ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ কার্তিক ১৪৩১

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের গণগ্রেপ্তার সমর্থন করি না: সার্জিস

প্রকাশিত: ২০:৪১, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের গণগ্রেপ্তার সমর্থন করি না: সার্জিস

সমন্বয়ক সারজিস আলম

এবার নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের গণগ্রেপ্তার তিনি কখনই সমর্থন করেন না। 

সোমবার রাতে এ নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন সারজিস। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘একটা বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করতে চাই।

বিষয়টা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ৷ যেহেতু অন্য ক্ষেত্র নিয়ে আমার ক্লিয়ার আইডিয়া নেই তাই সেসব রিলেট না করার জন্য আহ্বান  করছি ৷ ১ জুলাই এর পূর্বে এবং তারপর ১ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আন্দোলন চলমান ছিল সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল ৷ এই আন্দোলন মেইনলি ১৫ তারিখ পর্যন্ত হলের ছেলে মেয়েরাই নিয়ে গেছে।’

তিনি লিখেছেন, ‘যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সম্পর্কে ধারণা রাখেন তারা খুব ভালো করে জানেন, এখানে হলে থাকতে হলে অবশ্যই ছাত্রলীগ করতে হতো। তাদের প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হতো। গণরুমে থাকতে হতো ৷ সেজন্য হলে যারা থাকতো তাদের অধিকাংশ একপ্রকার বাধ্য হয়েই এসব করতো।

 এবার আরেক প্রসঙ্গে আসি। হলের যে ছাত্রলীগের কমিটি হতো এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী কমিটিতে থাকতো কিছু কারণে-যেমন : ১.ভালো একটা রুম বা সিট যেন পাওয়া যায়; ২.যেন চাকরি হওয়া পর্যন্ত হলে থাকা যায়; ৩. অন্যরা যেন তার উপর অন্যায় না করে বা ট্যাগ না দেয় ৷ বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অনেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করতো, অনেকে ভিন্ন মতের লোকদের ওপর অত্যাচার করতো, অনেকে ক্যান্ডিডেট হতো, অনেকে একটু ফাপর নিয়ে চলতো।’

 

তিনি আরো লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক এই প্রথম ধাপের ১৬-১৭ দিনের আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ওই ৮০ শতাংশ স্টুডেন্ট ৷ তারা যেমন পোস্টেড ছিল, তেমনি হলের তুলনামূলক ক্লিন ইমেজ প্রভাব রাখা ফেইস ছিল ৷ তারা হল থেকে ব্যানার নিয়ে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে নেমেছিল বলেই আদার্স নন-পোস্টেড সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সাথে বের হয়ে আসতে পেরেছিল এবং একারণেই ক্যান্ডিডেটরা হল থেকে প্রোগ্রাম নিয়ে আন্দোলনে আসা আটকাতে পারেনি। এই পোস্টেড ছেলেরা হল থেকে এক হয়ে বের না হলে নন-পোস্টেডরাও এক হয়ে বের হওয়ার সাহস করতো না।

ওই গার্টস আর বোল্ডনেস এই ছেলেগুলাই শো করতে পারে ৷ হলের পার্সপেক্টিভে সত্য এটাই যে, এই পোস্টেড তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের হলের ছেলেরা আন্দোলনে এসেছিলো বলেই ১জুলাই থেকে ১৫ জুলাই সম্ভব হয়েছিলো এবং আন্দোলনটাকে অন্য কোনো দলের বা সরকারবিরোধী ট্যাগ দেওয়া যায়নি। ১৫জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনে না আসলে ৫ আগস্ট কখনো হতো কিনা সে বিষয়ে ঢের সন্দেহ আছে।’

সারজিস লিখেছেন, ‘এখন প্রশ্ন হচ্ছে হলের এই পোস্টেড ছেলেগুলোকে আমি ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে নিষিদ্ধের কাতারে ফেলবো কিনা। উত্তর -ফেলবো না। যারা ১জুলাই থেকে আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে রাজপথে ন্যায়ের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে তারা তাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

সত্য এটাই যে, এই আন্দোলন সফল না হলে এই ছেলেগুলোকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হতো। বিশ্বাসঘাতক ট্যাগ দেওয়া হতো।’

‘যে সিস্টেমের কারণে তাদেরকে বাধ্যতামূলক ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হয়েছে, পোস্ট নিতে হয়েছে; সেই সিস্টেমের জন্য দায়ী হলে আপনাদের  সবাইকে দায়ী হতে হবে। কারণ আপনারা চুপ ছিলেন। হলে, ক্যাম্পাসে দিনের পর দিন ওদের সাথে হওয়া অন্যায়ে কেউ বাঁধা দেননি ৷ ওরা যদি সেইফটি অ্যান্ড সিকিউরিটির জন্য পোস্ট নেয় তবে আপনিও নিজের গা বাঁচাতে চুপ ছিলেন। বরং যখনই সুযোগ হয়েছে ওরা সাহস করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে। আর তখনো আপনি নিরব দর্শক হয়ে অনেক কিছু শুধু দেখে গেছেন।’

 

শিহাব উদ্দিন

×