির হোসেন, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না, ৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফখরুল ইসলাম রবিন, শ্রমিক দলের নেতা মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু, জাসাসের নেতা হেলাল খান, তাঁতী দলের নেতা আবুল কালাম আজাদ, ছাত্র দলের নেতা রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ।
এর আগে সকালে ৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস ঘোষণা এবং ওইদিনের সরকারি ছুটি পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকও দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র রক্ষায় অবিলম্বে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন যাচ্ছেন বিএনপির ৪ নেতা ॥ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে ওই দেশ সফরে যাচ্ছেন বিএনপির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও কৃষকদলের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা হাবিবা। ৭ নভেম্বর এই চার নেতা চীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে জানা যায়।
আওয়ামী লীগ আর মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না-নিতাই রায় চৌধুরী ॥ আওয়ামী লীগ আর মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র রুখে দাও’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট।
নিতাই রায় চৌধুরী আওয়ামী লীগকে পলাতক শক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তারা আর ফিরে আসতে পারবে না। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এরা হলো পলাতক শক্তি। এই দুর্নীতিবাজ, লুটেরারা আর মেরুদ- সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। তাই এরা আর ফিরে আসতে পারবে না।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বিজন কান্তি সরকারের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব এস এন তরুন দের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আব্দুল হাই শিকদার, সাংবাদিক নেতা আমিরুল ইসলাম কাগজী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের উপদেষ্টা অমলেন্দু দাস অপু, তপন চন্দ্র মজুমদার, ভাইস-চেয়ারম্যান রমেশ দত্ত প্রমুখ।