প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত ‘স্বৈরশাসক’ শেখ হাসিনার দলের মধ্যে ‘ফ্যাসিবাদের সমস্ত বৈশিষ্ট্য’ দৃশ্যমান এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন আর আওয়ামী লীগের ‘কোনো স্থান নেই’।
সরকার প্রধানের ওই সাক্ষাৎকার বুধবার প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
পত্রিকাটি লিখেছে, বাংলাদেশের ‘প্রাচীনতম ও বৃহত্তম’ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস।
গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর ৮৪ বছর বয়সী ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।
আন্দোলন দমানোর চেষ্টায় ‘গণহত্যার’ অভিযোগে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, তার সরকার ট্রাইব্যুনালের রায়ের আগে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর কথা ভারত সরকারকে বলবে না।
এ বিষয়টিকে বড় প্রতিবেশীর সঙ্গে বাংলাদেশের ‘কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়ানোর চেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে।
সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে তার (শেখ হাসিনা) কোনো জায়গা নাই, এটা নিশ্চিত। আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা বাংলাদেশে নাই।
তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা রাজনৈতিক কাঠামোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা নিজেদের স্বার্থে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।
আওয়ামী লীগের গত ১৫ বছরের শাসনামলে গত কয়েকটি নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণের অভিযোগ করে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তার দলকে সাময়িকভাবে রাজনীতি থেকে বিরত রাখা, সংস্কার করা, কিংবা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা উচিত কিনা, সে বিতর্কও বাংলাদেশে এখন হচ্ছে।
ইউনূসের ধারণা, বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগে ভাঙন দেখা দিতে পারে। তবে তিনি এটাও জোর দিয়ে বলেছেন, তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, কারণ এটা কোনো রাজনৈতিক সরকার নয়।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের জিজ্ঞাসায় তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ আগামীতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, সে সিদ্ধান্ত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে’।
পত্রিকাটি লিখেছে, ভারতে শেখ হাসিনা কোথায় অবস্থান করছেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, তাদের দল ‘যে কোনো সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত’।
শেখ হাসিনার আমলে ইউনূসের বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয়েছিল, সে কথাও পত্রিকাটি লিখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের দুই শিক্ষার্থী প্রতিনিধি এখন নতুন নির্বাচনের ভিত্তি তৈরি করছেন। পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের জন্য দশটি কমিশন করা হয়েছে।
ইউনূস বলেছেন, রাজনীতিতে যোগদান বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা তার নেই; নির্বাচনের কোনো সম্ভাব্য সময়সূচিও তিনি দেননি।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হলো বিষয়গুলো মীমাংসা করা এবং সংস্কারের কাজ শেষ করা। নির্বাচনের প্রস্তুতি যখন শেষ হবে, তখন আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করব।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে অস্বস্তি বিরাজ করছে।
ইউনূস বলেছেন, তার সরকার শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতকে অনুরোধ করতে পারে, তবে সেটা ট্রাইব্যুনালের বিচার শেষ হওয়ার পর।
তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। ...যখন রায় আসবে, ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে আমরা তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। রায় হওয়ার আগে আমাদের এটা করার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ গত আগস্টে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন, আন্দোলন দমনে সহিংসতার যে অভিযোগ তার মায়ের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা ‘মিথ্যা’। তার মা আদালতের মুখোমুখি হতে ‘প্রস্তুত’, কারণ তিনি ‘বেআইনি কিছু করেননি’।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস লিখেছে, সরকার পতনের পর হিন্দুদের ওপর সহিংসতা আর হতাহতের ‘অল্প কিছু ঘটনার’ কথা ইউনূস স্বীকার করেছেন। তবে তিনি বলেছেন সেসব ঘটনার সঙ্গে ধর্মের কোনো যোগ নেই, তারা আক্রান্ত হয়েছে ‘আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার’ কারণে।
সাক্ষাৎকারে ইউনূস বলেছেন, ভারতের সাম্প্রতিক ‘অসহযোগিতা’ তার সরকারকে বিপাকে ফেলেছে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি বাংলাদেশ সফর করেন, তিনি স্বাগত জানাবেন।
আমরা এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে আমরা প্রতিবেশী, একে অপরকে আমাদের প্রয়োজন। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক থাকতে পারে, আমাদের মধ্যে সেই সর্বোত্তম সম্পর্ক থাকতে হবে।