ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

আন্দোলনে শহীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে রিজভী

অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ সন্দেহের চোখে দেখছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ সন্দেহের চোখে দেখছে

রুহুল কবির রিজভী

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণে গড়িমসি করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ সন্দেহের চোখে দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মুখপাত্র ও  সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বুধবার দুপুরে রাজধানীর ডেমরায় আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সঙ্গে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সরকারকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, আপনারা সংস্কার করুন। কিন্তু নির্বাচনের তারিখ বলতে আপনাদের এত সংশয় হচ্ছে কেন? গণতন্ত্র মানে তো যা কিছু হবে, জনগণের কাছে সেটা স্পষ্ট করে বলতে হবে। আপনারা সংস্কারের জন্য কমিশন করলেন। কিন্তু কমিশন কতদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে, কতদিনের মধ্যে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তা জানানো হচ্ছে না। ১৫ বছর  দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। স্পষ্টতা এবং পথরেখা এই দুটি হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত। কিন্তু আপনারা নির্বাচনের সময়সীমা বলতে গড়িমসি করছেন। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে তারা কোন দলকে ভোট দেবে, কাদের নির্বাচন করবে এবং কে সরকার গঠন করবে। 

রিজভী বলেন, আপনারা অনেক জিনিসের শুল্ক কমিয়েছেন, কিন্তু বাজারে তার কোনো ইফেক্ট (প্রভাব) নেই। চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ এগুলোর কিন্তু দাম কমেনি। এর জন্য দায়ী বাজার সিন্ডিকেট। এই আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটবাজদের  গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন, তা না হলে গণতন্ত্রের যে চেতনা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের যে চেতনা এবং আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
রিজভী বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মানিত মানুষ। বাংলাদেশের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্মান নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তাকে সর্বাগ্রে দেখতে হবে মানুষ কোনটাতে বাঁচে, কোনটাতে স্বস্তি পায়। নি¤œআয়ের মানুষ যেন ঠিকমতো খেতে পারে তার জন্য সবার আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে ভোট ছিল এমন- ভোটের দিন ভোট হবে, আওয়ামী লীগের লোকজন লাইনে দাঁড়াবে, সকাল আটটায় যাদের লাইনে দেখা গেছে, দুপুরে এবং বিকেলেও তাদের দেখা গেছে। এভাবে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের বাগানে তৈরি করা নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিত, আওয়ামী লীগ এতগুলো সিটে জয়লাভ করেছে এবং তার তল্পিবাহক অপর দলগুলো এতগুলো সিটে জয়লাভ করেছে।
রিজভী বলেন, দেশে এক অদ্ভুত পার্লামেন্ট ছিল। একদিকে আওয়ামী লীগ সরকারি দল, অন্যদিকে তাদেরই অনুগত বিরোধী দল। কোথায় নির্বাচন, কোথায় জনগণের সমর্থন, তার কোনো বালাই ছিল না। আওয়ামী লীগের আর  দেশে স্থান হবে না। ওই হরিলুটের রাজত্ব আবার কায়েম করার স্বপ্ন আর কখনো পূরণ হবে না।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা তার ক্ষমতাকে নিরাপদ রাখতে এমন কোনো পদ্ধতি নেই যা তিনি অবলম্বন করেননি। প্রকৃত অপরাধীদের তিনি বিচারের আওতায় আনেননি। তার অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছেন, তাদের ধরে নিয়ে কারাগারে পুরেছেন। এভাবে তিনি গদি রক্ষা করেছেন। কিন্তু যখন দেখলেন এভাবেও গদি রক্ষা হচ্ছে না তখন ধরে ধরে হত্যা, গুম ও ক্রসফায়ার দেওয়া শুরু হলো। যার চরম বহির্প্রকাশ ঘটে জুলাই -আগস্ট মাসে।
রিজভী বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষ যাতে ঠিকমতো খেতে পারে সেটার জন্য সবার আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করুন।
এ সময় রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবারের উপদেষ্টা প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন মিথুন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভির আহমেদ রবিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষার, যুবদল নেতা জাকির হোসেন প্রমুখ।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে বিদায় করা জরুরি-দুদু ॥ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে বিদায় করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ‘জিয়াউর রহমান সমাজ কল্যাণ পরিষদ’ আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুদু বলেন, যদি রাষ্ট্রপতিকে বিদায় না করা হয় তা হলে কীভাবে বিদায় করতে হয় তা আমাদের জানা আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র করছে পার্শ্ববর্তী দেশ এবং শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়,  দেশের কিছু কুলাঙ্গার আছে যারা বাংলাদেশকে অন্য দেশের হাতে তুলে দিতে চায়। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাইনুল ইসলাম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, কৃষক দল নেতা এস কে সাদী, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি কেএম রফিকুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।
ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে- শিমুল বিশ্বাস ॥ ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী আইনজীবী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি বলেন,  দেশে সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিরতা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা ৫ আগস্ট সফলতা এনেছে। ফ্যাসিবাদের দোসররা সেই সফলতা নস্যাৎ করতে চক্রান্ত করছে। দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চলছে।

এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। বুধবার দুপুরে ‘প্রচার দল’ আয়োজিত ডেঙ্গু সচেতনতায় ফার্মগেট খামারবাড়ি মোড় থেকে শুরু করে তেজগাঁও কলেজ পর্যন্ত র‌্যালি, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রচার দলের সভাপতি মাহফুজ কবির মুক্তার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ডা. আউয়াল, প্রচার দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ওয়াকিদুজ্জামান ডাবলু, দপ্তর সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. রুহুল আমিন, সহ-অর্থ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

×